whatsapp channel

এক বছরেও হল না কোনো মীমাংসা, সুশান্ত মামলার ভবিষ্যৎ আজ কোথায় দাঁড়িয়ে!

আর পূর্ণ হল বলিউডের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় নক্ষত্র সুশান্ত সিং রাজপুত (sushant singh Rajput)-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। সুশান্তের মৃত্যু বলিউডকে একপ্রকার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সুশান্তের মৃত্যুর তদন্ত এই মুহূর্তে রয়েছে সিবিআই-এর…

Avatar

HoopHaap Digital Media

আর পূর্ণ হল বলিউডের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় নক্ষত্র সুশান্ত সিং রাজপুত (sushant singh Rajput)-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। সুশান্তের মৃত্যু বলিউডকে একপ্রকার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সুশান্তের মৃত্যুর তদন্ত এই মুহূর্তে রয়েছে সিবিআই-এর হাতে। সুশান্ত চলে যাওয়ার পর সত্যিই কি তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে?

2020 সালের 14 ই জুন মুম্বইয়ের বান্দ্রায় বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। কুপার হাসপাতালে সুশান্তের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করে জানা যায়, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। ইতিমধ্যেই সুশান্তের মৃতদেহের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। সুশান্তের পরিবার ও অনুরাগীরা তাঁর দেহে অনেকগুলি আঘাতের চিহ্ন লক্ষ্য করেছিলেন যাতে অনায়াসেই বোঝা যাচ্ছিল, সুশান্তকে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছিল। সুশান্তের ফ্ল্যাটের পরিচারকরা জানিয়েছেন, তাঁরা সেদিন সকালে শেষবারের মত সুশান্তকে পমেগ্রেনেট জুসের গ্লাস হাতে দরজা বন্ধ করে দিতে দেখেন। এরপর তাঁরা সুশান্তকে ডেকেও সাড়া পাননি। পরে বেলার দিকে সুশান্তের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সুশান্ত গলায় বেডকভারের ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।

এবার আসা যাক সুশান্তের মৃত্যু ঘিরে ওঠা কিছু প্রশ্নে। সুশান্ত যথেষ্ট লম্বা ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। নিয়মিত জিম করে মাসল তৈরী করা সুশান্তের দেহের ভার কি কোনো বেডকভারের পক্ষে বহন করা সম্ভব? সুশান্তের শরীরে আঘাতের চিহ্নের উল্লেখ কেন ছিল না কুপার হাসপাতালে তৈরী পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে? সুশান্ত যে ফ্ল্যাটে থাকতেন তা ছিল যথেষ্ট পশ এলাকার বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। এই ধরনের ফ্ল্যাটে নামী তারকারা থাকেন এবং ফ্ল্যাটগুলি সিসিটিভি ক্যামেরার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া থাকে। অথচ সুশান্তের মৃত্যুর আটচল্লিশ ঘন্টা আগে সিসিটিভি খারাপ হয়ে গিয়েছিল এবং তা সারানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি,এই কথা কি বিশ্বাসযোগ্য? যদি সত্যিই এই ঘটনা ঘটে তাহলে এই বিলাসবহুল আবাসনের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু সিসিটিভি খারাপ হয়েছিল না খারাপ করে দেওয়া হয়েছিল? সুশান্তের মৃত্যুর পর পুলিশ এসে তাঁর প্রাণহীন মৃতদেহ উদ্ধার করে। অথচ যে অ্যাম্বুল্যান্স ড্রাইভার সুশান্তের মৃতদেহ কুপার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর বয়ান অনুযায়ী, সুশান্তের শ্বাসপ্রশ্বাস অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছিল। এমনকি তাঁর সারা দেহ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল যা তাঁর মৃতদেহের ছবিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু ভয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ড্রাইভার একথা কাউকে জানাননি। তাহলে সুশান্তের ফ্ল্যাট নয়, কুপার হাসপাতালই কি সুশান্তের মৃত্যুস্থল? সুশান্তের বাড়ির সমস্ত পরিচারক নতুন ছিলেন যাঁদের নিয়োগ করেছিলেন সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী (Rhea Chakraborty)। রিয়াই সুশান্তের জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছিলেন। এমনকি রিয়ার চাপেই সিদ্ধার্থ পিঠানি (sidhdharth pithani)-কে নিজের ফ্ল্যাটমেট হিসাবে থাকতে দিয়েছিলেন সুশান্ত। মৃত্যুর কিছুদিন আগে সুশান্তের ইলিউশন শুরু হয়েছিল। সুশান্ত তাঁর চারপাশে মৃত আত্মীয়স্বজনদের দেখতে পেতেন। এই ঘটনার কথা রিয়াকে তিনি বলেছিলেন। এমনকি তাঁর আগের ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়ার কারণ এই ইলিউশন ছিল। তাহলে কি সুশান্তের খাদ্য বা পানীয়তে এমন কিছু ওষুধ মেশানো হত যাতে সুশান্তের ইলিউশন হয় এবং সুশান্ত তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান! সুশান্তকে ড্রাগের নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলেন রিয়া। সুশান্তের ফার্মহাউসে রীতিমতো ড্রাগ পার্টি চলত। সুশান্ত এর থেকে বেরোতে চেয়েছিলেন বলেই কি তাঁকে প্রাণ দিতে হল?

কিছুদিন আগে গ্রেফতার হয়েছেন সিদ্ধার্থ পিঠানি। তাঁর বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। সিদ্ধার্থ প্রথমে বলেছিলেন একটি ঘরোয়া পার্টি চলছিল। সেখানে সিদ্ধার্থ ও আরও কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন সুশান্ত। এরপর তিনি নিজের ঘরে চলে যান। কিছুক্ষণ পরে তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু পরে সিদ্ধার্থ তাঁর বয়ান বদলানোর ফলে পুলিশ তাঁকে সন্দেহ করতে শুরু করে। সুশান্তের মৃত্যুর সময় নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। তদন্তকারী অফিসারদের একাংশের মতে, সুশান্তের মৃত্যু 14 ই জুন সকালে নয়, 13 ই জুন রাতে হয়েছে।

নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব‍্যুরো বা এনসিবির জালে ধরা পড়েছেন বলিউডের নামী সহকারী পরিচালক হৃষিকেশ পাওয়ার (Hrishikesh power)। 2 রা ফেব্রুয়ারি সকালে এনসিবির তদন্তকারী অফিসাররা হৃষিকেশকে আটক করেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়। এনসিবি সূত্রে জানা গেছে, হৃষিকেশ সুশান্তের বন্ধু ছিলেন। হৃষিকেশের বাড়িতে একাধিক ইলেকট্রনিক গ‍্যাজেট পাওয়া গেছে যেগুলিতে রয়েছে সন্দেহজনক তথ্য। হৃষিকেশের মোবাইল ফোন ও পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করেছে এনসিবি।

সুশান্তের মৃত্যুর পর সুশান্তের দিদি শ্বেতা (sweta singh kirti) সুশান্তের নিজের হাতে লেখা একটি চিঠি শেয়ার করেছিলেন ইন্সটাগ্রামে । সুশান্তের এই চিঠিটি নিজেকে উদ্দেশ্য করে লেখা একটি চিঠি। চিঠিতে নিজের উদ্দেশ্যে মুক্তাক্ষরে সুশান্ত লিখেছেন, তাঁর তিরিশ বছরের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কিছু হয়ে ওঠার জন্য ব্যয় করেছিলেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, টেনিস ও স্কুলের রেজাল্ট তিনি বরাবর ভালো করতে চাইতেন।

কিন্তু চিঠির কয়েকটি লাইন প্রশ্ন জাগাচ্ছে সুশান্ত-অনুরাগীদের মধ্যে। সুশান্ত লিখেছেন, তাঁর বর্তমান অবস্থান ঠিক নেই। তিনি লিখেছেন, তাঁর খেলাটা ভুল ছিল। আসলে তিনি বুঝতে পারেননি, নিজেকে খোঁজাটা ছিল আসল খেলা। সুশান্তের চিঠির এই কয়েকটি লাইন থেকে মনে হচ্ছে, তিনি কোনো জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন। যদি তিনি সত্যিই আত্মঘাতী হয়ে থাকেন তাহলে তা জাল থেকে বেরোনোর উপায় না দেখেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এমনও হতে পারে, যদি সুশান্ত সত্যিই আত্মঘাতী হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে হয়তো বাধ‍্য হয়ে এই কাজ করতে হয়েছে। বিভিন্ন মহিলাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সম্পর্কে জড়িয়েছেন সুশান্ত। কিন্তু বলিউডের রাজনীতি ও চোরাগোপ্তা মাদকচক্রের সঙ্গে তিনি যে এভাবে জড়িয়ে যাবেন, তা তিনি ভাবতেও পারেননি। তিনি যদি আত্মহত্যা না করতেন, তাহলে হয়তো আরো খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছিল তাঁর জন্য।

কুপার হসপিটালে তাঁর প্রাথমিক পোস্টমর্টেম রিপোর্টে আত্নহত‍্যার তত্ত্ব উঠে এলেও তাঁর পরিবার মানতে পারেননি। সুশান্তের পরিবারের দাবিতে এবং বিজেপির রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে মুম্বই পুলিশ সুশান্তের মৃত্যুর তদন্তভার সমর্পণ করে সিবিআই-কে। সুশান্তের দ্বিতীয় পোস্টমর্টেমের দায়িত্ব দেওয়া হয় দিল্লীর এইমস-কে। কিন্তু কয়েক মাস আগে এইমস ও সিবিআই-এর তরফে জানানো হয়, সুশান্তের দ্বিতীয় পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও দেখা যাচ্ছে, সুশান্ত আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু সুশান্তের পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা জানান, সুশান্তের পোস্টমর্টেম রিপোর্টকে প্রভাবিত করা হচ্ছে।

সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুরহস্যের হাত ধরেই উন্মোচিত হয়েছে বলিউডের চোরাগোপ্তা মাদকচক্র। সিবিআই-এর মতে, এই মাদকচক্রের চাঁই একজন নামী সুপারমডেল। নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো বা এনসিবি গ্রেফতার করেছিল সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া ও তাঁর ভাই সৌভিক চক্রবর্তী (souvik Chakraborty)- কে। 28 দিন জেলে কাটানোর পর রিয়া আপাতত জামিনে মুক্ত হলেও তাঁকে প্রতিদিন থানায় হাজিরা দিতে আদেশ দিয়েছে আদালত। আদালত জানিয়েছে, রিয়া মুম্বইয়ের বাইরে কোথাও যেতে পারবেন না। কিছুদিন আগে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন রিয়ার ভাই সৌভিকও। এছাড়াও বলিউডের রথী-মহারথীদের জেরা করা হচ্ছে। নজরে রয়েছেন করণ জোহর (karan johar)ও মহেশ ভাট(Mahesh Bhatt)-এর মত সেলিব্রিটি। সারা আলি খান (sara ali khan) ও শ্রদ্ধা কাপুর(sradhdha Kapoor)-এর মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে এনসিবি। জেরা করা হয়েছে অর্জুন রামপাল (Arjun Rampal) ও তাঁর বান্ধবীকে। কিছুদিন আগেই সুশান্তের ফ্ল্যাটের পরিচারকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এনসিবির অফিসাররা।

অপরদিকে সিবিআই অফিসার নুপুর প্রসাদ (Nupur prasad)-এর একটি চিঠি টুইটারে পোস্ট করেছেন বিজেপি নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী (subbrambhanyam swami)। চিঠিতে নুপুর প্রসাদ জানিয়েছেন, সিবিআই বৈজ্ঞানিক কৌশল ও উন্নত মানের ফরেন্সিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিখুঁত ও পেশাদারিত্ব-এর সঙ্গে তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্ত এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এই কারণে সিবিআই কোনো সম্ভাবনাকে খারিজ করছে না।

whatsapp logo
Avatar
HoopHaap Digital Media