সিনেজগতে নয়ের দশক থেকে একুশের দশক, নিজের অভিনয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন গোটা বলিউড। তিনি আর কেউ নন মাধুরী দীক্ষিত নেনে। তিনি যেন ‘এভারগ্রিন বিউটি’। নিজের রুপ আর সৌন্দর্য দিয়ে বড় পর্দা হোক বা টেলিদুনিয়া সব জায়গাতেই তাঁর অবাধ বিচরণ। এখনও অভিনেত্রীর হাসির ছটায় কাবু তরুণ আট থেকে আশি সকলেই।
এই মিষ্টি নায়িকা নাচ ও অভিনয় দক্ষতার জোরে নিজের একেবারে আলাদা পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন বলিউডে৷ ১৯৮৪ সালে পরিচালক হীরেন নাগ পরিচালিত হিন্দি ছবি ‘অবোধ’। তাপসের বিপরীতে নায়িকা মাধুরী দীক্ষিত। আর তাপস পালের সাথে বলিউডের সিনেমাজগতে পা রাখলেন নায়িকা। অবশ্য এই সিনেমা বক্স অফিসে কোনও ম্যাজিক দেখাতে পারেনি।
পরবর্তীকালে ১৯৮৮ সালে অনিল কাপুরের সাথে জুটি বেঁধে ‘তেজাব’ ছবিতে প্রধান নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন ধক ধক গার্ল। এ ছবিটিই তাকে খ্যাতির উচ্চতর আসনে বসায় ও প্রথমবারের মতো ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন পত্র পান। তারপরই অনীল কাপুরের সাথে একের পর এক হিট উপহার দেন বলিউডে এই নায়িকা। ‘রাম-লক্ষ্মণ’, ‘পরিন্দা’, ‘ত্রিদেব’, ‘কিশেন কানহাইয়া’, এবং ‘প্রহর’ সিনেমাতে অভিনয় করেন। ঐ ছবিগুলোয় একত্রে কাজ করার সাথে সাথে অনিল কাপুরের সাথে ভাল বন্ধুত্ব হয়।
এরপর মাধুরীকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বলিউডে ৭০ এর বেশী ছবি উপহার দিয়েছেন। হাম আপকে হে কউন, দিল তো পাগল হ্যা র সেই ভুবনমোহিনী হাসি আর রোম্যান্স এখনো দর্শক ভুলতে পারেনি। মাসে একবার এই সিনেমা দেখা চাই চাই। ২০০৮ সালে অভিনেত্রী পদ্মশ্রী পুরষ্কার নিজের জন্য অর্জন করে ফেললেন।
কিন্তু একদিন এমন সময় ছিল এই বলিউড কুইনের যেদিন তার কাছে বলিউডের এই রাস্তাটা ছিল বেশ কঠিন। আজ বলিউড যদি তাঁর কাছে গোলাপ ফুল হয় তাহলে ৯০ দশক ছিল তাঁর কাছে গোলাপের কাটা। কেরিয়ারের প্রথম ধাপে একের পর এক সিনেমা ফ্লপ হওয়াতে বলিউডে পাত্তা পাচ্ছিলেননা এই নায়িকা। দিনে দিনে হতাশায় ভুগতে থাকেন নায়িকা। তবে পুরোপুরি না ভেঙে পড়ে আবার মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ান নায়িকা। সিদ্ধান্ত নেন বলিউডের তাবড় অভিনেতাদের সাথে কাজ করবেন।
এরপর অভিনেত্রী ‘বাগদান’ ছবিতে সাহসী ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। সেই সময় সাহসী দৃশ্য তেমন কেউ অভিনয় করতেননা,কিন্তু অভিনেত্রীকে নিজের কেরিয়ারের জন্য বাধ্য হয়ে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়েছিল নায়িকাকে। এখানেই শেষ নয়,শেখর সুমন পরিচালিত এক বি গ্রেড সিনেমাতেও ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন ধক ধক গার্ল। এইভাবে একের পর এক ইন্টিমেট সুনে অভিনয় করতে লাগলেন অভিনেত্রী। অবশ্য কোনোটাই নিজের ইচ্ছায় করেনি।
এরপরই অভিনেত্রী বড় সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঠিক করলেন আর কোনো বড় ব্যানার ছাড়া তিনি আর সিনেমা করবেননা। এরপরই অভিনেত্রীর কাছে ‘পরিন্দা’ নামক একটি চলচ্চিত্রের অফার আসে সাহসী দৃশ্যের জন্য। তিনি পরিচালককে এই দৃশ্যে অভিনয় করতে না চাইলেও পরিচালক তাকে চরিত্রের কথা ভাবিয়ে শেষে চুম্বন দৃশ্যটি সফলভাবে করেন। অবশ্য এই সিনেমার হাত ধরেই প্রথমেই তিনি জাতীয় পুরষ্কার পান। অবশ্য মাধুরী এই সিনেমার থেকে অনেক শিক্ষা পেয়েছিলেন যা তাঁর পরবর্তী কর্ম জীবনে সফলতায় সাফল্য পেয়েছেন।
অবশ্য অভিনেত্রী দুই অভিনেতার কাছে হেনস্থা হয়েছিলেন। একবার না দুবার! দয়াবান’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময় এরকমই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন প্রথমে মাধুরী দীক্ষিত। ছবিটির জনপ্রিয় গান’ আজ ফির তুমপে পয়্যার আয়া হ্যায়’-র গানের শুটিং এর সময় বিনোদ খান্না মাধুরীর ঠোঁটে চুমুর দৃশ্য ছিল। পরিচালক ‘অ্যাকশন’ বলেছেন, শুরু হয়েছে শট। কিন্তু ‘ মাধুরীকে চুমু খেতে খেতে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি বিনোদ খান্না। কামড়ে দেন মাধুরীর ঠোঁটে। অবশ্য পরে বিনোদ মাধুরীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
দ্বিতীয়বার ‘প্রেম প্রতিজ্ঞা’ ছবিতে একটি ধর্ষণের দৃশ্য ছিল। দৃশ্যটা শ্যুট করার সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি রঞ্জিৎ। সেবারে অভিনয় করতে খুব ভয় পেয়েছিলেন মাধুরী। রঞ্জিৎকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, যেন তাঁকে আর কখনও না ছোঁয়। তারপর আর এদের স্ক্রিনশেয়ার করতে দেখা যায়নি। এই সব অভিজ্ঞতা নিয়ে থেমে থাকেননি অভিনেত্রী। এখন তিনি দাপটের সাথে ৫৩ বছর বয়সে অভিনয় করে চলেছেন।