রথযাত্রায় কেন পাঁপড়-জিলিপি খাওয়া হয়! জগন্নাথদেবের সঙ্গে এর সম্পর্ক কি?
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এর মধ্যে অন্যতম পার্বণ হল রথযাত্রা (Rath Yatra)। সনাতন ধর্ম সংষ্কৃতির অন্যতম উৎসব রথযাত্রা। পুরী থেকে বাংলার মাহেশ, ইসকন, মহিষাদল, গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রার উৎসব একের পর এক প্রাচীনতার গল্প বলে। সর্বত্রই এদিন ঢল নামে মানুষের। রথের রশিতে টান দিয়ে পুণ্য অর্জনের সঙ্গে রথের মেলার প্রতিও থাকে একই রকম আকর্ষণ। আর রথের মেলা মানেই পাঁপড় ভাজা আর জিলিপির অবিচ্ছেদ্য বন্ধন।
কোথাকার খাবার জিলিপি-পাঁপড়
রথের মেলা আর পাঁপড় জিলিপির সঙ্গে মানুষের বন্ধন সুপ্রাচীন। কিন্তু রথের সঙ্গে পাঁপড় জিলিপির সংযোগ হল কীসের সূত্রে? উল্লেখ্য, পাঁপড় বাঙালির পাতে চেনা খাবার হলেও এটি মূলত উত্তর ভারতীয়, পঞ্জাবের খাবার। জানলে অবাক হবেন, রামায়ণেও রয়েছে পাঁপড়ের উল্লেখ। ভরদ্বাজ মুনি রামচন্দ্র এবং তাঁর সৈন্যের জন্য যে খাবার দাবারের আয়োজন করা হয়েছিল তার মধ্যে ছিল পাঁপড়। অন্যদিকে জিলিপি হল মূলত আফগানিস্তানের খাবার। তবে মুঘল সম্রাটদের হাত ধরে বাংলায় আসে জিলিপি। পরবর্তীকালে বর্ধমানের রাজা মহতাবচন্দ্র বাহাদুর ইফতারের সময় তাঁর পাচকদের মানকচুর জিলিপি তৈরি করে বিলি করতেন। সেখান থেকেই বাংলায় জিলিপির জনপ্রিয়তা শুরু। কিন্তু পাঁপড় জিলিপির সঙ্গে রথযাত্রার সংযোগ হল কী করে?
জগন্নাথদেবের সঙ্গে কী সম্পর্ক?
কিংবদন্তি অনুসারে, রথযাত্রার আগে স্নানযাত্রার দিনে ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করানো হয় জগন্নাথদেবকে। তারপর জগন্নাথদেবের জ্বর আসলে টানা ৭ দিন তিনি ছিলেন নিভৃতাবাসে। পাঁচন খাইয়ে সুস্থ করে তোলা হয় জগন্নাথদেবকে। তারপরেই বলরাম এবং সুভদ্রার সঙ্গে রথে করে গুন্ডিচায় মাসির বাড়িতে যান জগন্নাথদেব। কিংবদন্তি বলে, সেখানে গিয়ে নোনতা খাওয়ার সাধারণ হতে পাঁপড় ভাজা খান জগন্নাথদেব। আর মিষ্টিতে জিলিপি দেওয়া হয় জগন্নাথদেবকে।
রথযাত্রায় কীভাবে ঠাঁই পেল জিলিপি পাঁপড়
না, জগন্নাথদেবের ৫৬ ভোগে এই দুই খাবার জায়গা পায়নি। তবে রথযাত্রার সঙ্গে মেলার সম্পর্ক বহুকালের। গ্রামবাংলায় রথের মেলায় দামী মিষ্টি কেনার মতো সাধ্য ছিল না দরিদ্র মানুষদের। সেই জায়গা নেয় রসে ডোবা জিলিপি। আর নোনতায় জিলিপির সঙ্গী হয় পাঁপড় ভাজা। দুই খাবারেরই দাম কম হওয়ায় দ্রুত অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে পড়ে রথের মেলার সঙ্গে। সেই থেকেই জিলিপি আর পাঁপড় ভাজার কদর কয়েক গুণ বেড়ে যায় রথের দিনে।