বর্তমানে হাওড়ার নারায়ণা সুপারস্পেশালিটি হসপিটালে নিউরো-সার্জন ডঃ নিলয় বিশ্বাস (Niloy Biswas)-এর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)। ভেন্টিলেশনে রয়েছেন তিনি। বুধবার মধ্যরাতে একবার চোখ খুলেছিলেন ঐন্দ্রিলা। বাঁ হাতের আঙুল নাড়াতে পারছেন তিনি। অস্ত্রোপচারের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর জ্ঞান ফিরলেও আটচল্লিশ থেকে বাহাত্তর ঘন্টা না কাটলে চিকিৎসকরা কিছু বলতে নারাজ।
পরপর দুইবার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। প্রথমবার স্কুলে পড়াকালীন 2015 সালে ঐন্দ্রিলার শরীরে অস্থিমজ্জার ক্যান্সার ধরা পড়ে। দিল্লিতে তাঁর চিকিৎসা হয়েছিল। একের পর এক কেমোথেরাপির মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছিলেন ঐন্দ্রিলা। এরপর পড়াশোনা সম্পূর্ণ করার পাশাপাশি সিরিয়ালে অভিনয় শুরু করেন তিনি। 2021 সালে ‘জীয়নকাঠি’ সিরিয়ালে অভিনয়ের সময় ঐন্দ্রিলার ডানদিকের ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে। আবারও শুরু হয় কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন। অবশেষে সুস্থ হয়ে আবারও ফিরে এসেছিলেন ঐন্দ্রিলা। কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে হঠাৎই তাঁর ডান হাত অসাড় হয়ে যায়। ঐন্দ্রিলার মায়ের বক্তব্য অনুসারে, মাত্র পনের-কুড়ি মিনিটের মধ্যেই পুরো শরীর প্যারালাইজড হয়ে গিয়ে শুরু হয় বমি। তৎক্ষণাৎ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা করে জানা যায়, ঐন্দ্রিলার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচারের পর কোমায় চলে যান ঐন্দ্রিলা। বর্তমানে তিনি আইসিইউ-তে রয়েছেন।
কিন্তু ঐন্দ্রিলার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে, ক্যান্সারই কি তাঁর স্ট্রোকের মূল কারণ! ক্যান্সার সার্জন ডঃ গৌতম মুখোপাধ্যায় (Gautam Mukherjee) জানিয়েছেন, যদি কোনো রোগীর ক্যান্সার মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়, তাহলে তাঁর স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ঐন্দ্রিলার ক্ষেত্রে তা ঘটেছে কিনা, এটি অবশ্যই পরীক্ষাসাপেক্ষ। ক্যান্সার ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে স্ট্রোক হতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চিকিৎসকরা ঐন্দ্রিলাকে পরীক্ষা করে বলেছিলেন, তাঁর চোট লেগেছে। কিন্তু ঐন্দ্রিলার মা তা মানতে নারাজ। গৌতমবাবুর মতে, ঐন্দ্রিলার ক্ষেত্রে যদি প্রমাণিত হয়, ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ তাঁর মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়েছে, তাহলে এটি স্ট্রোক হওয়ার অন্যতম কারণ। মস্তিষ্কে ক্যান্সার ছড়িয়ে গিয়ে স্ট্রোক হলে তা ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ের ইঙ্গিত দেয়। তবে কেমোথেরাপির অন্য সাইড এফেক্টস থাকলেও স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে না।
অপরদিকে মেডিক্যাল হিমাটো-অঙ্কোলজিস্ট ডঃ সুদীপ দাস (Sudip Das)-এর মতে, কেমোথেরাপির সাইড এফেক্টসকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে কিছু সাইড এফেক্ট কেমোথেরাপির চব্বিশ ঘণ্টা থেকে দশ দিনের মাথায় দেখা যায়। কিছু উপসর্গ দেখা যায় ছয় মাস থেকে এক বছরের পর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির পর রোগীর প্রাথমিক পর্যায়ে চুল উঠে যাওয়া, বমি বমি ভাব, খিদে কমে যাওয়া, দুর্বলতার মতো সমস্যা দেখা দেয়। দেখা দিতে পারে মুখে ঘা হওয়া, ডায়রিয়া, রক্তাল্পতার মতো সমস্যাও।
কিন্তু কেমোর ওষুধগুলির মধ্যে মাত্র দশ শতাংশ ক্ষেত্রে তিন মাস, ছয় মাস বা এক বছর পর সাইড এফেক্টস দেখা যায়। এর ফলে মেয়েদের ক্ষেত্রঃ ঋতুবন্ধ হওয়ার সমস্যা, পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা, এছাড়াও উভয়ের ক্ষেত্রেই হার্টের সমস্যা, শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়। কিন্তু এই ধরনের রোগীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। তবে সুদীপবাবুও জানালেন, কেমোথেরাপির পর স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, এই ধারণা ভুল। মস্তিষ্কে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে স্ট্রোকের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঐন্দ্রিলার ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে কিনা তা পরীক্ষা করে বলা সম্ভব হবে।
View this post on Instagram