রাস্তার কুকুরদের খাওয়াতে নিজের মাইনে থেকে কুড়ি হাজার টাকা ব্যয় করেন এই যুবক
মুদ্রার এক পিঠ যখন খারাপ দিক চলতে থাকে অন্যদিকে কিন্তু ভালো দিকো থাকে। কয়েকদিন আগে ওই কেরালাতেই একটি হাতিকে বাজি ভর্তি আনারস খাইয়ে মেরে ফেলা হলো, কিছুদিন আগেই দেখা গেল একটি কুকুরকে কুড়ুল এর বাড়ি ক্রমাগত একটি লোক মেরেই চলেছে, কিংবা কুকুরকে বাইকে সঙ্গে বেঁধে নিয়ে রাস্তায় ঘষতে ঘষতে নিয়ে যাচ্ছে এক যুবক। পশুদের ওপর অত্যাচার ক্রমেই বেড়ে উঠেছে। কিন্তু সবাই তো আর খারাপ নয়, ভাল মানুষ রয়েছে পৃথিবীতে। যারা এই অবলা প্রাণী গুলোকে বুকে টেনে নিয়েছেন। নিজের পরিবারের একজন মনে করেন তারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন কেরালার এই মানুষটি, যিনি মাসে কুড়ি হাজার টাকা খরচ করেন শুধুমাত্র পথের পশুদের জন্য।
কেরালার প্রদীপ যে, ছোটবেলা থেকেই রাস্তার কুকুর বিড়ালদেরকে ভালবাসতেন। তার বাবা প্রথম একটি কুকুরকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন ২০০১ সালে আর এখনও পর্যন্ত প্রদীপের বাড়িতে প্রায় ১৫ টি কুকুর রয়েছে। প্রদীপ জানান যে, “কোন পশু যদি আমাদের বাড়িতে আসে তাদেরকে ভীষণ যত্ন করা হয়। তাদের মুখের সামনে কোনো দিন দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় না। বিশেষ করে আমার বাবা যখন ২০১০ সালে মারা গেলেন, আমি তারপরেও প্রাণীদেরকে আশ্রয় দেওয়ার কাজটি চালিয়ে গিয়েছিলাম। সব মিলিয়ে আমার বাড়িতে এখন ৪৩ টি প্রাণী।”
প্রদীপ কোয়েম্বাটুর এ একজন ওয়াশিং পাউডার কোম্পানিতে সাপ্লায়ার হিসেবে চাকরি করেন। সাড়ে ৪ টার সময় ঘুম থেকে উঠে তারেই প্রাণীদেরকে নিয়ে তিনি হাঁটতে বের হন। সেই সময় তার ৬৪ বছরের বৃদ্ধা মা তাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করেন। এত গুলো প্রাণীকে নিয়ে হাঁটাচলা করার জন্য একমাত্র ভালো সময় হলো ভোরবেলা। রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া বেরিয়ে পড়লে তখন আর সামলানো সম্ভব হয় না। আহত পশুদেরকে নিয়ে যাতায়াত করার জন্য তিনি একটি ছোটখাটো ট্যাক্সি কিনে ফেলেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিশেষ এক ধরনের খাঁচা। শুধু তাই নয়, প্রতি মাসে এই পশুদের যত্ন নেওয়ার জন্য তিনি কুড়ি হাজার টাকা ব্যয় করেন। কেউ যদি মনে করেন, তার কাছ থেকে পশু দত্তক নিতে পারেন তার জন্য প্রদীপ শুধুমাত্র তাদের থেকে ভোটার আই কার্ড এবং তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে একটু জেনে নেই, তাদেরকে পশু দান করেন। পথ ও পশুদের ওপর নির্যাতন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রদীপ জানান, রাস্তায় দুর্ঘটনায় পশুরা আহত হয়েছে কিংবা পশুদের রাস্তায় ফেলে রেখে চলে গেছে এমন ঘটনা তিনি গড়ে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ২-৩ টি ফোন পান।
ভালো মানুষ পৃথিবীতে অবশ্যই রয়েছে, না হলে বোঝার পৃথিবীটা কবেই ধ্বংস হয়ে যেত। পথপশুদের যদি খেতে দিতে না চান দেবেন না, কিন্তু তাদের উপর কোন ভাবে অত্যাচার করবেন না। কারণ, এই পৃথিবীতে মানুষের যেমন বাঁচার অধিকার আছে, তাদেরও বাঁচার সমান অধিকার রয়েছে। তারা আপনার থেকে একটু ভালোবাসা চায়, উল্টে আপনাকে উজাড় করা ভালোবাসা দেবে। কথায় আছে, কুকুর নিজের থেকেও মানুষকে বেশি ভালবাসে, এরা মানুষের থেকে ভালোবাসা পেলে মানুষের জন্য প্রাণ দিতেও রাজি আছে।