whatsapp channel

কেন পৃথিবীকে বিদায় জানালেন ঋতুপর্ণ?

2013 সালের 30 শে মে। সকাল হতেই সমগ্র কলকাতায় দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল এক দুঃসংবাদ। প্রতিবেদককে ফোন করে তার বন্ধু বললেন, “একবার টিভি-টা অন কর, এক্ষুণি"। প্রতিবেদক সেদিন বুঝতে পারেননি,…

Avatar

HoopHaap Digital Media

Advertisements
Advertisements

2013 সালের 30 শে মে। সকাল হতেই সমগ্র কলকাতায় দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল এক দুঃসংবাদ। প্রতিবেদককে ফোন করে তার বন্ধু বললেন, “একবার টিভি-টা অন কর, এক্ষুণি”। প্রতিবেদক সেদিন বুঝতে পারেননি, টিভি খুলে দেখবেন, তাঁর প্রিয় পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ (Rituparno ghosh) আর নেই। নামী একটি সংবাদমাধ্যমের এক্সক্লুসিভ রিপোর্টে অবিশ্বাস্য কয়েকটি লাইন ‘ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রয়াত’। চকিতে মনে পড়ে গিয়েছিল ঋতুপর্ণকে নিয়ে অনেক কথা। ফ্যান না অনুসরকারিণী, প্রতিবেদক কি বলবেন নিজেকে, জানেন না। কিন্তু আজ তুলে ধরা যাক ঋতুপর্ণর জীবনের কিছু অজানা কথা যা প্রতিবেদক জেনেছিলেন নিতান্তই ব্যক্তিগত ইচ্ছায়।

Advertisements

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতকোত্তর হয়ে ঋতুপর্ণ রেসপন্স ইন্ডিয়া অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সিতে কপিরাইটার হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। বোরোলিন, ফ্রুটি সহ একাধিক অ্যাড ক‍্যাম্পেনের ট‍্যাগলাইন লেখা ঋতুপর্ণ চেয়েছিলেন স্বাধীনভাবে কিছু করার। অথচ তাঁর চারপাশে তাঁর সেক্সুয়ালিটি নিয়ে অপমান করার লোক কম ছিল না। 1992 সালে ঋতুপর্ণ বানালেন তাঁর প্রথম ফিল্ম ‘হীরের আংটি’। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (shirshendu mukhopadhyay)-এর গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘হীরের আংটি’-তে অভিনয় করেছিলেন মুনমুন সেন (munmun sen), বসন্ত চৌধুরী (basanta chowdhury) প্রমুখ। সেই ফিল্ম দেখে তখনও কেউ ভাবতে পারেননি যিনি ‘হীরের আংটি’ বানিয়েছেন, তিনি নিজে একজন ‘কোহিনূর’।

Advertisements

1994 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিল্ম ‘উনিশে এপ্রিল’ বদলে দিল সমস্ত হিসেব। মা ও মেয়ের সম্পর্কের সূক্ষ্ম দিক নিয়ে নির্মিত এই ফিল্ম 1995 সালে দুটি ন‍্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল। সেই ছিল ‘ঋতুপর্ণ’ হয়ে ওঠার শুরু। একটার পর একটা ফিল্ম বানিয়ে গেছেন ঋতুপর্ণ। তাঁর প্রত্যেকটি ফিল্ম হয়ে উঠেছে আইকনিক, পেয়েছে ন‍্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড। তবুও ব্যক্তি ঋতুপর্ণ ছিলেন অহংকার বিহীন একটি মানুষ। তাঁর কাছে শিল্পই শিল্পীর পরিচয়। তাই ‘গানের ওপারে’-র শুটিংয়ের সময় একটি নতুন মেয়েকে অভিনয় শেখাতে গিয়ে অবলীলায় ‘ম্যাডাম’ বলে সম্মান দিতে পেরেছিলেন ঋতুপর্ণ।

Advertisements

এত প্রতিভা, এত পুরস্কার, তবু ঋতুপর্ণর সেক্সুয়ালিটি নিয়ে ট্রোল করতে ছাড়েননি কিছু মানুষ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কয়েকজন সেলিব্রিটিও। নিজেকে পূর্ণ রূপে নারীসত্ত্বা দিতে তিনি হরমোন ট্রিটমেন্ট শুরু করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর ডাক্তার রাজীব শীল জানিয়েছিলেন, অ্যাবডোমিনোপ্লাস্টি এবং ব্রেস্ট ইমপ্ল‍্যান্ট অপারেশনের পর ঋতুপর্ণর শরীরে হরমোনাল ইমব‍্যালেন্স দেখা দিয়েছিল। উপরন্তু টাইপ টু ডায়াবেটিসের পেশেন্ট ঋতুপর্ণ পাঁচ বছর ধরে প‍্যানক্রিয়াটাইটিসে ভুগছিলেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ইনসমনিয়া। ফলে নিয়মিত ওষুধ খেতে হত ঋতুপর্ণকে। তাঁর পরিচারক দিলীপ (Dilip) এবং বিষ্ণু (vishnu) জানিয়েছেন, ইদানিং ঋতুপর্ণ সঠিক খাবার খেতে চাইতেন না। একসময় মায়ের হাতের শুক্তো ছাড়া দুর্গাপুজো অসম্পূর্ণ মনে করা ঋতুপর্ণর পাতে অধিকাংশ দিন থাকত অল্প ভাত, মুসুর ডাল, আলুসেদ্ধ। 29 শে মে, একটি অভিজাত চাইনিজ রেস্তোরাঁ থেকে ঋতুপর্ণ হাল্কা স‍্যুপ অর্ডার করে বাড়িতে আনিয়ে খেয়েছিলেন। 30 শে মে সকাল থেকেই ঋতুপর্ণ ঘরের দরজা না খোলায় দিলীপ ও বিষ্ণু অনেকবার ডাকাডাকি করেন। কিন্তু সাড়া না পেয়ে কোনোক্রমে দরজা ভেঙে ঢুকে তাঁরা দেখতে পান ঘরে দুটি এসি চলছে। হিমশীতল সেই ঘরে চিরশয‍্যায় শায়িত রয়েছেন ঋতুপর্ণ। এরপর তড়িঘড়ি তাঁরা অভিনেতা যীশু সেনগুপ্ত (jissu u sengupta)-কে তাঁরা খবর দেন। যীশুর স্ত্রী নীলাঞ্জনা (Nilanjana sengupta) খবর দেন ডঃ নিরূপ মিত্র (nirup mitra)-কে। ডঃ নিরূপ মিত্র এসে ঋতুপর্ণকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করেন। মাত্র 49 বছর বয়সে ঘুমের মধ্যেই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে পৃথিবীকে চিরবিদায় জানিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। ‘তাসের দেশ’ ছেড়ে এভাবে যেতে হত না তাঁকে যদি ঋতুপর্ণর সেক্সুয়ালিটি নিয়ে সবাই কটাক্ষ না করতেন, যদি সবাই তাঁকে নিজের মতো থাকতে দিতেন! তাহলে তিনি ইনসিকিওর বোধ করে হরমোন ট্রিটমেন্ট করাতেন না। টাইপ টু ডায়াবেটিসের পেশেন্ট ঋতুপর্ণ হয়তো কখনওই করাতেন না ব্রেস্ট ইমপ্ল‍্যান্ট। হত না তাঁর হরমোনাল ইমব‍্যালেন্স। এভাবে চলে যেতেন না ঋতুপর্ণ। তবু তিনি চলে যেতে যেতেও হয়তো বার্তা দিয়ে গেলেন, ট্রান্সজেন্ডাররাও মানুষ। তাঁদের একটু নিজের মতো থাকতে দেওয়া উচিত। সেক্সুয়ালিটি নিয়ে কটাক্ষ না করে তাঁদের পাশে থাকা উচিত। তাঁরাও মানুষ। তাঁরাও এই সমাজের অঙ্গ। এখনও যদি সমাজ তার মনোভাব না পাল্টায়, তাহলে হয়তো এরকম অনেক ঋতুপর্ণ নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাবেন। এভাবেই হয়তো কত ঋতুপর্ণ শেষ হয়ে যাবেন!

Advertisements
whatsapp logo
Advertisements
Avatar
HoopHaap Digital Media