বলিউডের নামী গায়িকা অলকা ইয়াগনিক (Alka Yagnik) প্রায় প্রত্যেক অভিনেত্রীর জন্য গান গেয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন রেখা (Rekha), হেমা মালিনী (Hema Malini), মাধুরী দীক্ষিত (Madhuri Dixit)। আজও অলকা মনে করেন, মাধুরীর জন্য গাওয়া সেই বিশেষ গানের কথা যা ছিল মাধুরী ও অলকার কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। কিন্তু গানটি রেকর্ড করার দিন অলকার ইচ্ছা ছিল না এই ধরনের গান রেকর্ড করার।
View this post on Instagram
1988 সালে তৈরি হয়েছিল এন.চন্দ্রা (N.Chandra) পরিচালিত ও অনিল কাপুর (Anil Kapoor) ও মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত ফিল্ম ‘তেজাব’। এই ফিল্মের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল (Laxmikant-pyarelal)। আরকে ফিল্মসের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন অশোক দেশাই (Ashok Desai) কলকাতায় এসেছিলেন একজন পারিবারিক বন্ধুর বাড়িতে গেট টুগেদারে। সেখানে ছোট্ট অলকা এসেছিলেন তাঁর মায়ের সঙ্গে। অলকার মা বরাবর চাইতেন, তাঁর মেয়ে গায়িকা হবে। সেই পারিবারিক গেট টুগেদারে একজন ব্যক্তির অনুরোধে গান গেয়েছিলেন অলকা। তাঁর গান পছন্দ হয়েছিল অশোকের। তিনি রাজ কাপুর (Raj Kapoor)-এর কাছে অলকার নাম প্রস্তাব করে একটি চিঠি লিখেছিলেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে অলকা পৌঁছালেন মুম্বই, রাজের কাছে। রাজ তাঁর গান শোনার পর চিঠি লিখলেন লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলালকে। রাজের অনুরোধে লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল অলকার গান শুনলেন। কিন্তু তাঁরা অলকার কাছে দুটি প্রস্তাব রাখলেন।
View this post on Instagram
তাঁরা বললেন, অলকা যদি চান, তাহলে তাঁদের কাছে ডাবিং সিঙ্গার হিসাবে কাজ করতে পারেন। নাহলে তিনি কয়েক বছর পরে তাঁর কন্ঠস্বর পরিণত হওয়ার পরেও আসতে পারেন। অলকার মা অপেক্ষা করেছিলেন, মেয়ের কন্ঠস্বর পরিণত হওয়ার জন্য। কন্ঠস্বর পরিণত হলে অলকা লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলালের নির্দেশনায় বহু গান গেয়েছেন। এর মধ্যেই একটি ছিল ‘তেজাব’-এর বিখ্যাত গান ‘এক দো তিন’। গানটি লিখেছিলেন জাভেদ আখতার (Javed Akhtar)। গানটির রেকর্ডিং-এর দিন অলকার গলায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল। টনসিল বেড়ে গিয়েছিল, ইনফেকশনের জেরে এসে গিয়েছিল জ্বর। অলকা লক্ষ্মীকান্তকে বলেছিলেন, তাঁর পক্ষে এই পরিস্থিতিতে গাওয়া অসম্ভব। কিন্তু লক্ষীকান্ত বলেছিলেন, ওই দিন গানটি রেকর্ড করা অত্যন্ত জরুরী। তিনি অলকাকে আপাতত শুটিংয়ের জন্য গানটি গাইতে বলেন। যদি অসুবিধা হয়নি, তাহলে তা পরে ডাব করে নেওয়ার আশ্বাস দেন অলকাকে। উপরন্তু ওই দিন রাত বারোটা থেকে সিনে মিউজিশিয়ানদের স্ট্রাইক শুরু হওয়ার কথা ছিল। ফলে গানটি ওই দিন রেকর্ড করতেই হত।
View this post on Instagram
লক্ষ্মীকান্ত অলকাকে বললেন, ভগবানের নাম নিয়ে রেকর্ডিং করে ফেলতে। মেহবুব স্টুডিওতে রেকর্ড হল ‘এক দো তিন’। কোরাসে ছিলেন পঞ্চাশ জন গায়ক-গায়িকা। অলকা নার্ভাস ছিলেন। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে গানটি এক টেকেই ওকে হয়েছিল। অলকা লক্ষ্মীকান্তকে বলেছিলেন গানটি তিনি ভালোভাবে গাইতে পারেননি। তখন লক্ষ্মীকান্ত বলেছিলেন, যদি খারাপ গলায় অলকা এত ভালো গান গাইতে পারেন, তাহলে তিনি যেন এবার থেকে সব গান খারাপ গলাতেই গান। অলকা ডাব করতে চাইলেও রাজি ছিলেন না লক্ষ্মীকান্ত। কারণ এই গানের এক্স ফ্যাক্টর তিনি পেয়ে গিয়েছেন। ফলে ওই গানটিই ‘তেজাব’-এ ব্যবহার করা হয়েছিল।
মাধুরী কথ্থক নৃত্য জানলেও ‘এক দো তিন’ তাঁকে শিখিয়েছিল কমার্শিয়াল বলিউড ডান্স। কোরিওগ্রাফ করেছিলেন সরোজ খান (Saroj Khan)। সবাই অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলেন, মাধুরীর লিপে অলকার কন্ঠস্বর বেশি মানানসই। যাত্রা শুরু হল অলকা-মাধুরী জুটির। পরবর্তীকালে মাধুরী অভিনীত ‘খলনায়ক’-এ প্লে-ব্যাকের জন্য অলকা পেয়েছিলেন সেরা গায়িকার পুরস্কার।