কূট-কাচালি কিংবা খলনায়িকা না থাকলে আদৌ কি চলবে বাংলা ধারাবাহিক!
চলতি বছরের শুরুতেই শোনা গিয়েছিল বিনোদন জগতে বইতে চলেছে পরিবর্তনের হাওয়া। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছিল, বিনোদনের কন্টেন্টেও টানা হবে রাশ। সেই মতো কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ছোট পর্দায় খল চরিত্র ও ষড়যন্ত্র দেখানো যাবে না। বিশেষতঃ নারীকে খলনায়িকা রূপে কখনওই দেখানো উচিত নয়। এতে নারী এবং সমাজের কাছে নেতিবাচক বার্তা প্রচারিত হচ্ছে।
এই নির্দেশ অনুযায়ী 1994 সালে তৈরি কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইনে আসতে চলেছে বড়সড় পরিবর্তন। পয়লা নভেম্বর নোটিশ দিয়ে বেশ কিছু বিধিনিষেধের কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের আন্ডার সেক্রেটারি সোনিকা খট্টর (Sonika Khattar)। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে কিছুটা হলেও একমত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনিও তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, একজন পুরুষের তিনটি বৌ থাকা উচিত নয়। টেলিভিশনে এত কূট-কাচালির দরকার নেই। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই ধারণা কৈকেয়ী-মন্থরার যুগে ছিল। কিন্তু এখন যুগ বদলেছে। যাঁরা জানেন না, তাঁরাও ধারাবাহিক দেখে অনেক কিছুই শিখে যাচ্ছেন। কিন্তু এই ধরনের পরিবর্তন এলে সত্যিই কি দর্শকদের পছন্দ হবে ধারাবাহিক? কারণ নেটিজেনদের একাংশ ও মিডিয়ার কয়েকজনের মতে, এই ধরনের ঘটনাধারাই নাকি ধারাবাহিকগুলির টিআরপি বাড়ার কারণ।
‘সর্বজয়া’ ধারাবাহিকে জাঁদরেল ননদিনীর ভূমিকায় অভিনয় করেন স্বাগতা মুখোপাধ্যায় (Swagata Mukherjee)। তাঁর মতে, উপন্যাস, ফিল্ম, ধারাবাহিক কখনও সমাজের অবক্ষয়ের কারণ হতে পারে না। বরং এগুলি সমাজের আয়না। সমাজের ঘটনা টেলিভিশনের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণ দর্শকদের কাছে। সমাজের খল চরিত্রগুলিকে আইন করে মুছে ফেলা যাবে না। তাহলে টেলিভিশনের খল চরিত্রের উপরেই কেন কোপ পড়ছে? ‘সর্বজয়া’-র প্রযোজক ও ব্লুজ-এর কর্ণধার স্নেহাশিস চক্রবর্তী (Snehashish Chakraborty) এই প্রসঙ্গে একমত। তিনি জানিয়েছেন, নারী-পুরুষ সকলের মধ্যেই ইতিবাচক ও নেতিবাচক, দুটি বৈশিষ্ট্যই থাকে। নেতিবাচক দিককে অস্বীকার করে শুধুমাত্র ইতিবাচক দিককে তুলে ধরলে ধারাবাহিকগুলি আকর্ষণ হারাবে। ‘জীবন সাথী’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন ইন্দ্রাণী দত্ত (Indrani Dutta)। তাঁর অভিনীত চরিত্র সালঙ্কারা প্রথমে নেতিবাচক থাকলেও সময়ের সঙ্গে চরিত্রটি ইতিবাচক হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে, এখনও সমাজে মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি কূট-কাচালি করেন। শত্রুতা ও পরনিন্দা-পরচর্চা করেন। অতএব ধারাবাহিকে ভূল দেখানো হচ্ছে না বলে মনে করেন ইন্দ্রাণী।
তবে ‘খড়কুটো’-র পটকা ওরফে অম্বরীশ ভট্টাচার্য (Ambarish Bhattacharya) মনে করেন, কেন্দ্রীয় আইন মানতে সকলেই বাধ্য। তাঁর মতে, অভিনেতারা ধারাবাহিক নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত নন। এই দায়িত্ব চিত্রনাট্যকারের। তাই তাঁরাই বিষয়টি নিয়ে সঠিক মতামত দিতে পারবেন। যদি ইতিবাচক দিক দেখিয়ে কোনো ধারাবাহিক বানানো সম্ভব হয়, তবে তা সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে বলে মনে করেন অম্বরীশ।
View this post on Instagram