বাড়িতে অসুস্থ মা, জলের কষ্ট মেটাতে একাই গভীর কুয়ো খুঁড়লো সাহসী এই মেয়ে
অসুস্থ মায়ের কষ্টে কেঁদে উঠল মেয়ের মন, জলের অভাব মেটাতে একাহাতে কুয়োখনন সাহসী মেয়ের
বর্ধমানের ২৪ বছরের ববিতা সোরেন। অসুস্থ মায়ের দূরে গিয়ে জল আনতে কষ্ট হয়। তাই নিজেই ১৫ ফুট গর্ত খুঁড়ে ফেললেন কুয়ো তৈরির জন্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। তারপরই তিনি বি.এড.এ ভর্তি হয়েছেন। সংসার চালাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এদিকে বাড়িতে অসুস্থ মা। রোদের জন্য চারিদিকে ফুটিফাটা অবস্থা, জল আনতে যেতে হয় ২০০ মিটার দূরে। মায়ের কষ্ট ববিতা দেখতে পাইনি চোখে। কিন্তু জল ছাড়া তো এক মুহূর্ত চলা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র পানীয় জল নয়, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে জল সমস্ত কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই জল প্রয়োজন ভীষণভাবে, কিন্তু এত দূরে গিয়ে জল আনা টাও বড় কষ্টকর। মায়ের শরীর ক্রমাগত খারাপ হচ্ছিল। এত কষ্ট ববিতা নিজের চোখে দেখতে পারেনি। মনের জেদকে সম্বল করে নিজেই খুড়তে শুরু করলেন কুয়োর গর্ত। ১৫ ফুট লম্বা গর্ত খুঁড়ে ফেললেন একাই। কথাটা বলা যতটা সহজ হচ্ছে এ কাজটি করা ছিল ঠিক ততটাই কঠিন। কিন্তু রক্তাল্পতায় আক্রান্ত দুর্বল মায়ের কথা মাথায় রেখে ববিতা কাজটি একেবারে ম্যাজিকের মতো করে ফেলেছে।
গত বছরের শেষের দিক থেকে তিনি এই কাজটি শুরু করেন। হোস্টেলে যখন ছুটি ছিল। কিন্তু পড়াশোনার জন্য তাকে আবার পুনরায় হোস্টেলে ফিরে যেতে হলে ঘুষখোর আর কাজ কিছুদিন বন্ধ রাখতে হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাস এর জন্য লকডাউনের সুবাদে সে যখন গৃহবন্দি অবস্থায় থাকে তখন আবার নতুন করে কুয়োর কাজ শুরু করে দেন। বলা যায়, এই বন্দীদশা তাকে একটি নতুন সুযোগ করে দেয়। তিনি বলেন, “তার বাবা এবং ভাই দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতো তাকে। ওই দড়ি বেয়ে তিনি রোজ নিচে নামতেন।” বাবা একটি কারখানায় কাজ করেন। দাদা গাড়ি চালান। দিদি স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করে কোন রকমে তারা সংসার চালান।
লকডাউনের জন্য কুয়ো খোঁড়ার জন্য লোক পাওয়া ভারি মুশকিল। তাই কারুর মুখাপেক্ষী না থেকে নিজেই হাত লাগিয়ে দেয় এই কাজে। খুব খোঁড়ার পর যখন জল পাওয়া যেতে শুরু করল, এই দেখে গ্রামবাসীরা তো বটেই প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ও তার বাড়িতে আসেন। তারা এসে তাকে আশ্বস্ত করেন। সরকার থেকে কুয়োটি আরো খুলে দেওয়া হবে, কুয়োটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ৩০ ফুট। সমস্ত খরচ সরকার থেকেই দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, ববিতাকে একটা ল্যাপটপ এর পাশাপাশি চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিরা। এমন কাজের জন্য ববিতাকে স্যালুট জানাতে হয়। অভাবের সংসারে পড়াশোনা করে সুশিক্ষিত হয়ে অসুস্থ মায়ের কথা সে ভেবেছে। সত্যিই সে যোগ্য সন্তানের এক উদাহরণ হতেই পারে।