কোন পাপে ধ্বংস হল পম্পেই শহর! জেনে নিন এর অদ্ভুতুড়ে রহস্য
ইতালির আধুনিক নেপলসের কাছে পম্পেই ইউনিয়নের অবস্থান। শহরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। মনে করা হয় ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াস পর্বত এর বীভৎস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সম্পূর্ণ নগরী প্রায় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ৬০ ফুট উঁচু ঝামা পাথর এর নিচে শহরটি একেবারে চাপা পড়ে যায়। ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় মাটির নিচ থেকে শহরটিকে আলোর জগতে নিয়ে আসা হয়। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে একটি খাল খননের সময় আর্কিটেক্ট দমেনিকো ফন্টানা এই শহরের বেশ কিছু নিদর্শন খুঁজে পান। সেই সময়ে শহরটিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব না হলেও পরবর্তীকালে ১৭৩৮ সালে হেরকুলানিয়াম এবং ১৭৪৮ সালে পম্পেই নগরীর ধ্বংসাবশেষ পুনরাবিষ্কৃত হয়।
শহরটি ছিল প্রাকৃতিক সম্পদে একেবারে ভরপুর। প্রায় ২০০০ বছর আগে এই শহরটি ছিল রীতিমত একটি অভিজাত শহর। ইতালির তৎকালীন রাজা ওস্কান খ্রিস্টপূর্ব ছয় থেকে সাত শতাব্দীর মধ্যে এই শহরের পত্তন ঘটান। ভূমধ্যসাগরের উপত্যকায় ভিসুভিয়াস পাহাড়ের কাছে এনে পালস শহরের ঠিক পাশে গড়ে উঠেছিল এই অভিজাত শহরটি। শহরটি বাণিজ্য নগরী হিসেবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিল। তবে শুধু তাই নয়, পরবর্তীকালে বিনোদন নগরী হিসাবেও এর আকর্ষণ কিছু কম ছিল না। প্রচুর ভ্রমণ পিপাসু মানুষ পৃথিবীর নানান জায়গা থেকে এখানে ঘুরতে আসতে। বৈভব, লালসা ডুবে থাকত। যৌনতার দিক থেকেও এখানকার মানুষ ছিল অন্ধ। শুধু যৌনতার জন্য এখানে প্রতিটি বাড়িতে তৈরি হত ছিল আলাদা আলাদা জায়গা। প্রত্যেকটি বাড়ির ঘরে এঁকে দেওয়া হতো নগ্ন পর্নোচিত্র। সামাজিকভাবেও ক্রমশ ক্ষয় শুরু হয়েছিল শহরে। তারা ক্রমশ এতটাই ঘৃণ্য আচরণ করছিল যে পশুপাখির সঙ্গেও যৌনতায় তারা পিছপা হননি। কিন্তু এই অনাচার তো আর বেশিদিন চলতে পারে না। অন্তত ইতিহাস যা বলছে প্রকৃতি এই অনাচার সহ্য করতে পারেনি। ভিসুভিয়াস পর্বত থেকে ভয়ংকর অগ্নুৎপাত নেমে এসেছিল এক আনন্দ মুখর দুপুরবেলা। মানুষ তখন আনন্দ উল্লাসে আত্মহারা। ঠিক সেই সময় ঘটে গেল এমন দুর্ঘটনা। টানা প্রায় ১৯ ঘণ্টা ধরে চলতে থাকলো এই ভয়ঙ্কর অগ্নুৎপাত এর তান্ডব লীলা। শহর ধ্বংস হয়ে গেল। তবে কি লাগামছাড়া যৌনতার পাপেই স্বয়ং ওপরওয়ালা এই শহরবাসীদের শাস্তি দিলেন?
এ শহরের আরো একটি রহস্য হলো। বছরের পর বছর একই ভাবে থাকার পরেও ধ্বংসস্তূপ থেকে যে মৃতদেহগুলিকে তুলে আনা হয়েছে সেগুলির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তাদের যেভাবে মৃত্যু হয়েছে ঠিক সেইভাবেই তাদেরকে পাওয়া যায়। বর্তমানে এই পম্পেই শহরের টানে ইতালিতে বহু পর্যটক এর আগমন হয়। শহরের ধ্বংসাবশেষ এর রহস্য পর্যটকদের বারবার সেই জায়গায় টেনে নিয়ে যায়।