whatsapp channel

চা-বিক্রেতাই যেন ঈশ্বর, চা বিক্রির টাকা দান করেন বস্তিবাসী ছেলেমেয়েদের উদ্দেশ্যে

প্রত্যেকদিনের বিক্রি হওয়া এক কাপ চায়ের অর্ধেক টাকা খরচ করেন বস্তিবাসী ছেলে মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার জন্য। মানবিকতার এক অসাধারণ নজির গড়লেন এক চা বিক্রেতা। ৫৪ বছর ধরে বলা যায়…

Avatar

HoopHaap Digital Media

Advertisements
Advertisements

প্রত্যেকদিনের বিক্রি হওয়া এক কাপ চায়ের অর্ধেক টাকা খরচ করেন বস্তিবাসী ছেলে মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার জন্য। মানবিকতার এক অসাধারণ নজির গড়লেন এক চা বিক্রেতা। ৫৪ বছর ধরে বলা যায় সেই শৈশব কাল থেকেই রাস্তার পাশের চায়ের দোকান খুলে জীবিকা অর্জন করেছিলেন এক চা বিক্রেতা। ৬১ বছর বয়সী ওড়িশাবাসী প্রকাশ রাও সম্প্রতি ভারত সরকার থেকে ‘পদ্মশ্রী’ খেতাব পেয়েছেন। তাই এখন তিনি একজন ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপ্ত চা বিক্রেতা। তবে এই ‘পদ্মশ্রী’ পাওয়ার পিছনে রয়েছে তার এক করুণ কাহিনী।

Advertisements

মাত্র ছয় বছর বয়সে ছোট ছেলেমেয়েরা তাদের শৈশবকালে হেসে খেলে বেড়ায়, সেই সময় থেকেই এই চা বিক্রেতাকে বাবার চায়ের দোকানে বসতে হয়েছিল। প্রকাশ বাবুর পিতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই তিনি তার উড়িষ্যার কটক এর বাড়িতে ফিরে আসেন। তিনি ভেবেছিলেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই তিনি বিকল্প কোনো চাকরি খুঁজে নিতে পারবেন। কিন্তু তা হয়নি। কেউই তাকে চাকরিতে গ্রহণ করেননি। মাত্র পাঁচ টাকা পুঁজি নিয়ে পেটের দায়ে শুরু করেন চা বিক্রি। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে কিন্তু বস্তির ছেলেরা ছোট বয়স থেকেই পেটের দায়ে কাজ করতে নেমে যাবে, এটাই হচ্ছে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। স্কুল যাওয়ার পরিবর্তে শৈশব অতিবাহিত হয় কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে। ছোটবেলা থেকেই কখনো দোকানে কাজ কিংবা বাড়ি বাড়ি কাজ যেভাবেই হোক টাকা রোজগার করতেই হবে। শুধু তাই নয়, এই সমস্ত ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের রোজগারের পয়সা বাড়িতে নিয়ে আসার পরই তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বাড়ির পুরুষ মানুষরা সেই টাকায় মদ খেত। অকথ্য অত্যাচার চলত বাড়ির মানুষগুলোর উপর।

Advertisements

এই সমস্ত প্রত্যেকটি ঘটনা প্রকাশ বাবুর উপর ছাপ ফেলতে শুরু করে। ছোটবেলা থেকেই প্রকাশ করে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন। ফুটবল খেলতে ভালোবাসতেন। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল তিনি একজন ডাক্তার হবেন, কিন্তু অবশেষে ভাগ্য তাকে চা বিক্রেতা করেছে। তার মতন এমন দুর্ভাগ্য যেন আর কোন বাচ্চার না হয় সেই জন্য তিনি তার প্রতিদিনের চা বিক্রি টাকা থেকে অর্ধেক টাকা দান করেন বস্তিবাসী ছেলে মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার জন্য। পড়াশোনার জন্য বস্তিবাসী ছেলেমেয়েদের টাকা দিতে গিয়ে তাকে শুনতে হয়েছে নানান রকমের কটু কথা। সেই সমস্ত সন্তানদের মা-বাবারাই তাকে বলেছে যে তাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে কি করবে, মেয়েরা লোকের বাড়ি কাজ করে ৭০০ টাকা রোজগার করে, পড়াশোনা করে কি তিনি তাদের পেটের ভাত মারতে চান? এমন নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাকে। কিন্তু কোনোভাবেই এই সমস্ত কথা তাকে টলাতে পারেনি।

Advertisements

তাদের শুধু শিক্ষা আর স্বাস্থ্যই নয় তিনি দুবেলা-দুমুঠো খাবার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন তাদের জন্য। প্রতিদিন প্রকাশ বাবু তাদের জন্য ডালমা ( ডাল, চাল এবং সবজি দিয়ে তৈরি একটি খাবার) রান্না করেন। তাদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে পেরে তার মনে এক অসাধারণ আনন্দ হয়। যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী কটক শহরে এসেছিলেন, তখন তিনি জানান এই খাবার হলো বাচ্চাদের জন্য একেবারে উপযুক্ত খাবার আর এইরকম খাবারই প্রত্যেকটি বিদ্যালয় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী তার উদ্দেশ্যে বলেন, তিনি হলেন পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের কাছে প্রদীপ স্বরূপ। এই সমস্ত হতদরিদ্র ছেলেমেয়েদের সামনে এগিয়ে চলার পথকে আলোকিত করতে তার অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে।

Advertisements
whatsapp logo
Advertisements
Avatar
HoopHaap Digital Media