সংসার সামলে ডেইলি কিচেন করে প্রতিষ্ঠিত কোন্নগরের ৩ গৃহবধূ, রয়েছে রকমারি পদের সম্ভার
সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নারীদের একটা ভূমিকা রয়েছে। এক সময় নারীরা শুধু রান্না ঘরে বসে রান্না করতেন আর সন্তানের জন্ম দিতেন। রান্নাঘরের তেলচিটে পড়ে যাওয়া ঘরটাতেই উনুনের তাপে সারাজীবন কেটে যেত। ভালো লাগা, খারাপ লাগা সমস্ত কিছুই স্বামী, সন্তানকে ঘিরেই ছিল। কিন্তু এখন যুগ পাল্টেছে, পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারীরাও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে ক্রমশ। আজ শোনাবো কোন্নগরের বাসিন্দা তিনজন গৃহবধূর কথা। যারা এই রান্নাঘরকেই তাদের রোজগারের একমাত্র জায়গা করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিন থেকে শুরু হয় এই তিনজন গৃহবধূর ডেইলি কিচেন এর মাধ্যমে পথ চলা। স্বামীরা সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে এই রকম একটা ভাবনাচিন্তা নিয়েই একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া। ডেলি কিচেন এর নাম দেন ‘পাঁচফোড়ন’। রান্নার কাজে পাঁচফোড়ন অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মশলা। কিন্তু শুধুমাত্র মশলার নামের জন্যই নয়, এই তিন গৃহবধূ ঘর আলো করে রয়েছে ৫ জন সন্তান। এই পাঁচজনের কথা মাথায় রেখেও তাদের এমন অভিনব নামকরণ।
কাকলী গাঙ্গুলী (সম্পা- 9433137260) ঝিনুক চৌধুরী (মিঠু-8583048019), বীথিকা চ্যাটার্জী (বুলা-9874471209) এই তিনজন গৃহবধূর হলেন পাঁচফোড়ন এর মূল কর্ত্রী। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম দিক থেকে শুরু হয় একটু একটু করে ভাবনা চিন্তা। ভাবনাচিন্তাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন এই তিনজন গৃহবধূর স্বামীরা। মানসিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে দুই দিক থেকেই স্ত্রী এর পাশে তারা সমানভাবে থেকেছেন। এই ভাবেই শুরু হয় তিনজনের পথ চলা। প্রত্যেকেই নিজের জমানো টাকা থেকে ৮০০০ টাকা করে মোট ২৪,০০০ টাকা দিয়ে শুরু হয় ডেইলি কিচেন এর ব্যবসা।
প্রথম দিনেই চেনা পরিচিত আত্মীয়স্বজন এবং অনেক অচেনা মুখও তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে খাবার নিয়ে আপ্লুত হয়ে ছিলেন। খাবারের মান নিয়ে এরা কোন দিনই আপোষ করেননি। বাঙালি খাবার থেকে মোগলাই খানা সমস্ত কিছুই পাওয়া যায় তাদের রান্নাঘরে। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় মাছ, মুরগির মাংস, পাঁঠার মাংস, ডিম এর ঝোল, নিরামিষের দিনে রয়েছে ডাল, সুক্ত, তরকারি আরো কত কি। দু’বছর ধরে মানুষের মনে এতটাই জায়গা করে নিয়েছে যে করোনাভাইরাসের আবহে যখন সমস্ত কিছু স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল তখনো অনেক কাস্টোমাররাই তাদেরকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন যে তারা যেন এই ডেলি কিচেন বন্ধ না করেন।
মান্থলি কাস্টমার এর পাশাপাশি ছোটখাটো অনুষ্ঠানেও এরা প্রায় ১০০ জনের খাবার পরিবেশন করে থাকেন। কোন বিশেষ দিনে অর্থাৎ জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী কিংবা শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে অর্ডার থাকলে এনারা চেষ্টা করেন অনুষ্ঠান হিসাবে খাবারের সঙ্গে উপহার যেমন জন্মদিনে নিজেদের বানানো কেক, বিবাহ বার্ষিকীতে মিষ্টি, অথবা শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ফুল, মালা মিষ্টি, নিজেদের তরফ থেকে পাঠাতে। এছাড়াও পিঠে পুলি উৎসব, জন্মদিনের কেক, অথবা কাপকেক, ফ্রুট কেক সবকিছুই একেবারে দোকানের মতন বানিয়ে আপনার মুখের সামনে হাজির করবে।
কোন্নগরে রান্না হলেও এনাদের রান্না পৌঁছে যায় উত্তরপাড়া থেকে শ্রীরামপুর অব্দি সর্বত্র। এই তিনজনকে সাহায্য করার জন্য রয়েছেন তুষার (ডেলিভারি বয়), বর্ণালী, রমা, টুসি এবং বৃদ্ধা মহিলা সীমা মাসি।স্বামী, সন্তান, সংসার সামলেও পাঁচফোড়ন ও তাদের তিনজনের একটি আলাদা সংসার হয়ে উঠেছে। যে সমস্ত নারীরা ঘরে বসে ভাবছেন কি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়, তাদের জন্য এই তিনজন গৃহবধূ আদর্শ হতে পারেন।