ফের স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন, লকডাউনের অভিশাপ পেরিয়ে মুখে হাসি যাত্রাশিল্পীদের
করোনা ভাইরাস গোটা পৃথিবীর বুকে এক অভিশাপ। এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপে একদিন সবকিছুই এগিয়ে ছিল বন্ধের পথে। ভাইরাসের প্রকোপ এখনো কমেনি কিন্তু পেটের দায়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন। এই ভাইরাসের জেরে একটা সময় পুরোপুরি বন্ধ ছিল জনজীবন। বন্ধ ছিল বিনোদন মাধ্যম। অবশ্য আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। সকলের হাতেই এখন একটা করে সেলফোন আছে। আর এই সেলফোনের ইন্টারনেট দিয়ে মানুষ আশেপাশে কি হচ্ছে সে বিষয়ে অবগত হতে পারে, এছাড়াও অবশ্য বিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে মুঠোফোন। কিন্তু এখনো অনেক প্রত্যন্ত গ্রাম আছে যেখানকার মানুষ সেলফোন ব্যবহার করতে পারেন না। সেখানকার মানুষের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হল যাত্রা পালা। আর সেই যাত্রাপালা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় করোনা মরশুমে।
বাংলার লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী বিনোদন মাধ্যমগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল যাত্রা আর এই লকডাউন পর্বে এই যাত্রাপালা ছিল গভীর অস্তিত্বসংকটে। বহু প্রাচীনকাল থেকে এসব মাধ্যম গ্রামীণ জনসাধারণের চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি লোকজীবনের সৃজন ও মননচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এখন তা বিলীয়মানের পথে ছিল। আজ বহু যাত্রাপালার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
লকডাউন পর্বে ৫০০ বছরের পুরনো যাত্রাশিল্প হারানোর পথে এগিয়ে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে আনলক পর্ব শুরু হয়েছে। করোনার হাতছানিতে ফাল্গুন থেকে শুরু হয়নি কোনো বায়না। জৈষ্ঠ্যতে আর দেখা গেলোনা নটি বিনোদিনী, কপালকুণ্ডলার মত লোকশিল্প। বাংলার যে কোনো উৎসবে গ্রামের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে শিল্পীরা নিজের অভিনয় করে থাকেন। এবছর রাস উৎসব, মহালয়া,দুর্গা পুজো, কালীপুজোতে কোনো যাত্রা পালা হয়নি।
যখন থেকে সরকার করোনা মরশুমে আনলক পর্ব শুরু হয় যখন থেকে রাজ্য সরকার ট্রেন চালু করে দেন। তখন থেকে ফের শুরু হল যাত্রাপালার আসর। আবার শিল্পীরা মঞ্চে অভিনয় করে প্রাণ ফিরে পেল মানুষ। কালীপুজোর সময় যাত্রা পালা না হলে ও এর পরবর্তী সময় শিল্পীরা করোনার নিয়ম রীতি মেনে মুখে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার নিয়ে গ্রামের পথে পথে চলছে যাত্রার মহড়া। শুরু হল একের পর এক যাত্রা মঞ্চস্থ। ‘বির্সজনের পরে’,’এরই নাম ভালোবাসা’,’তোমার সমাধি ফুলে ফুলে ঢাকা’,’প্রিয়ার রক্তে প্রেমের পূজা’ প্রমুখ নাটক ফের মঞ্চস্থ হয়। শিল্পীরা নিজেদের অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেদের উপার্জনের পাশাপাশি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেও সার্থক হয়েছেন।
করোনা আবহে যাত্রার অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হলেও আগের মতো নিত্যদিন শো হচ্ছেনা। কিন্তু গ্রামের মানুষের সেই আগের মতো উচ্ছ্বাস আছে। যাত্রাপালাতে অভিনেতা -অভিনেত্রীর সংখ্যা আগের মতো থাকলেও স্পটবয়, লাইটম্যান, আজ তাঁরা চরম আর্থিক মন্দায় ভুগছে। যেসব কর্মীরা গ্রামে থাকেন, তাঁরা আজ পেটের দায়ে মাঠে চাষ করছে। ক্ষুদার জ্বালায় আজ সব শিল্পীরা তাঁদের অভিনয় ভুলতে বসেছে। সমস্যা একটাই আগের থেকে আয় কমে গিয়েছে অন্য কর্ম সংস্থানের মতো টাকার পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছে তাই আজ বহু শিল্পী পেট চালানোর দায়ে অন্য কাজে নিযুক্ত হয়ে যাচ্ছে। যাত্রা শিল্পী সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় জানান,”আগের থেকে যাত্রার সংখ্যা কমলেও আসন্ন বাংলার উৎসবে আবার রমরমিয়ে শুরু হবে যাত্রার অনুষ্ঠান। আগের থেকে অনেক বেশি সচেতনতা নিয়ে শুরু হয়েছে যাত্রার শো”। স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন আর সচেতনতা নিয়ে শুরু হচ্ছে গ্রামের এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। সিরিয়াল সিনেমার মতো যাত্রাও আবার ঠিক আগের জায়গা ধরবে এটাই মনে করছে সাধারণ মানুষ।