একবিংশ শতকে পৌঁছেও কোথাও যেন মেয়েরা অনুভূতির দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছেন। গত মে মাস থেকে শুরু হয়েছে একের পর এক মডেল ও অভিনেত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বয়ফ্রেন্ডদের দিকে উঠছে আঙুল। মে মাসে আত্মহত্যা করেছেন বাংলা সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পল্লবী দে (Pallavi Dey)। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর লিভ-ইন পার্টনার সাগ্নিক (Shagnik)-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন পল্লবীর মা-বাবা। এরপরেই আত্মহত্যা করেন মডেল-অভিনেত্রী বিদিশা (Bidisha)। তাঁর ঘটনাতেও সামনে আসে তাঁর বয়ফ্রেন্ডের নাম। তবে তাঁর বয়ফ্রেন্ড বলে পরিচিত ব্যক্তি বিদিশার সাথে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করার পাশাপাশি পুলিশের তদন্তে সহযোগিতা করছেন। বিদিশার মৃত্যুর কিছুদিনের মাথাতেই আত্মহত্যা করেছেন আরও এক মডেল-অভিনেত্রী মঞ্জুষা (Manjusha)। কেরিয়ার সম্পর্কিত মানসিক অবসাদে ভুগে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। আবারও ঘটল অঘটন। ভুবনেশ্বরের নায়াপল্লী এলাকার ভাড়াবাড়ি থেকে গত 18 ই জুন উদ্ধার করা হয়েছে ওড়িয়া অভিনেত্রী রশ্মিরেখা ওঝা (Rashmirekha Ojha)-র ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
রশ্মিরেখার মৃতদেহ ছিল ঘরের পাখার সাথে ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায়। মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট। ওই সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, অভিনেত্রীর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। মাত্র তেইশ বছর বয়সে চলে গেলেন রশ্মিরেখা। প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যার ইঙ্গিত মিললেও আপাতত পোস্টমর্টেম রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ বলে জানিয়েছেন ডিসিপি। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়ার পর শুরু হবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত। রশ্মিরেখার মৃত্যুর ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
View this post on Instagram
রশ্মিরেখার মা-বাবা মানতে পারছেন না, তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। রশ্মিরেখার মৃত্যুর খবর তাঁর মা-বাবাকে জানান রশ্মিরেখার লিভ-ইন পার্টনার সন্তোষ পাত্র (Santosh Patra)। রশ্মিরেখার বাবা জানিয়েছেন, শনিবার তাঁরা মেয়েকে ফোন করলেও রশ্মিরেখা ফোন ধরেননি। পরে সন্তোষের কাছ থেকে মৃত্যুর খবর পান তাঁরা। রশ্মিরেখার বাড়িওয়ালার কাছ থেকে তাঁর মা-বাবা জানতে পেরেছেন, রশ্মিরেখা ও সন্তোষ স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে ভাড়া থাকতেন। এই বিষয়ে আগে তাঁদের কিছুই জানাননি রশ্মিরেখা। তাঁর মৃত্যুর জন্য সন্তোষকে দায়ী করছেন রশ্মিরেখার মা-বাবা।
জগৎসিঙ্গপুর জেলার বাসিন্দা রশ্মিরেখা ওড়িয়া টেলিভিশন শো ‘কেমিটি কাহিবি কাহা’-তে অভিনয়ের মাধ্যমে সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু ক্রমশ একের পর এক অভিনেত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ও তাঁদের বয়ফ্রেন্ড যোগ অত্যন্ত ভাবিয়ে তুলছে সকলকেই। বোঝাই যাচ্ছে, বিনোদন জগতের ঝকঝকে আলোয় আলোকিত হয়ে সামান্য বৈভব পেলেই বহু অভিনেতা-অভিনেত্রীর জীবনে ভিড় করছেন স্তাবকরা। তাঁদের মধ্যে থেকেই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জীবনে আসছে বয়ফ্রেন্ড অথবা গার্লফ্রেন্ড। বিনোদন তাঁদের পেশা হলেও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছে একসময় তা হয়ে উঠছে তাঁদের স্টেটাস সিম্বল। একই ফাঁদে পড়ে রহস্যমৃত্যু ঘটেছিল সুশান্ত সিং রাজপুত (Sushant Singh Rajput)-এর।
পরিশেষে এটি বলতেই হবে, বিনোদন জগতে যাঁরা লড়াই করে উচ্চতা প্রাপ্ত করেন, তাঁরা হয়তো নিজেদের এত সহজে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। কিন্তু যাঁদের কাছে পেশা নয়, এটি শুধুই স্টেটাস সিম্বল ও সহজলভ্য, তাঁরাই শেষ অবধি বেছে নেন চূড়ান্ত পথ।
View this post on Instagram
