বলিউড বারবার নেপোটিজমের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। কিন্তু স্বজনপোষণ হলেও যদি এক্স-ফ্যাক্টর না থাকে তাহলে বলিউডে সফল হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলেন আরবাজ খান (arbaaz khan)।
আরবাজের চেহারা দেখে বলিউডে অনেকেই বলতেন তিনি সলমান খান (salman khan)-এর বড় ভাই। কিন্তু পরে জানা যায়, সলমান আরবাজের দাদা। 1996 সালে ‘দারার’ ফিল্মের মাধ্যমে বলিউডে অভিনয় শুরু করেছিলেন আরবাজ। এই ফিল্মে তিনি একজন ‘সাইকো’ স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিলেন। এই ফিল্মে অভিনয়ের জন্য ‘ফিল্মফেয়ার বেস্ট ভিলেন’-এর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন আরবাজ। যে অভিনেতার কেরিয়ারের শুরু এত ধামাকাদার ছিল, তাহলে তাঁর তো বলিউডের নাম্বার ওয়ান অভিনেতা হওয়া উচিত। কিন্তু আরবাজের ক্ষেত্রে এই হিসাব গোলমাল হয়ে গিয়েছিল। বলা ভালো, আরবাজ নিজেই সমস্ত হিসাব উল্টে দিয়েছিলেন।
‘দারার’-এর সাফল্যের পরেও আরবাজের মন ছিল না নিজের কেরিয়ার গঠন করতে। সলমান যখন নিজেকে গ্রুমিং করছেন, আরবাজ তখন ভেবে নিয়েছেন তিনি নায়ক হওয়ার জন্য জন্ম নেননি। প্রকৃতপক্ষে আরবাজের আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। তবে প্রযোজক হিসাবে ‘দাবাং’ ফিল্মটি প্রযোজনা করে সাফল্য পেয়েছিলেন আরবাজ। এমনকি ‘দাবাং-2′ পরিচালনা করেও সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি। তবুও আরবাজ লাইমলাইটে থাকেন না। তার কারণ হল, আরবাজ যতই বলুন, তাঁর সাফল্যে তাঁর পরিবারের অবদান নেই। কিন্তু সত্যিই কি তাই? ‘দাবাং’ ও ‘দাবাং-2′ দুটি ফিল্মেই ‘চুলবুল পান্ডে’ সলমান খানের ম্যাজিক কাজ করেছিল। সলমানের পরিবর্তে অন্য কাউকে ‘চুলবুল পান্ডে’-র চরিত্রে কাস্ট করলে ফিল্ম হিট হত কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
বিতর্ক আরবাজের কেরিয়ারকে বারবার কলঙ্কিত করেছে। 2012 সালের পয়লা জুলাই একজন সত্তর বছর বয়সী মহিলাকে গাড়ি চাপা দেন আরবাজ। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই মহিলা। কিন্তু আরবাজ ওই মহিলার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে চাননি কারণ তাঁর মতে, ওই মহিলার পরিবার মহিলার দেখ-ভাল করতেন না। বলিউডে আরবাজ কৃত এই দুর্ঘটনা নিয়ে চর্চা শুরু হতে থাকে। পারিবারিক জীবনেও আরবাজের তৎকালীন স্ত্রী মালাইকা (Malaika arora) আরবাজের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেছিলেন। তবে তা জনসমক্ষে নিয়ে আসেননি আরবাজ-মালাইকা। কিন্তু 2018 সালে আইপিএল বেটিং কেলেঙ্কারিতে আরবাজ জড়িয়ে পড়লে আর সহ্য করতে পারেননি মালাইকা। কারণ মালাইকা ও তাঁর পরিবার বারবার আরবাজকে বেটিং-চক্রের সাথে যোগাযোগ রাখতে বারণ করেছিলেন। আরবাজ অর্থের লোভে বেটিং করেছিলেন। অপরদিকে আরবাজের অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন হচ্ছিল কারণ তাঁর সাথে গড়ে উঠেছিল মডেল জর্জিয়া অ্যান্দ্রিয়ানি (Georgia andriyani)-র সম্পর্ক। একদিকে আরবাজের বেটিং কেলেঙ্কারি, অপরদিকে বিবাহ-বহির্ভুত সম্পর্ক মালাইকা ও আরবাজের বিয়েতে ইতি টানে। আরবাজ ও মালাইকার বিবাহ বিচ্ছেদের পর তাঁদের পুত্রসন্তান আরহান (Arhan khan) মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। প্রকৃতপক্ষে আরবাজ কোনোদিন নিজের কেরিয়ার সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সচেষ্ট হননি। কারণ তিনি জানতেন, পারিবারিক আর্থিক সমৃদ্ধির ফলে তাঁর কোনো অভাব থাকবে না। খান পরিবারের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অনায়াসেই প্রোডাকশন হাউস খুলে ফেলেছিলেন আরবাজ। অতিরিক্ত অর্থের জন্য বেটিং করতেও তাঁর আপত্তি ছিল না। কারণ আরবাজ জানতেন, পারিবারিক প্রভাব খাটিয়ে বেঁচে যাবেন তিনি। আদতে তা হয়নি। বেটিং কেলেঙ্কারির ফলে বলিউডে আরবাজের যা সম্মান ছিল, সমস্ত হারিয়েছেন আরবাজ। ইদানিং শোনা যাচ্ছে, সলমানও আরবাজকে পাত্তা দিতে চাইছেন না। চারিদিক থেকেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন আরবাজ। এই মুহূর্তে আরবাজ নিজে না মানতে চাইলেও বলিউড জানে, আরবাজ খান শুধুমাত্র একটি ব্যর্থতার নাম।