হীরালেল সেন ছিলেন একজন বাঙ্গালী চিত্রগ্রাহক এবং ভারতীয় সিনেমার একজন প্রবাদপুরুষ। ভারতের প্রথম বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্র এবং প্রথম রাজনৈতিক তথ্যচিত্র বানানোর কৃতিত্ব তারই। নির্বাক যুগে তিনি সেই সময় প্রায় চল্লিশটির মতন সিনেমা বানিয়েছিলেন। ১৯০৩ সালে নির্মিত ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’ সিনেমাটি ছিল তার পূর্ণদৈর্ঘ্যের সিনেমা। এরপর ১৯৩০ এ আসে সেই মহারাজ যিনি বাংলা সিনেমার গতি বদলে দেন।
১৯৫২ সালের শেষ দিকে সত্যজিৎ তাঁর নিজের জমানো পয়সা খরচ করে প্রথম দৃশ্যগ্রহণ শুরু করেন। প্রায় তিন বছর ধরে একটি সিনেমার জন্য কাজ করেন। শেষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে ঋণ নিয়ে ১৯৫৫ সালে ‘পথের পাঁচালী’ নির্মাণ করেন তিনি। এই শুরু যাত্রা পথের। সেইসময় হিন্দি চলচ্চিত্রের রমরমা। ঠিক সেই সময়েই সবরকম চাকচিক্য ছেড়ে সাদা কালো ছবি, মেক আপ হীন ছবি, আর ছবির মধ্যে কত আলপনা – যেন বাংলার ছবি স্পষ্ট তার ছবির ব্যানারে। অত্যন্ত সাদা মাটা ছবির মধ্যে দিয়ে তিনি বাংলা সিনেমাকে একটা আলাদা মাত্রা দেন। তার সিনেমার পোস্টার, সংলাপ, সিনেমাটোগ্রাফী সব কিছুর মধ্যেই আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। পথের পাঁচালী দিয়ে শুরু করেও তিনি ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ বা ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘চারুলতা’, ‘আগন্তুক’, ‘নায়ক’-এর মতন দুর্দান্ত সিনেমাগুলি সৃষ্টি করে গিয়েছেন।
দেখতে দেখতে ১০০ টা বছর পার হয়ে গেল। এই প্রথম ‘সত্যজিৎ রায় লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স ইন সিনেমা’ পুরস্কারটি দেওয়া হবে ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (IFFI-International Film Festival of India)-এর মঞ্চ থেকে। শুধু তাই নয়, ৭৪তম কান ফিল্ম ফেস্টভ্যালেও এবার থাকবে সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতিচারণা।
প্রসঙ্গত, এই মহান বাঙালির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মমতা লেখেন, “সত্যজিৎ রায় এক কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক, সুরকার, গীতিকার, চিত্রকর। তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে অসীম শ্রদ্ধাঞ্জলি । তিনি কেবল বাংলারই নয়, ভারত ও গোটা বিশ্বের গর্ব। তিনি বিশ্বজুড়ে মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন।” তাই গতকাল ভোটের আবহে এতটুকু ফিকে হয়ে যায়নি বাঙালির গর্ব সত্যজিৎ রায়ের জন্ম বার্ষিকী, বরং তিনি বাঙালির মননে গেঁথে রয়েছেন, এবং থাকবেন চিরকাল।