whatsapp channel

আজকের গল্প: ক্রিসমাসের ছুটিতে ভূটান অ্যাডভেঞ্চার

এবার শীত জমানোর জন্য কোথায় যাওয়া যায় ভাবতেই মনে এল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অনিন্দ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর লীলাভূমি ভূটানের নাম। প্রথমে অবশ্য ভূটানের নামটা সাজেস্ট করলো অনিকেত। দক্ষিণ এশিয়ায় হিমালয়ের কোলে…

Avatar

HoopHaap Digital Media

Advertisements
Advertisements

এবার শীত জমানোর জন্য কোথায় যাওয়া যায় ভাবতেই মনে এল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অনিন্দ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর লীলাভূমি ভূটানের নাম। প্রথমে অবশ্য ভূটানের নামটা সাজেস্ট করলো অনিকেত। দক্ষিণ এশিয়ায় হিমালয়ের কোলে বেড়ে ওঠা হাস্যজ্জ্বল ও ক্ষুদ্রতম দেশ হল ভূটান। জনসংখ্যা ধরতে গেলে মাত্র ছ লক্ষের দেশ। পৃথিবীর একমাত্র জিরো কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত দেশ; সর্বোপরি পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে সংবিধানে ৬০ শতাংশ বনভূমি সংরক্ষণের কথা উল্লেখিত। তো নানা বৈশিষ্ট্য আর বিচিত্রতায় ভরপুর এই দেশটি ঘুরতে যাওয়ার জন্য এক কথায় খুবই আকর্ষণীয়! অনিকেত এই ভাবতে ভাবতে গার্গীকে বললো, “এই বছরের ক্রিস্টমাস টা ভূটানের পাহাড়ে সেলিব্রেট করলে কেমন হয় গিন্নি?” গার্গীও সম্মতি জানালো। অবশ্য এই স্বামী-স্ত্রী এর আগে ভারতের বেশ কিছু জায়গা ঘুরে নিয়েছে। অনিকেত মনে মনে ভাবলো এবার একটু ভিন্ন ভাবে ঘুরতে যাওয়াতে বেশ মজা হবে।

Advertisements

তাই ব্যাস! যেই ভাবা সেই কাজ। অনিকেত আর গার্গীর যাত্রার সময়কাল ঝটপটে ধার্য হল তেইশ ডিসেম্বর ২০১৯। সাহসিকতা দেখাতে হল বড়, কারণ এই ডিসেম্বর মাসে ভূটান, বাপ রে বাপ! যাই হোক, এবার পালা প্রস্তুতির। এয়ার টিকিট করা হল ড্রুক এয়ারের রিচার্ণসহ। ফিরতি সময় সাতাশে ডিসেম্বর। মানে দাঁড়াল আমাদের মোট সফর সময়কাল চারদিনের। কোথাও যাবার আগে অনিকেতের অভ্যাস জায়গাটা সম্পর্কে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করা, ভূটানও তার ব্যতিক্রম নয়। রিসার্চ ভালো করে করা থাকলে তাদের ঘুরতে একটু সুবিধা হয়। যাইহোক, ইউটিউব তো আছে সকলের স্মার্টফোন। স্মার্টফোন বের করে ইন্টারনেটের আর্শীবাদে এখন তো কোন কিছুই আর অসম্ভব নয় একেবারেই। হাঁতের আঙুলের অনুসন্ধানী ছোঁয়াতে গন্তব্য স্থলের বিভিন্ন জায়গা গুলো যেন বাস্তবেই ম্যাজিক বক্সের মত সামনে উন্মোচিত হতে লাগল অনিকেতের সামনে। আর এতেই আবিষ্কার করে নিলো অনিকেত ও গার্গীর এবারকার ভ্রমণ সিরিজের প্রথম চমক! পারো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট।

Advertisements

পারো ইন্টারনেট এয়ারপোর্ট পৃথিবীর খুবই বিপদজনক একটি এয়ারপোর্ট। যাতে বিমান টেক অফ আর ল্যান্ডিং করার জন্য বৈমানিকদের বেশ বেগ পেতে হয়। এই এয়ারপোর্টের চারদিকে পাহাড়ের বেষ্ঠনী থাকাতে এখানে প্লেন অবতরণের সময় বিমানকে নানাভাবে বাঁক নিতে হয়। এমনকি কোন একসময় পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলেও ঘুরতে হয়। ইন্টারনেটভ ঘেঁটে অনিকেত জানতে পারলো গোটা পৃথিবীর মাঝে তালিকাভুক্ত মাত্র আট জন নাকি বৈমানিক এই বিমানবন্দরে বিমান পরিচালনা করতে পারেন। আর এটির জন্য তাদের বেশ স্পেশাল একটা প্রশিক্ষণ করতে হয়। তো গিন্নি কি বুঝলে? গার্গী কিছুক্ষণ থেমে বলেই উঠলো সবই বুঝলাম …এবারের ক্রিস্টমাস যাত্রার শুরুটাই হচ্ছে বেশ রোমাঞ্চে ভরা! ইশ! উত্তেজনায় তখনই অস্থির লাগতে শুরু করল, মনে মনে কাউন্ট ডাউন শুরু করলাম বেশ জোড়েসোড়ে।

Advertisements

সময়কাল তেইশে ডিসেম্বর। দমদম এয়ারপোর্টে স্বামী-স্ত্রী বসে আছে। ইমিগ্রেশন শেষ, জানালার বাইরে দিয়ে কাতার এয়ারলাইন্সের ইয়া বড় উইংস সূর্যের আলোতে জ্বলে জ্বল করে উঠছে। যাহোক, কিছুক্ষণ পর অনিকেত ও গার্গী অগ্রসর হল ড্রুক এয়ারলাইন্সের দিকে। যতই এরা এগুচ্ছিলো বুকের মাঝে ততই হৃদস্পন্দন ঢকঢক করছিল। উৎসুক চোখ চারদিক চষে বেড়াচ্ছিল তখনই সামনে রয়াল ড্রুক!! আসন যখন গ্রহণ করছে তখন দুপুর বারোটা গড়িয়ে সময় বেশ এগিয়ে গেছে। ফ্লাইট টাইম ছিল দুপুর একটা পঁয়তাল্লিশ! সীটে বসে ওরা সীট বেল্ট বেঁধে নিচ্ছিলো। বিমানের স্টাফরা সেইফটি ইন্সট্রাকশান দিয়ে যাচ্ছিল বেশ সুন্দর করে। অবশেষে ঘড়ির কাঁটা ঘুরল। নির্ধারিত সময়ে প্লেন রানওয়ে দিয়ে ছোটা শুরু করল বেশ ক্ষিপ্রগতিতে এবং একসময় উড়ান পঙ্খী মেলল ডানা আকাশে। নীচের দৃশ্যপট বদলে এই জুটি উড়ে চললো মেঘ সম্রাজ্যের প্রাচীর ফুঁড়ে দূরদেশের সন্ধানে। চারপাশে নরম সাদা মেঘ বালিকাদের ছুটোছুটি যেন মন প্রাণ ভরে দিচ্ছিল। গার্গীর আসন ছিল বাম উইন্ডো সাইডে আর তার পাশে ছিল অনিকেত। প্রায় তিরিশ মিনিটের ওপর হলো উড়ে চলেছি এরই মাঝে হাল্কা স্ন্যাকস আর রসালো ফ্রুট জুসের আপ্যায়ন করলো প্লেনের রূপসীরা। উপরে মনিটরে দেখাচ্ছিল কলকাতা টু পারো ডিরেকশানগাঁথা। গন্তব্যের প্রায় কাছাকাছি আমরা ধরতে গেলে, যাই হোক চোখ পড়ে আচমকা জানালা গলে ধবধবে সাদা বরফচূড়াতে, এ কি শিল্প নাকি কাব্য! কি মর্ত্যলোক! না কি স্বর্গলোক! এও কি সম্ভব? দুচোখ যেন চরম ভাবে তার দৃষ্টি সার্থক করে নিল। এ যে হিমালয়, এত হাজার হাজার ফিট ওপরে আলাউদ্দিনের সেই জাদুর কার্পেটের মাঝে বসে যেন, অনিকেত ও গার্গী এখন চরম রূপকথার কল্পরাজ্যেই সশরীরে প্রবেশ করছেন রহস্য রসের জাদুর ছড়ির ঘূর্ণির জাদু দেখতে পাচ্ছিলো এরা। দুধেল সাদা হিমালয় পরিবেষ্ঠিত শ্বেত শুভ্র মেঘের দলের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। অনিকেত মনে মনে ভাবছে এ যেন সেই স্বপ্নীল ক্ষণ যা এবার বাস্তব আর কল্পনা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।

Advertisements

এই সময় এদের ভাবনার রাজ্যে ছেদ পড়ল আচমকা। আশেপাশের সবার চিৎকার কানে আসতে লাগল। এ ভয় প্রাণের ভয়। অনিকেত ও গার্গীর মনে হল তারা যেন শূণ্যে লাফিয়ে বেড়াচ্ছেন, গার্গী ভয়ে বলে উঠলো, কি হচ্ছে কি? ওহ! আর তক্ষুনি অনিকেত বলে উঠলো, কিছু না বই!আমরা এখন ড্রুক এয়ারের সাথে সেই ভয়ংকর ল্যান্ডিং করার মুহুর্তের সাক্ষী হতে যাচ্ছি। বাবা রে! বিমান তো মনে হচ্ছে সুতো কাটা ঘুড়ির মত টাল খেতে শুরু করেছে, অনিকেত নাস্তিক তাই সে কোনো প্রার্থনা করেনি। অন্যদিকে গার্গী মনে মনে যত রকম ঠাকুর আছে তাদের স্মরণ করতে শুরু করলাম। পুরো বিমানের যাত্রীরা ভয়ে শরগোল বাঁধিয়ে দিয়েছে। লাউড স্পীকারে অর্ডার দেওয়া হল সকলকে সেফটি বেল্ট বেঁধে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হল। কতক্ষণ হুটোপুটির পর বিমান আবার শান্ত সমান্তরাল পথে চলতে শুরু করে। হ্যাঁ, ভয়ের সময় শেষ। এই সময় অনিকেত মনে মনে ভাবলো, ভয় লাগলেও সত্যি বলতে কি থ্রিলিং অনুভূতিও কম বোধ হচ্ছিল না। যাকে বলে ভয় আর থ্রিলারের জয়ন্ট কম্বোপ্যাক! অন্যদিকে গার্গী মনে মনে ভাবলো, এবারের মতো খুব জোড় বাঁচলাম। এবারে জানালা দিয়ে নীচে ভূটান সম্রাজ্যের সবুজ কার্পেট মোড়ানো পাহাড় শৃঙ্গ চোখে পড়ছে। বিমানে বেজে চলেছে ভূটানের সফট ট্র্যাডিশনাল মিউজিক এবং অল্প সময়ের মাঝেই অনিকেত ও গার্গীর ড্রুক তার পদচিহ্ণ এঁকে নিল পাহাড় দেবীর কোলে আশ্রিত অপরূপ অনিন্দ্য সুন্দর দেশ ভূটানের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পারোর বুকে।

এই বিমানবন্দরই পারো শহর থেকে ৬ কিমি দূরত্বে স্বচ্ছ কলতানে মুখরিত পারো নদীর তীরে অবস্থিত। এর আশেপাশের পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ৫,৫০০ মিটার। এই বিমানবন্দরটির সমস্ত কার্যক্রম দিনের বেলার পরিস্কার আবহাওয়াতে পরিচালিত হয় এবং এটি সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এখানকার কাজকর্ম চলতে থাকে। বিমান থেকে অনিকেত যখন নামল তখন আবহাওয়া বেশ খেশমেজাজে ছিল। ঝকঝকে হাস্ব্যজ্জ্বল আত্মবিশ্বাসী তরুণের মতই প্রত্যয়ী মনোভাব জানান দিচ্ছিল প্রকৃতি। সেই সাথে হাঁড়কাঁপানো বাতাসের শাষানিটাও যেন তাদের শরীরে জড়িয়ে থাকা শীত বস্ত্রের মোটা আবরণকে লজ্জায় ফেলে দিতে শুরু করলো। সে যাই হোক শীতকে ভুলে এই কাপল ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে বেজায় ব্যস্ততাকে। এরপর বাইরে বেরিয়ে হোটেলে যাওয়া হল। ক্রিস্টমাসের দিন হিমালয়ের কোলে সেলিব্রেট করলো গার্গী আর অনিকেত। এরা এখানকার মনোরম অনেক স্মৃতি নিয়ে ফিরলো ২৭ শে ডিসেম্বর কলকাতা। ফিরে এসে অনিকেত ডায়েরিতে লিখে রাখলেন তারিখ দিয়ে। জীবনে যাই ভুলি ড্রাক এয়ারপোর্টে সেই উড়ানের ভ্রমণ ভুলতে পারবোনা।[সমাপ্ত]

গল্প: অর্পিতা বসু
পোস্টার ডিজাইন: কৌশিক ব্যানার্জি

(গল্প কেমন লাগল জানাতে অবশ্যই ভুলবেন না। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন।
***এবার থেকে গল্প পাঠাতে পারেন আপনিও। আপনার লেখা গল্প সরাসরি পাঠিয়ে দিন আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। মৌলিক ও অপ্রকাশিত গল্প সর্বদা গ্রহণযোগ্য হবে। গল্প নির্বাচিত হলে অবশ্যই প্রকাশিত করা হবে প্রতি শনি ও রবিবার।***)

whatsapp logo
Advertisements
Avatar
HoopHaap Digital Media