ঘরের দেওয়ালে মধুবনি চিত্র এঁকে তাক লাগালেন ৯৩ বছরের ঠাকুমা, পেলেন ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার
গোদাবরী দত্ত নামের এই মহিলা যিনি মাত্র ১০ বছর বয়সে তার বাবাকে হারিয়ে ছিলেন। যখন তার স্কুল যাওয়ার সময় সেই সময় তার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরেই শৈশব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে শিখেছিলেন মধুবনি চিত্র। আর এই শিক্ষাটাকে তিনি ফেলনা হতে দেননি। মনের জোরে এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। পরবর্তীকালে তারই প্রতিভার জন্য তিনি ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়।
ইন্দিরা গান্ধী, যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি খরা বিধ্বস্ত বিহারে গিয়েছিলেন ভাস্কর কুলকার্নি সঙ্গে। ভাস্কর কুলকার্নি সমস্ত গ্রাম ঘুরে বেরিয়ে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলেন, যে গ্রামের প্রতিটি মাটির বাড়িতে সুন্দর চিত্র আঁকা। স্থানীয়রা এই চিত্রকে ‘মধুবনি চিত্র’ বলে। এটি অনেক পুরনো একটি অঙ্কন পদ্ধতি। এই অসাধারণ অঙ্কন পদ্ধতি ভাস্কর কুলকার্নির চোখে পড়ে।
মাত্র ২০ বছর বয়সে গোদাবরী দত্তের এই অংকন শৈলী বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে। এখন তার বয়স ৯০ পেরিয়েছে। তার এই চিত্র জাপানের তোকামাচি মিউজিয়ামেও প্রদর্শিত হয়েছে। অনেক ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পরে, বিয়ে হয়ে যাওয়ার জন্য তার শৈশব টা নষ্ট হয়ে যায়। তবে এগুলো বাদ দিলে তার জীবনটা মধুবনি চিত্রে রঙিন হয়ে উঠেছে। একটা সময় এই গ্রামের মহিলাদের খুব ছোট চোখে দেখা হত কিন্তু বর্তমানে প্রত্যেকটি মহিলাকে এই গ্রামের ‘মধুবনি চিত্রকলা’ শিখতেই হবে এমনটাই বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়।
সংস্কৃতি অনুযায়ী, প্রত্যেক মা তার মেয়েকে বংশ-পরম্পরা অনুযায়ী, এই চিত্রকলা শিখিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, দেশে কোথাও বিয়ে বাড়ি বা উৎসবের সময় বিহারের এই গ্রাম থেকে মেয়েদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় দেওয়ালে মধুবনি চিত্রকলা আঁকানোর জন্য। তার মা সুভদ্রা দেবী খুব সুন্দর ছবি আঁকতেন। তিনি রামায়ণ-মহাভারতের নানান রকম চরিত্র এমনকি ফুল, টিয়া পাখি ইত্যাদি আঁকতে ভালোবাসতেন। তার এই চিত্রের মধ্যে আছে মাছ, হাতি, কচ্ছপ, সূর্য এবং চাঁদ। এই চিত্র আঁকার জন্য তারা নিজেদের আঙ্গুল, নিব পেন, দেশলাই কাঠি ইত্যাদি ব্যবহার করেন। রংয়ের জন্য ব্যবহার করেন প্রাকৃতিক উপাদান। যেমন হলুদ রং তৈরি করেন হলুদ থেকে, গেরুয়া রং তৈরি করেন গাঁদা ফুল থেকে, কালো রং তৈরি করেন কাঠ-কয়লা থেকে, সাদা রং তৈরি করেন চালের গুঁড়ো থেকে।
তবে সবচেয়ে মজার কথা গোদাবরী দেবী তার আঁকার সময় কোনোদিন ব্রাশ ব্যবহার করেননি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, তিনি তার এই চিত্রের জন্য কোন দিন এক পয়সাও কারুর থেকে চাননি। কারণ তিনি মনে করেন, অংকন হল ভগবানের আশীর্বাদ। তার এই অংকন শৈলী এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে, দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন তার এই হাতের কাজ দেখতে আসেন এবং কিনে নিয়ে যান। ৮০ বছর পরে তিনি অনেকগুলি শিক্ষনীয় প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করা শুরু করেন। তবে বর্তমানে শুধুমাত্র দেওয়ালেই নয় ওড়না, শাড়ি, কুর্তি এছাড়াও ঘর সাজানো বিভিন্ন জিনিসের ওপর এই মধুবনি আঁকা হয়।