করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ক্রমশ সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমের পাতায় এখন সেলফির জায়গা নিয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও বেডের চাহিদামূলক পোস্ট। দিকে দিকে জ্বলছে গণচিতা। এর মধ্যেই করোনার অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুললেন ‘পারি’ অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya)। গত বছর মৈনাক ভৌমিক (mainak bhaumik) পরিচালিত ‘চিনি’ ফিল্মের শুটিং করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন অপরাজিতা। সময়টা ছিল দুর্গাপুজোর সময়। তবে তিনি একা নন, করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁর শাশুড়ি, ননদ ও খুড়শ্বশুর। চিকিৎসক নিরূপ মিত্র (nirup mitra)-র তত্ত্বাবধানে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন গোটা পরিবার। অপরাজিতা ঈশ্বরের কাছে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, তাঁদের পরিবারে অক্সিজেনের সমস্যা দেখা দেয়নি বা কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি। অপরাজিতারা সবাই হোম আইসোলেশনেই ছিলেন।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে অপরাজিতা বললেন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা যা প্রথমবারের থেকেও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই ঢেউ কাউকে সময় দিচ্ছে না। মানুষ নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে মানবিকতা ভুলে যাচ্ছে। কিন্তু কি এমন ঘটল যাতে অপরাজিতার মনে উঠে এল মানবিকতার প্রশ্ন? এখনও সেই কথা বলতে গিয়ে কষ্ট হয় অভিনেত্রীর। তিনি বললেন, তাঁদের পাশের বাড়িতে দুই সন্তানসহ এক দম্পতি বাস করেন। তাঁদের সঙ্গে অপরাজিতার পরিবারের যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অপরাজিতার এই প্রতিবেশী পরিবারের ভদ্রলোক সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁরা তৎক্ষণাৎ ফোন করে অপরাজিতার কাছে সাহায্য চান। ভদ্রলোকের হাঁপানি থাকার ফলে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল এবং জ্বরও এসেছিল। হাসপাতালের বেড এবং রেমডেসিভি-র যোগাড় করতে গিয়ে রীতিমত কালঘাম ছুটে গিয়েছিল অপরাজিতার। ভদ্রলোকের স্ত্রী অপরাজিতার থেকে বয়সে ছোট। তাঁদের সন্তানরা নাবালক। তাঁদেরও হাঁপানি রয়েছে। এইরকম সঙ্কটময় মুহূর্তে হাসপাতাল থেকে আশ্বাসের বদলে তাঁদের শুনতে হয়েছিল, সব করোনা রোগী নাও বাঁচতে পারেন। অপরদিকে ভদ্রলোকের স্ত্রী ও সন্তানরাও তখন কোভিড পজিটিভ হয়ে গিয়েছেন।
হাসপাতালের কথা যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলেও বাদ দেওয়া যায় না পাড়ার কথাকে। যে পাড়ায় নিষ্ঠা সহকারে দুর্গাপুজো করার জন্য ভদ্রলোক আরও পাঁচ জন প্রতিবেশীর সঙ্গে হইহই করে চাঁদা তুলতে বেরোতেন, সেই প্রতিবেশীরা কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ভদ্রলোকের পরিবার এই অবস্থায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে! অথচ একবারের জন্য কোনো প্রতিবেশী এই পরিবারটির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। এই মুহূর্তে ভদ্রলোক আগের তুলনায় সুস্থ হলেও তাঁর স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তাঁরও হাঁপানি রয়েছে। কিন্তু তাঁদের কোভিড পজিটিভ মেয়ের জন্য বেড পাওয়া যায়নি। এদিকে মেয়েটির অক্সিজেন লেভেল ওঠা-নামা করছে।
অপরাজিতা দেখেছেন, অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে মারণ-যন্ত্রণায় কারাদণ্ডের করোনা রোগী। অপরাজিতার চিকিৎসক নিরূপ মিত্র নিজেও অসুস্থ হয়ে হোম আইসোলেশনে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অক্লান্তভাবে ভিডিও কলের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে কথা বলছেন। অপরাজিতা মনে করেন, এই অতিমারী আসলে ঈশ্বরের মার। এই সময়েও মানুষ যদি মানুষের সাহায্যে এগিয়ে না আসেন তাহলে এই সভ্যতা ক্রমশ ধ্বংসের মুখে এগিয়ে যাবে।