Hoop Story

দোকানে কাজ কিংবা মাছ বিক্রিতে চলে সংসার, মেধাকে সঙ্গী করেই ডাক্তারি পরীক্ষার চমক দুই বাঙালি পড়ুয়ার

মনে যদি ইচ্ছা থাকে, তাহলে কোন কিছুই করা অসম্ভব না, এমনটাই প্রমাণ করে দিয়েছেন সামান্য মুদির দোকানের বেতনভুখ কর্মচারীর কন্যা এবং মাছ বিক্রেতার এক পুত্র। দুজনেরই অভাবের সংসার, দিন আনা দিন খাওয়া। এই দুই পরিবারে যেন একেবারে আকাশের চাঁদ নেমে এসেছে, হ্যা সত্যি কথাই এমন যদি সুসন্তান প্রত্যেক বাবা মা গর্ভে ধারণ করতে পারতেন তাহলে হয়তো পৃথিবীটা একটু অন্যরকম হতো। সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে তাকে তার প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু দিয়েও যখন সন্তান ঠিকঠাক মতন ভাবে মানুষ হয়না, তার থেকে দুঃখ বোধ হয় আর কোন বাবা-মার হয় না। সম্প্রতি আকাশের চাঁদ নেমে এসেছে এ পশ্চিমবাংলার বুকেই দুটি অভাবের ঘরে। যেখানে দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় করতেই একেবারে নাজেহাল হতে হয় ঠিক সেইরকম দুটি পরিবারে যেন একেবারে হাসির বন্যা বইছে। ডাক্তারী পরীক্ষায় একেবারে নজরকাড়া ফল করেছেন বীরভূমের আলো মন্ডল এবং হাওড়ার রিভু ভক্তা।

নিটে ৭২০ র মধ্যে ৬২৮ পেয়েছেন বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকের ছড়া গ্রামের তরুণী আলো। আলো সত্যিকারেরই শুধু তার সংসারের মুখ আলো করেছে তা নয়, গোটা গ্রামে যেখানে পড়াশোনা করা তো দূরের কথা যেখানে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর সংখ্যায় বেশি, সেখানে আলোর মতন কন্যার ভীষণ প্রয়োজন। তবে এইবারেই প্রথম নয়, আলো ২০১৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পেয়েছিলেন ৬৪২ এবং তিনি সেই গ্রামের স্কুলের মধ্যে সেরার সেরা হয়েছিলেন, পরবর্তীকালে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল। ইচ্ছামতন তিনি চেষ্টা করেছেন, তার পরে তিনি দুবরাজপুরে একটি বিদ্যালয় ভর্তি হন, তারপর সেখান থেকে তার আরেক সংগ্রাম শুরু হয়।

বাড়ি থেকে স্কুল অনেকটাই দূরে ছিল, তাই স্কুল এর কাছে ঘর ভাড়া নিয়ে কোনরকমে তিনি খুব কষ্ট করে দিনযাপন করে পড়াশোনা করে উচ্চমাধ্যমিকে ৪৮৬ পেয়ে সেই স্কুলের মধ্যে সেরার সেরা হন। তারপরে পড়াশোনা চলতে থাকে, ডাক্তারি পরীক্ষার প্রস্তুতি প্রস্তুতি শুধু নিলেই তো হয়না, তার সঙ্গে তিনি সাহায্য করেছেন বাবাকেও, বাবাকে মাঠে ধান রোয়া থেকে শুরু করে বাবাকে খাবার দিতে যাওয়া, ধানকাটা সমস্ত কিছুই তিনি করেছেন। তবে সরকারের তরফ থেকে দেওয়া কন্যাশ্রী টাকায় তিনি কোচিং এ ভর্তি হতে পেরেছিলেন। তবে তার শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাকে যথেষ্ট সাহায্য এবং উৎসাহিত করেছিলেন।

কোচিং এর সুযোগ আলো পেয়েছিলেন কিন্তু এই সুযোগের রিভুর কপালে জোটেনি। কারণ তার অবস্থা ছিল আরও বেশ খারাপ। তাই ইউটিউব দেখে তিনি পড়াশোনা করতেন। উচ্চমাধ্যমিকের বইগুলোকে ও তিনি একেবারে ঠোঁটস্থ করে ফেলেছিলেন। আর তারপরেই তিনি ডাক্তারিতে পড়ার এমন সুযোগ পেয়ে যান। রিভুর বাবা পেশায় একজন মাছ বিক্রেতা। মাছ বিক্রেতা টানাটানির সংসারে একজন ডাক্তার হবে, এটা ভেবে রিভুর বাবা যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপর যখন স্বপ্ন আস্তে আস্তে সত্যি হতে থাকলো এই সামান্য মাছ বিক্রেতার ঘরে যখন ছেলে ডাক্তারের প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করল তখন আর আনন্দ দেখে কে। ভোর তিনটের সময় উঠে রিভুর বাবার এই অক্লান্ত পরিশ্রম এবার বোধ হয় একটুখানি হাসি মুখ দেখতে চলেছেন।

Related Articles