পেটের দায়ে নবদ্বীপ থেকে চন্দননগর আসেন পিনাকী, ‘ডিস্কো ডান্স’ নেচে বিক্রি করেন সুস্বাদু ঘটিগরম
ছোটবেলা থেকেই হাত-পা নাড়িয়ে নাচের শখ ছিল কিন্তু জীবন তাকে টেনে নিয়ে গেছে অন্য জায়গায়। জীবন-জীবিকার তাগিদে নবদ্বীপ থেকে প্রতিদিন চন্দননগরে এসে ঘটিগরম বিক্রি করতে হয় পিনাকী মন্ডলকে। সকাল এগারোটা সাড়ে এগারোটার সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্রেন ধরে চন্দননগরে আসেন। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বেজে যায়। এইভাবে প্রতিদিন পরিশ্রম করে চলেছেন পিনাকী বাবু।
তবে তার ঘটিগরম বিক্রি টা একটু অন্যরকম ছোটবেলা থেকে যেহেতু নাচের শখ ছিল তাই ঘটিগরম তৈরীর মধ্যে দিয়ে তিনি তার নেশাকেও একটু ঝালিয়ে নেন। মানে নেশা আর পেশা কোথাও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। চন্দননগরের যারা বাসিন্দা আছেন কিংবা যারা দূর-দূরান্ত থেকে বিকেলবেলা গঙ্গার হাওয়া খেতে চন্দননগর স্ট্যান্ড এ যান তাঁরা এই মানুষটির সঙ্গে পরিচিত কিন্তু যারা জানেননা তারা এই মানুষটির কার্যকলাপ দেখতে একবার ঘুরে আসতেই পারেন চন্দননগর স্ট্যান্ডে।
গ্লাসের মধ্যে ঘটিগরমের উপাদান মেখে নিয়ে দূরে আকাশে ছুঁড়ে দিচ্ছে গ্লাসটি। তারপর হাতের নানান রকম কায়দা করে দিব্যি বলের ক্যাচ ধরার মতো ধরে নিচ্ছেন ঘটিগরম এর গ্লাস। আর ব্যাস একেবারেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে গরমাগরম ঘটিগরম। এনাকে দেখলে আপনার হয়তো মনে হতে পারে ঘটিগরম হাতে স্বয়ং মাইকেল জ্যাকসন এসে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
লকডাউন এর সময় ঠায় বাড়িতে বসে কাটিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় বিক্রি প্রায় বন্ধই ছিল। তবে এখন আবার সব আগের মত স্বাভাবিক রয়েছে। বিয়ে বাড়িতে অর্ডার নিয়ে ঘটিগরম বিক্রি করেন তিনি। রয়েছে নিজস্ব কার্ড। কার্ডের মধ্যে পরিষ্কার লেখা রয়েছে ‘রামকৃষ্ণ ঘটিগরম’, নাম পিনাকী মন্ডল, ঠিকানা- ফরেস্টডাঙ্গা, নবদ্বীপ, নদীয়া, ফোন নম্বর – 7551011473.
তাই আর সাত-পাঁচ না ভেবে যদি চন্দননগরের কাছেপিঠে থেকে থাকেন তো একবার বিকালের দিকে ঘুরে আসতে পারেন চন্দননগর স্ট্যান্ড। সেখানে গেলে অবশ্যই দেখা মিলবে এই ডিসকো ড্যানসার ঘটিগরম বিক্রেতা পিনাকী বাবুর। একবার গিয়ে চাক্ষুষ করে আসতেই পারেন তার কায়দা কানুন। ঘটিগরম খেতে খেতে তার অসাধারণ নাচ আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য আনন্দ দেবে একথা বলাই বাহুল্য। তার কাছে দু’রকমের ঘটিগরম পাওয়া যায়।
এত কায়দা করে তিনি যে ঘটিগরমটি বানান সেটি হলো সাধারণ। আসলে এই নাচ এতই অসাধারণ তাই ঘটিগরম অতটা ভালো হয় না। কিন্তু আপনি যদি তাকে বলেন এত কায়দা না দেখে তিনি তার হাতের অসাধারণ ঘটিগরম খাবেন, তাও তিনি নিমেষের মধ্যে বানিয়ে দিতে পারবেন। তাই আর ভাবনা চিন্তা না করে পরিবারের সঙ্গে অথবা মনের মানুষের সঙ্গে একবার ঘুরে এসে নিজের চোখেই দেখে আসুন পিনাকী বাবুর কান্ড কারখানা।