বাংলাদেশের সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের কোনো অবদান নেই, ফের কবিগুরুকে নোংরা আক্রমণ গায়ক নোবেলের
জি বাংলার বিখ্যাত সিঙ্গিং রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’-র মাধ্যমে একসময় সকলের মনোরঞ্জন করলেও শো জিততে পারেননি বাংলাদেশের গায়ক মঈনুল আহসান নোবেল (Mainul Ahsan Nobel)। তবে এরপর থেকে একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি করে চলেছেন তিনি। কখনও নোবেলের সম্পর্ক, কখনও বা বিয়ে, কখনও বা সেলিব্রিটিদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করে। এমনকি এর আগে নোবেলের নামে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। সেযাত্রা সেলিব্রিটিদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু এবার সীমা লঙ্ঘন করলেন নোবেল।
সম্প্রতি তিনি একটি ফেসবুক পোস্ট করেছেন। নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করে নোবেল লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) ও কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) কোনো নবী বা দেবতা নন। ফলে তাঁদের গান নিয়ে প্যারোডি করাই যায়। নোবেলের মতে, বাংলাদেশের কবিদের মূল্যায়ণ করতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ। তার পরেও তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশে যা চর্চা করা হয়, তা তাঁর জন্য অনেক। নোবেল লিখেছেন, বাংলাদেশের সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান নিতান্তই কম, প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে বাংলাদেশের কোনো শিল্পী যদি প্যারোডি তৈরি করেন, তা রবীন্দ্রনাথের পক্ষেই মঙ্গলজনক। রবীন্দ্রনাথকে অপমান করার ফলে এপার বাংলা-ওপার বাংলা জুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
বাংলাদেশের নেটিজেনদের একাংশ নোবেলকে সমর্থন করেছেন। তবে ভারতীয় নেটিজেনদের একাংশ বলেছেন, তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বকবি মানতে পারেন না। অনেকে নোবেলের মস্তিষ্কের সুস্থতা কামনা করে তাঁকে হিরো আলম (Hero Alom)-এর বিদেশি ভ্যারিয়্যান্ট বলেছেন।
এবার আসা যাক নোবেলের ফেসবুক পোস্ট ও বিতর্ক প্রসঙ্গে। যে ফেসবুক পোস্টের বক্তব্যে ইতিহাসের কোনো অস্তিত্ব নেই ও বিতর্ক জুড়ে ঐতিহাসিক জ্ঞানের অত্যন্ত অভাব, তা কি সত্যিই কোনো বিতর্ক তৈরি করার যোগ্য। হয়তো মতামত দেওয়ার যোগ্যতাও রাখে না। রবীন্দ্রনাথের রচনাগুলির সময়কালে দুই বাংলা তথা ভারতবর্ষ ছিল অবিভক্ত। 1861 সালের 7 ই মে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়। তাঁর মৃত্যুর তারিখ 1941 সালের 7 ই অগস্ট। অতএব রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় ভারত ভাগ হওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। রবীন্দ্রনাথ রচিত সাহিত্য ছিল অবিভক্ত ভারতবর্ষকে ঘিরে, সমগ্র মানবজাতিকে বেষ্টন করে। 1947 সালের 15 ই অগস্ট ভারতবর্ষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে তৈরি হয় ভারত ও পাকিস্তান। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান বিভক্ত হয় তৈরি হয় বাংলাদেশ যা আগে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল। ফলে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, 1947 সালের আগে পাকিস্তান ও 1971 সালের আগে বাংলাদেশ নামক কোনো ভিন্ন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিল না। তাহলে বাংলাদেশের জন্য রবীন্দ্রনাথ কোনো সাহিত্য তৈরি করেননি, এই ধরনের কথার জন্ম কিভাবে হল? রবীন্দ্রনাথ অবিভক্ত ভারতবর্ষ তথা পৃথিবীর জন্য সাহিত্য তৈরি করেছেন। বর্তমান বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সেই সময় অবিভক্ত ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে নোবেল ও অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করা নেটিজেনদের বোধ হয় ইতিহাস সম্পর্কে একটু জ্ঞান লাভ করা প্রয়োজন।