GossipHoop Plus

আইটেম ডান্সার হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় হলেও সু-অভিনেত্রী হতে ব্যর্থ হেলেন, কি ছিল কারণ!

বলিউডের স্বর্ণযুগের কথা মনে করলেই চোখে ভাসে কিছু অপূর্ব কাহিনী, ভ্যাম্প, ক্যাবারের সমাহার। ক্যাবারে মানেই হেলেন (helen)। ক্যাবারে ও ব্যালের সংমিশ্রণে হেলেনের নাচে এখনও চোখ আটকে যায়। তাবড় তাবড় নৃত্যশিল্পীরা এসেছেন। কিন্তু হেলেনকে কেউই অতিক্রম করতে পারেননি। তবে এখনও হেলেনের অনুরাগীদের মনে একটাই প্রশ্ন, বলিউডে এসে শুধুমাত্র ডান্সার হয়েই কেন রয়ে গেলেন হেলেন? অভিনেত্রীও তো হতে পারতেন?

তাহলে ফিরে যেতে হয়ে হয় 1943 সালের আসামের ডিব্রুগড়ে যখন একটি পিতৃহারা কিশোরী তার পরিবারকে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করছে। সবে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বার্মা থেকে মা ও ভাইবোনদের নিয়ে চলে এসেছে হেলেন অ্যান রিচার্ডসন। বার্মার স্বচ্ছল জীবনে ব্যালে ও পিয়ানো শেখা মেয়েটি কোনোদিন ভাবতে পারেনি একসময় তাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোবে। মা নার্সের কাজ করেন। কিন্তু সংসারের সুরাহা হয়না। ফলে চলে আসতে হল কলকাতায়। কিন্তু ভাইকে বাঁচাতে পারল না হেলেন। স্মল পক্সকে চলে গেল সে। শোকস্তব্ধ মাকে নিয়ে হেলেনরা চলে এল মুম্বই। বার্মার সুন্দর জীবন থেকে যাযাবরের কঠিন জীবন। প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকার কঠিন লড়াইয়ের মধ্যেই আলাপ হল বলিউডের তৎকালীন ডান্সার কাক্কু (cuckoo)-র সঙ্গে। কাক্কুর হাত ধরে একটি ডান্স গ্রুপে যোগদান করলেন হেলেন। 1951 সালে ‘শবিস্তান’ ফিল্মে হেলেন প্রথমবার জুনিয়র ডান্সার হিসাবে পর্দায় ডান্স করেন। এরপর ‘আওয়ারা’ সহ বেশ কয়েকটি ফিল্মে জুনিয়র ডান্সার হিসাবে নাচ করছিলেন হেলেন। কিন্তু চোখে স্বপ্ন ছিল প্রথম সারির ডান্সার হওয়ার। বার্মিজ অ্যাংলো মেয়ে হেলেন পড়ে গেলেন পরিচালকদের চোখে।

1958 সালে শক্তি সামন্ত (shakti shamanta) পরিচালিত ফিল্ম ‘হাওড়া ব্রিজ’-এ গীতা দত্ত (geeta dutta)-র কন্ঠে ‘মেরা নাম চিন চিন চু’ সমগ্র ভারতবর্ষকে মাত করে দিল। তবে শুধু একা গীতা বা অশোক কুমার (ashok kumar) নন, ভারতবর্ষের চোখে ধরা পড়ল মাত্র উনিশ বছর বয়সী নিখুঁত নৃত্যশিল্পী হেলেন। বহু যুগ পেরিয়ে আজও টিভির চ্যানেল সার্ফ করতে করতে ‘মেরা নাম চিন চিন চু’-তে চোখ আটকে যেতে বাধ্য। শুরু হল হেলেন হয়ে ওঠার। একসময় গীতা দত্ত এবং হেলেন যেন সমার্থক হয়ে উঠেছিলেন। এরপর সেই স্থানে এলেন আশা ভোঁসলে (asha bhonsle)। বলিউড পরিচিত হল হেলেনের ক্যাবারে বিভঙ্গের সাথে, লম্বা আইল্যাশ ও রঙিন আইশ‍্যাডোর সাথে। হেলেনের চোখ, ঠোঁট, শরীরের প্রতিটি অঙ্গে উঠতে নৃত্যলহরী। কিন্তু অভিনেত্রী কেন হলেন না হেলেন?

অত্যন্ত ভুল একটি প্রশ্ন। 1965 সালে ‘গুমনাম’ ফিল্মের জন্য ফিল্মফেয়ারে ‘বেস্ট সাপোর্টিং অ্যাকট্রেস’-এর নমিনেশন পেয়েছিলেন। ‘চায়না টাউন’, ‘সাচ্চাই’ , ‘ছোটে সরকার’, ‘লহু কে দো রঙ’ , ‘খামোশি (দি মিউজিক‍্যাল)’ , ‘মহব্বতেঁ’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘হামকো দিওয়ানা কর গয়ে’, ‘হিরোইন’-এ অভিনয় করেছেন হেলেন। পেয়েছেন ‘বেস্ট সাপোর্টিং অ্যাকট্রেস’-এর পুরস্কার।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Mahtaab (@mahtaab_cinema)

কিন্তু তাঁর চেহারা বরাবর হলিউড ধাঁচের। ফলে তাঁর জন্য চরিত্র লেখা হলেও তা বরাবর পাশ্চাত্য ঘেঁষাই হয়ে এসেছে। হেলেন যখন বলিউডে আসেন, তখন শাড়ি পরা কালো চুলের তন্বী নায়িকার চাহিদা ছিল যাঁর চোখ দিয়ে বিরহে জল পড়বে, যিনি হবেন ঘরোয়া রমণী। কিন্তু হেলেনের চেহারার সঙ্গে মিলত না এই ক্রাইটেরিয়া। ফলে তাঁকে ভাবা হত ডান্সার হিসাবেই। হেলেন নিজেও নৃত্যশিল্পী হিসাবেই অধিক স্বচ্ছন্দ ছিলেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও নৃত্যশিল্পী হিসাবেই তাঁকে দর্শক চিনেছেন। 2009 সালে পদ্মশ্রী পেয়েছেন হেলেন। প্রকৃতপক্ষে হেলেন মানে হেলেন, তাঁর আর কোনো প্রতিচ্ছবি হয়নি, কোনোদিন হবেও না। তিনি, হেলেন, একমেবাদ্বিতীয়ম।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by yogen shah (@yogenshah_s)

whatsapp logo