মাত্র ১৬ বছর বয়সে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন দিব্যা ভারতী। আজ বেঁচে থাকলে ৪৭ এ পা রাখতেন তিনি। হয়তো এখনো চুটিয়ে দাপিয়ে অভিনয় করে যেতেন। বেঁচে থাকাকালীন যে কদিন শ্বাস চালিয়েছিলেন সেই সময় এতটাই ব্যাস্ত ছিলেন যে বছরে চার বা পাঁচটা মুভি করা বা হাতের খেল ছিল। এত কম বয়সের মধ্যে এতগুলো মুভি করে ফেলেছেন যেখানে এখনও অনেক এমন অভিনেত্রী আছেন যারা এতগুলো মুভি করে উঠতে পারেননি তাদের ক্যারিয়ারে।
নাম যেমন দিব্যা তেমনই সৌন্দর্যে তিনি দিব্যি সুন্দর। অমন ঠোঁট, চোখ পাওয়ার জন্য বলিউডের কিছু নামকরা অভিনেত্রী প্লাস্টিক সার্জারি পর্যন্ত করিয়েছেন। হায়রে কপাল, মাত্র ১৯ এই স্বর্গলোকে জমি কিনে ফেলেছিলেন দিব্যা। যখন ক্যারিয়ার মধ্যগগণে তখন ঘটে যায় এক অকাঙ্খিত ঘটনা। পুলিশ ফাইল অনুযায়ী, মদ্যপ অবস্থায় পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্টের ব্যালকনির রেলিং ধরে হাঁটছিলেন নাকি দিব্যা, সেইসময় আচমকা ওই ব্যালকনি থেকে নীচে পড়ে যান তিনি। তারপরেই সব শেষ। এক সদ্য যৌবনে পা ফেলা অভিনেত্রীর মৃত্যুর শোকে আজও ভাবুক তার অনুরাগীরা। আজও অনেকে দিব্যার স্বামীকে দ্বায়ী করে।
১৯৯০ সালে দক্ষিণী ছবি দিয়ে শুরু করেছিলেন অভিনয়ের কেরিয়ার। এরপর বলিউডে কেরিয়ার শুরু হয় ১৯৯১ সাল থেকে। ১৯৯০ থেকে ৯৩ সাল পর্যন্ত চুটিয়ে অভিনয় করেন তিনি। দিব্যার মৃত্যুর ঠিক আগেই শুটিং শেষ হয়েছিল ‘রং’ ও ‘শতরঞ্জ’ ছবির। এবং তার মৃত্যুর পরেই মুক্তি পায় দুটি ছবি।
দিব্যার ক্যারিয়ার এতটাই দ্রুত গতিতে ছুটছিল যেখানে ১৯৯২ সালে নয় নয় করে ১২ টি মুভিতে অভিনয় করেছিলেন। এবং সেই বছরেই অর্থাৎ ১৯৯২ সালেই প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন দিব্যা ভারতী। যদিও সেই বিয়ে চুপি চুপিই করেছিলেন তিনি।
View this post on Instagram
দিব্যার মায়ের নাম মীতা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, কী ভাবে দিব্যা সাজিদ নাডিয়াডওয়ালাকে পছন্দ করতে শুরু করেছিলেন। ‘শোলা অওর শাভনামে’র সেটে প্রথম আলাপ উভঁয়ের মধ্যে। সেখানে গোবিন্দার সঙ্গে অন্য একটি সিনেমা সম্পর্কে আলোচনা করতে আসতেন সাজিদ। মীতার কথা অনুযায়ী, “গোবিন্দার ডেট পাওয়ার জন্য সাজিদ শোলা অওর শাভনামের সেটে যাতায়াত করতেন। সেখানেই দিব্যার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। সে দিনই দিব্যা আমাকে জিগ্যেস করেছিল, ‘মা সাজিদ সম্পর্কে তোমার কী ধারণা?’ আমি বলেছিলাম, ভালোই লাগে। কয়েক দিন পর সে আমাকে জিগ্যেস করেছিল যে, সে সাজিদকে বিয়ে করতে পারে কী না। তখন ওঁকে বলেছিলাম, তোমার বাবাকে এ সম্পর্কে জিগ্যেস কর। কিন্তু ওঁর বাবা এই বিয়ের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর নিজস্ব একটি ধারণা ছিল এবং দিব্যার চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধাচারণই করেছিলেন তিনি। ১৮ বছর হওয়ার পরই দিব্যা আমাকে জানায় যে, সে সাজিদকে বিয়ে করছে এবং সাক্ষী হিসেবে আমাকে চায়। আমি তাঁকে স্পষ্ট জানিয়েছিলাম, তাঁর বাবাকে না-জানালে আমিও সাক্ষী হিসেবে সাক্ষর করতে পারব না।”
View this post on Instagram
বিয়ের পরেও দিব্যা তাঁর মা বাবার সঙ্গেই থাকতেন কিন্তু কেউই জানতেন না যে দিব্যা বিয়ে করে নিয়েছেন সাজিদের সঙ্গে। মাত্র ১৮ পার হতেই বিয়ে। হাতে একাধিক সিনেমা। কিন্তু কিছুই ভোগ করতে পারেননি তিনি। লুকিয়ে বিয়ে করলেও বিয়ের মাত্র ১০ মাসের মাথায় প্রাণ হারান। আজও দিব্যার মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করা যায়নি। আসলে কেউ একবার চলে গেলে তার কাহিনী জানা আর সম্ভব নয়। যদি আজ বেঁচে থাকতেন তবে বলিউডে হয়তো দিব্যার হাত ধরে অনেক হিট সিনেমা দর্শকরা উপহার পেতেন।