ইতিহাস চিরকৃতজ্ঞ থাকে তার স্রষ্টার কাছে। কিন্তু অঞ্জন চৌধুরী (Anjan Chowdhury)-র সাথে এতটা বৈমাত্রেয় আচরণ কি সত্যিই হতাশাজনক নয়? মিডিয়া অথবা টলিউডের স্টুডিওপাড়ার কূশীলবরা জানতেই পারলেন না, চলে গেলেন অঞ্জন চৌধুরীর সহধর্মিণী জয়শ্রী চৌধুরী (Jayashree Chowdhury)। 21 শে অগস্ট অর্থাৎ গত রবিবার প্রয়াত হলেন জয়শ্রী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল পঁচাত্তর বছর। দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিক ছিলেন জয়শ্রী দেবী। ডায়াবেটিস থেকে সূত্রপাত হয়েছিল বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার।
গত কয়েকদিন ধরে একবালপুরের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন জয়শ্রী দেবী। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। রবিবার মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওর হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর মৃত্যুর খবর জানান জয়শ্রী দেবীর পুত্র সন্দীপ চৌধুরী (Sandip Chowdhury)। তিনি লিখেছেন, মা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)-এর মৃত্যুর পর বাংলা সিনেমা কার্যতঃ অন্ধকারে ডুবে যেতে বসেছিল। কলাকূশলীরাও হয়ে পড়েছিলেন কর্মহীন। বিনা চিকিৎসায় অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। সামান্য পুঁজি সম্বল করে অনেকে অন্য পেশায় চলে গিয়েছিলেন। সেই সময় বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আবির্ভাব হয়েছিল অঞ্জন চৌধুরীর। তাঁর হাত ধরেই আবারও টালিগঞ্জে শুরু হয় কর্মের ধারা।
অঞ্জনবাবুর নিজের জীবনও ছিল ফিল্মি। বরাবর পরিচালক হতে চাওয়া অঞ্জনবাবু তখন লড়াই করছেন টলিউডের মাটিতে। চালচুলোহীন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাননি জয়শ্রী দেবীর মা-বাবা। ফলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করেছিলেন অঞ্জনবাবু ও জয়শ্রী দেবী। জয়শ্রী দেবীর পরিবার এই বিয়ে না মানলেও অঞ্জনবাবুর মায়ের নির্দেশে কালীঘাট মন্দিরে হিন্দু মতে সিঁদুর পরিয়ে অঞ্জনবাবু আবারও বিয়ে করেন জয়শ্রী দেবীকে। এরপর চৌধুরী বাড়ির বৌ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন জয়শ্রী দেবী। যৌথ পরিবারের এক চিলতে ঘরের কোণে সংসার পেতেছিলেন নবদম্পতি।
টলিউডে ‘ঝুনুদি’ নামে পরিচিত জয়শ্রী দেবীর অবদান ছিল অঞ্জন চৌধুরীর সফলতার নেপথ্যে। প্রযোজনা সংস্থা খোলার জন্য স্বামীর হাতে নিজের গয়না তুলে দিয়েছিলেন জয়শ্রী দেবী। আত্মত্যাগের পথে ছিল জয়শ্রী চৌধুরীর কেরিয়ার। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তাঁদের মেয়ে চুমকি চৌধুরী (Chumki Chowdhury) জানিয়েছেন, তাঁর মা খুব ভালো গান গাইতে পারতেন। নিয়েছিলেন নাচের তালিম। ঘর সাজাতে ভালোবাসতেন। কিন্তু সংসারের জন্য এককথায় সব ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে দুই মেয়ে চুমকি ও রীনা (Reena Chowdhury)-কে নিজেই নাচ শিখিয়েছিলেন জয়শ্রী দেবী। প্রয়োজনে তাঁদের অভিনয় নিয়ে সমালোচনা করতেন তিনি। অঞ্জনবাবুর প্রোডাকশন হাউস ছাড়া বাইরে কাজ করার অনুমতি ছিল না চুমকি ও রীনার। স্বামীর স্টারডম ও হাউসফুল সিনেমা হল চেয়েছিলেন জয়শ্রী দেবী।
2007 সালের 21 শে ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন অঞ্জনবাবু। স্বামীর অবর্তমানে ছেলেমেয়েদের আঁকড়ে ধরেছিলেন জয়শ্রী দেবী। রবিবার হল এক কাহিনীর যবনিকা পতন। চলে গেলেন জয়শ্রী দেবী।