16 ই মার্চ, বৃহস্পতিবার, পঁচাত্তর বছর বয়সে পদার্পণ করলেন কবীর সুমন (Kabir Suman)। যদিও তাঁর মতে, তা চুয়াত্তর। কারও কাছে তিনি গানওলা, কারও কাছে আদর্শ। অনেকের কাছে তিনি চক্ষুশূল। তবে জন্মদিনে বিশ্বাস করেন না সুমন। এখনও দিনে তিন ঘন্টা রেকর্ডিং করতে পারেন তিনি। জন্মদিনে ফোনে শুভেচ্ছাবার্তা জানালে অস্বস্তি হয় সুমনের। সুমনের মতে, সত্যি করে মানুষ তাঁকে কোনোদিনই চাননি। ফলে বর্তমান কালে তাঁর হাতে যথেষ্ট কম কাজ। তবে তা নিয়ে সুমনের কোনো ক্ষোভ নেই। আঠারো বছর বয়স থেকে আকাশবাণী কলকাতায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে তিনিও কাউকে পাত্তা দেন না। সুমনের মতে, তাঁকেও কেউ পাত্তা দেন না। তাছাড়া তাঁর বিশ্বাস, বিনোদন শিল্পীদের একটা বয়সের পর আর কেউ চায় না। তবে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে ক্লান্ত সুমন জানালেন, কাছের মানুষদের থেকে পারিশ্রমিক না নিলেও অনেকের কাছে চার গুণ পারিশ্রমিকও চেয়ে বসেন।
View this post on Instagram
তৃণমূল কংগ্রেসের কট্টর সমর্থক সুমনের স্পষ্ট কথা, তিনি সকলের মনের মতো নন। ফলে তাঁকে অনেকেই অনুষ্ঠানে ডাকবেন না। অপরদিকে কলকাতা শহরে প্রেক্ষাগৃহের ভাড়া দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। ফলে না চাইলেও টিকিটের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সুমনের ইচ্ছা আছে হারমোনিয়াম, তানপুরা, তবলা ও সাউন্ড সিস্টেম চাপিয়ে বেরিয়ে পড়বেন। গাড়ির গায়ে লেখা থাকবে ‘বাংলা ভাষায় খেয়াল’। রাস্তাতেই কোথাও গাড়িটি দাঁড় করিয়ে কোনো আইনভঙ্গ না করে, কাউকে বিরক্ত না করে গান গাইবেন সুমন। তবে তিনি মনে করেন, বর্তমানে আধুনিক গান শেষ হয়ে গিয়েছে। কারণ রেডিওর মাপকাঠি শেষ হয়ে গিয়েছে।
View this post on Instagram
সুমন একসময় খেয়াল শিখেছেন। বাংলা খেয়াল নিয়ে রীতিমত চর্চাও করেছেন। বন্দিশ রচনা করা, গাওয়া ও নতুন প্রজন্মকে তা শেখাতে পেরে গর্বিত তিনি। সুমনের মতে, এটাই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ। এটাই তাঁর মাতৃভাষার সেবা বলে মনে করেন সুমন। যৌনতা নিয়ে কথা বলতেও পিছপা নন কবীর সুমন। ইদানিং বয়সের কারণে রাতে ভালো ঘুম হয় না। কিন্তু বিছানায় এই বয়সেও নিজেকে চূড়ান্ত ভাবে সক্ষম দাবি করা সুমন মনে করেন, নারীরা তাঁকে সমৃদ্ধ করেছেন। শরীর, ভালোবাসা ও সম্মানের সমন্বয়ই তাঁর কাছে প্রেম। চূড়ান্ত কাম যাকে তিনি নিজেও অশ্লীল মনে করেন, তা তাঁর কাছে এনার্জি। এছাড়াও সুমনের বাঁচার রসদ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিভিন্ন রাগ ও খেয়াল।
View this post on Instagram
একসময় স্বপ্ন ছিল সিনেমা তৈরির। বাংলাদেশে একটি টেলিফিল্ম তৈরি করেছিলেন সুমন। কাজ করতে চান নৃত্যনাট্য নিয়ে। তবে সুমন গর্ব করেন তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত সরকারের কর্মকান্ড নিয়ে। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মেলাতে পারেন না তিনি। রাজনীতিতে না থাকলেও বাংলার ছেলেমেয়েদের খেয়াল শেখানোর কর্মশালার উদ্যোগ নিতে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)-কে চিঠি লিখেছিলেন সুমন। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে চারটি কর্মশালার আয়োজন হলেও করোনার কারণে দুটি বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীকালে সুমনের অনুরোধে সাড়া দিয়ে মমতা তাঁকে বাংলা ভাষায় খেয়াল সরকারি ভাবে চালু করে দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষাক্রমের অনুমতি দেন। এই কারণে সমস্ত কনট্রাডিকশন নিয়েও মভতা সবসময়ই তাঁর কাছে সম্মানীয় বলে মনে করেন সুমন।
View this post on Instagram
দূর্নীতি কান্ডে সুমনের মন্তব্য, “ক্যাপিটালিজমে এটা হবেই”। প্রথমবার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন সুমন। অর্থাভাবে দ্বিতীয়বার ভোটে দাঁড়াননি। সুমনই ছিলেন একমাত্র সাংসদ যাঁর গাড়ি ছিল না। তবে শুভাপ্রসন্ন (Subhaprashanna)-র সাথে একমত নন সুমন। তাঁর মতে, ভাষার মিশ্রণের মধ্যেই তাঁর ব্যাপ্তি।
View this post on Instagram