Hoop SpecialHoop Story

Sandhya-Mamata: গান শুনতে চেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মমতার মন্তব্য সত্যি নাকি মিথ্যা! হলো পর্দাফাঁস

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee)-র সুরলোকে গমন করার পর কেটে গিয়েছে একটি সপ্তাহ। কখনও ব্যক্তিগত জীবনকে জনসমক্ষে না নিয়ে আসা মানুষটিকে নিয়ে এখনও অবধি অনেকেই স্মৃতিচারণ করছেন। মিডিয়াও সমানভাবে সক্রিয় তাঁর জীবন তুলে ধরতে। সন্ধ্যা আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন সুরসাধিকা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)-ও তা এককথায় স্বীকার করেছেন। সন্ধ্যার মৃত্যুতে ভারাক্রান্ত মমতা জানিয়েছিলেন, তাঁর অগ্রজাকে হারিয়েছেন তিনি। গত কয়েক মাস ধরে সন্ধ্যার শারীরিক পরিস্থিতির খেয়াল রাখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলতঃ তাঁর উদ্যোগেই সন্ধ্যার দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও মমতার বলা একটি কথা নিমেষে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়।

সন্ধ্যার মৃত্যুর পর সাংবাদিকদের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মমতা বলেছিলেন, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় নিজে এত ভালো গান করতেন। অথচ তাঁকে বলতেন, একটা গান শোনাতে। মমতা তাঁকে বলতেন, সন্ধ্যা নিজে একজন সঙ্গীত বিশারদ হয়ে তাঁকে কিনা গান গাইতে বলছেন! কিন্তু সন্ধ্যা নাছোড়বান্দা। ফলে গান গেয়ে শোনাতেই হত মমতাকে। এরপর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ট্রোলিং শুরু হয়। মজাদার মিমে ভরে যায় সাইবার দুনিয়া। কারণ মমতাকে সন্ধ্যার মতো গায়িকা গান গাইতে বলবেন, এই কথা অনেকেই বিশ্বাস করেননি। এবার তার প্রমাণ দিলেন সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায় (Sudipta Banerjee)।

সম্প্রতি সন্ধ্যার আত্মজীবনীর একটি অংশ সুদীপ্তা শেয়ার করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে সন্ধ্যা লিখেছেন, মমতা একবার তাঁকে ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটি গেয়ে অবাক করে দিয়েছিলেন। মমতার সুরেলা গলার পাশাপাশি তাঁর সঙ্গীত রচনার প্রশংসা করেছেন সন্ধ্যা। তাঁর জন্মদিনে মমতা ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন, সেকথাও লিখেছেন। এমনকি সন্ধ্যার পছন্দের গান তাঁর বাড়ি এসে শোনাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন মমতা। সন্ধ্যা তাঁর গানের প্রশংসা করলে মমতা বলেছিলেন, তিনি শৈশবে গান শিখতেন।

সন্ধ্যার আত্মজীবনীর এই অংশটি পড়ার পর সুদীপ্তা নিজেই এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তিনি সন্ধ্যার মতো বিদগ্ধ ব্যক্তির লেখা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর মতে, অনেকেই না জেনে শুনে অনেক ঘটনা নিয়ে হাসাহাসি করেন।

অনেকেই হয়তো বলবেন, সন্ধ্যার আত্মজীবনীর এই অংশটি তাঁকে দিয়ে জোর করে লেখানো হয়েছে। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, মমতা যে সময়ের বঙ্গসমাজের মেয়ে, সেখানে অধিকাংশ বাড়িতেই কন্যাসন্তানকে শৈশব থেকে গান শেখানোর রেওয়াজ ছিল। নিদেনপক্ষে, শেখানো হত রবীন্দ্রসঙ্গীত। না, মেয়েকে শিল্পী তৈরি করার স্বপ্ন নিয়ে গান শেখাতেন না সেই যুগের বাবা-মায়েরা। বিয়ের আগে পাত্রপক্ষের সামনে বসে দুই কলি গান শুনিয়ে মেয়ে যাতে শ্বশুরবাড়ির প্রতিভাশালী বৌ হওয়ার লাইসেন্স পায়, সেটাই ছিল উদ্দেশ্য। ব্যতিক্রম ছিলেন না মমতাও। রাজনীতিতে তিনি এসেছিলেন কলেজ জীবনে। কিন্তু স্কুলজীবনে তাঁকেও অন্যান্য মেয়েদের মতোই গৃহকর্মনিপুণা, গান জানা পাত্রী তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। কয়েকদিন আগে একজন মহিলা নেটিজেন লিখেছেন, মমতাকে সন্ধ্যা অনুরোধ করেছেন গান গাইতে, বাপ্পী লাহিড়ী (Bappi Lahiri) অনুরোধ করেছেন গান লিখতে, তাহলে তিনি ‘শ্রী’ নিয়ে কেন কাজ করছেন! সঙ্গীতজগতে আসতে পারতেন! এই প্রশ্ন একবিংশ শতকে এসে বাড়ির মেয়েদের করলেই ভালো হয়, যাঁরা অবলীলায় গিটারিস্ট, নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী, সঙ্গীতজ্ঞ, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন হওয়ার স্বপ্নকে নিজের হাতে খুন করে, কেউ বা নিজেরা চাকরি ছেড়ে সংসার ও সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। হয়তো জীবন সায়াহ্নে এসে অনেকে উপলব্ধি করেন, কিন্তু সমাজের ট্র্যাডিশন তাঁদের লোকলজ্জার বেড়িতে বেঁধে দেয়। তাই নারীদের দুর্ভাগ্য নিয়ে ট্রোলিং না করে ট্র্যাডিশনটা বদলাতে চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Saayoni Ghosh (@sayanigh)

Related Articles