১৯৮৭ সালের ২৫ এপ্রিল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে জন্ম এই খ্যাতনামা বাঙালীর। মা ছিলেন বাঙালি এবং বাবা পঞ্জাবি। আর দিদিমা ছিলেন এক ক্লাসিকাল শিল্পী। আর মা গান গাওয়ার পাশাপাশি তবলারও তালিম নিয়েছিলেন। এই সঙ্গীত পরিবেশে বড় হয়ে ওঠেন এই ছোট্ট শিল্পী। মা এবং দিদিমার গানের অনুরাগের প্রতি ভালোবাসা দিন দিন বাড়ে। ইনি আর কেউ না। ইনি হলেন বাঙালি তথা সারা ভারতীয়দের পছন্দের হার্টথ্রব অরিজিৎ সিং। কিন্তু এই মানুষটার একসময় গানের জগতে নাম করতে হয়েছে অনেকটা লড়াই।
সাল ২০০৫! মাত্র ১৯ বছর বয়সে গায়ক হওয়ার স্বপ্নে ভারতীয় রিয়াটিলি শো- ফেম গুরুকুলে অংশ নেন এই বাঙালি যুবক অরিজিত। কিন্তু এই শো তে সেবছর কোনো লাভ করতে পারেননি। সেইবার রিয়ালিটি শো জেতা তো অনেক দূর ছিল বরং শেষ অবদি ফাইনালেও জায়গা করে নিতে পারেননি অরিজিত। ষষ্ঠস্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সেই সময় এই গায়ককে কেউ চিনতে পারেনি। কিন্তু নিজের স্ট্রাগল এখানেই শেষ হয়নি। তারপর সাল ২০১০-২০১১ সঙ্গীত পরিচালক প্রীতমের সহযোগী হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। এরপর অরিজিৎ ক্রমশ বলিউডে পরিচিতি পেতে থাকেন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে। অরিজিতের প্রথম বলিউড ব্রেক ছিল মার্ডার টু ছবি। ‘ফির মহব্বত’ গানের একটি ভার্সন গেয়েছিলেন অরিজিত। তবে সে সময় ওত নাম করতে পারেননি। তারপর ২০১৩ সালে মুক্তি পায় আশিকী টু। এই ছবির ‘তুমহি হো’ গান বলিউড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম মাইলস্টোন হয়ে ওঠে। এই গানের সুবাদে রাতারাতি তারকা হয়ে যান অরিজিত সিং। তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি বাঙালি যুবককে। এরপর গুন্ডে, ইয়ে দিল হে মুশকিল সিনেমাতে গান গেয়ে মাতিয়ে দিয়েছেন।
অরিজিত গানের জীবনে সফল হলে ও নিজের জীবনে ছিল প্রচুর চড়াই উৎরাই। তিনি যখন বলিউডে স্ট্রাগেল করছিলেন সেই সময় রিয়ালিটি শো গুরুকুল এর এক মেয়ের প্রেমে পড়েন তারপর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বিয়ের প্রথম দিকে ভালো হলেও শেষে বিচ্ছেদ ঘটে। সেই সময় এই গায়ক খুবই ভেঙে পড়ে ছিলেন। তারপর ২০১৪ সাল সেই বছর দ্বিতীয় বার এক বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করেন। নাম তার কোয়েল। কোয়েল তাঁর ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন। তাঁরা একই স্কুলে পড়তেন। শোনা যায়, কোয়েলই নাকি অরিজিতের ‘লাভ অব লাইফ’। আর সেই সবসময় অরিজিতের স্ট্রাগলে সর্বদা পাশে থেকেছেন। কোয়েলের জীবনেও ছিল বিচ্ছেদ। তিনি ও নিজের প্রথম বিয়েতে খুশি ছিলেননা।
কোয়েলের একটি পুত্র সন্তান ছিল। অরিজিত নিজের সন্তানের থেকে এই ছেলেকে ভালোবাসেন। অবশেষে অনেক বাধা, অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে ২০১৪-তে তারাপিঠে গিয়ে বিয়ে করে এক হন ছোটবেলার দুই বন্ধু। অরিজিতই প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রথমে। কোয়েল রাজি হয়ে যান। সিটিলাইট ছবির ‘মুসকুরানে’ গানটিতে সর্বপ্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ক্যামেরা দেখা যায় অরিজিতকে। অরিজিত নিজের লাভ লাইফ নিয়ে লাজুক তাই চট করে যুগলে ক্যামেরার সামনে আসেননা। কিন্তু এখন দুই সন্তানকে নিয়ে দিব্যি আছেন। সম্প্রতি এবার শীতকালটা ছিল এই জুটির কাছে অন্যরকম। স্ত্রীকে নিয়ে বরফের দেশের বেড়াতে গিয়েছেন গায়ক। সেখানে গিয়েই স্ত্রী কোয়েলের সঙ্গে বরফ মাখা আদুরে ছবি তুলেছেন তিনি। ছবিটি নিজেই অরিজিত ইন্সটাগ্রামে শেয়ার করেন। আর শেয়ার হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
View this post on Instagram