জগদ্ধাত্রী নাকি রামপ্রসাদ? মমতা ব্যানার্জীর প্রিয় ধারাবাহিক কোনটি!
পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)-কে নিয়ে বাঙালিদের একাংশের মনে রয়েছে কৌতুহল। গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত ‘টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস 2023’-এর মঞ্চে মমতা যখন বলেন, তিনি বাংলা ধারাবাহিক দেখেন, সকলে কার্যতঃ অবাক হয়েছিলেন। ব্যস্ততার মাঝে মুখ্যমন্ত্রী আদৌ বাংলা ধারাবাহিক দেখার সময় পান কিনা, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে। অনেকেই ভাবছেন, মমতা হয়তো সকলের মন রাখার জন্য আর পাঁচজন নেতার মতোই বাংলা ধারাবাহিক দেখার কথা বললেন! প্রকৃতপক্ষে, তা নয়। মমতা সত্যিই সময় পেলে বাংলা ধারাবাহিকে চোখ রাখেন। কখনও প্রোমো দেখেই সন্তুষ্ট হতে হয় তাঁকে। কারণ অবশ্যই মমতার কর্ম ব্যস্ততা।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগেও আর পাঁচজন মহিলার মতোই মমতাও বিনোদন জগতের বিভিন্ন খবরে চোখ রাখতেন। তিনি কংগ্রেস নেত্রী থাকাকালীন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী (Priyaranjan Das Munshi) আয়োজন করতেন ‘দক্ষিণীবার্তা’ অনুষ্ঠানের। মমতা, সৌগত রায় (Sougata Roy) সহ একাধিক নেতা-মন্ত্রী উপস্থিত থাকতেন এই অনুষ্ঠানে। সেই সময়ের টলি তারকারা মাতিয়ে তুলতেন এই রুচিসম্পন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর প্রিয়রঞ্জন ও মমতার পথ আলাদা হয়ে যায়। মমতা কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন তৃণমূল কংগ্রেস। সময় এগিয়ে গিয়েছে। প্রিয়রঞ্জন আজ নেই। মমতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তবু সংস্কৃতির রেশ তাঁকে ছেড়ে যায়নি। রাজনীতি মমতার পেশা। কিন্তু সংস্কৃতি তাঁর বিনোদন।
মমতা বিশ্বাস করেন, বাংলার শিল্পীরাও যথেষ্ট গুণী। একদিন তাঁরাও সর্বভারতীয় স্তরে স্থান করে নিতে পারবেন। ‘টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস’-এর মঞ্চে তিনি জানালেন, ‘অনুরাগের ছোঁয়া’-র বাচ্চা মেয়ে দুটির কথা বলার ধরন তাঁর খুব ভালো লাগে। ‘জগদ্ধাত্রী’, ‘নিম ফুলের মধু’, ‘রামপ্রসাদ’ মমতার কাছে দেখার মতো সিরিয়াল। আর পাঁচজন দর্শকের মতো মমতাও কাহিনীর গতিপ্রকৃতি দেখে বুঝে যান, পরের দিন কি দেখানো হবে। একদিন ধারাবাহিক না দেখতে পেলে মমতা ভাবেন, পরের দিন কি দেখানো হবে!
তবে ধারাবাহিকে একজনের তিনবার বিয়ে, কূটকাচালী, এগুলি মমতারও পছন্দ নয়। এদিন টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের মঞ্চে তিনি বলেন, নেতিবাচকতার মাধ্যমে ধারাবাহিকগুলির কাহিনী বাড়ানো হচ্ছে তা তিনি বুঝতে পারেন। তবে মমতার মতে, যদি ধারাবাহিকে কোনো অপরাধের পর কঠোর আইনি শাস্তি দেখানো হয়, তাহলে তা সমাজের কাছে বার্তা বহন করবে।
পরিশেষে, পাঠককুলের জানা প্রয়োজন, শুধুমাত্র মমতাই ধারাবাহিক দেখেন না, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী (Atal Bihari Bajpayee)-ও হিন্দি সিনেমার ভক্ত ছিলেন। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ (Rajendra Prasad)-এর উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল ভোজপুরি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। সিনেমা দেখতে পছন্দ করতেন তিনিও। তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা (J.Jaylalita) নিজে একসময় দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্মের নামী নায়িকা ছিলেন। পরবর্তীকালে ফিল্ম ছেড়ে রাজনীতিতে এলেও সময় পেলে টেলিভিশনের পর্দায় দক্ষিণী ফিল্মে চোখ রাখতেন তিনিও। প্রকৃতপক্ষে, বিনোদন জগৎ সমাজের পরতে পরতে রেখেছে তার রেশ। দিনের শেষে সামান্য সংস্কৃতির ছোঁয়ায় মুগ্ধ করতে পেরেছে মানুষকে।