বহুদিন হল চলে গিয়েছেন সরোজ খান (Saroj Khan), অনেক দূরে, কোনো এক ইন্দ্রসভায়। কিন্তু তাঁকে ঘিরে রয়ে গিয়েছে বহু কাহিনী। নির্মলা (Nirmala) থেকে সরোজ হয়ে ওঠার রাস্তা মসৃণ ছিল না। নাচ ছিল সরোজের ধ্যান-জ্ঞান। দায়িত্বশীল ছিলেন নাচের প্রতি। কোনো পরিবর্তন নাচের প্রতি কোনো অবহেলা সহ্য করতে পারতেন না সরোজ। ইন্ডাস্ট্রিতে সরোজ পরিচিত ছিলেন ‘মাস্টারজি’ নামে। তাঁর কাছে কোনো অজুহাত চলত না। এমনকি কিংবদন্তী রেখা (Reekha)-কেও রেয়াত করেননি সরোজ। কাঁদতে কাঁদতে সেট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন রেখা।
সময়টা ছিল 1990 সাল। সেই বছর মুক্তি পেয়েছিল রেখা, জিতেন্দ্র (Jeetendra), ঋষি কাপুর (Rishi Kapoor) অভিনীত ফিল্ম ‘শেষনাগ’। এই ফিল্মের ডান্স কোরিওগ্রাফার ছিলেন সরোজ। একটি নাচের দৃশ্যে রেখার কোরিওগ্রাফি ছিল তাঁর দায়িত্ব। কিন্তু কোরিওগ্রাফির সময় একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এর আগে মুক্তি পেয়েছিল ‘নাগিন’। সেই ফিল্মে শ্রীদেবী (Sridevi)-কে একই ধরনের নাচের দৃশ্য শিখিয়েছিলেন সরোজ। ফলে শ্রীদেবী ও রেখার নাচের মূদ্রা যাতে এক না হয়ে যায়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হয়েছিল তাঁকে।
View this post on Instagram
সরোজ বরাবর শুটিংয়ের আগে অভিনেত্রীদের রিহার্সাল করাতেন দিনের পর দিন। একই ভাবে রেখাকেও পরপর তিন দিন রিহার্সালের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কারণ সরোজ জানতেন, শ্রীদেবী ও রেখার নাচ একই ধাঁচের হলে দুই তারকার তুলনা হওয়ার পাশাপাশি প্রভাব পড়বে তাঁর নিজের কেরিয়ারেও। ফলে সরোজের অসম্মান হবে। এই কারণে সরোজ তিন দিন ধরে রেখাকে রিহার্সাল করানোর পরিকল্পনা করেন। কিন্তু রেখা তাতে রাজি হননি। রেখার ম্যানেজার সরোজকে রেখার আসার সময়ের কথা বলে রাখলেও একদিনের জন্যও রিহার্সালে আসেননি রেখা। স্বাভাবিকভাবেই সম্মান হানি হয়েছিল সরোজের।
শুটিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট দিনে এসে পৌঁছালেও রেখা জানালেন, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। ফলে নাচের দৃশ্যের শুটিং করতে পারবেন না। এতটা অবহেলা সহ্য করা সরোজের ধাতে ছিল না। রেখার পেশাদারিত্বের অভাবে রেগে যান সরোজ। তিনি সরাসরি রেখাকে নির্দেশ দেন নাচের দৃশ্যের শুট করার। কারণ পরপর তিন দিন রেখা রিহার্সালে আসেননি। এরপর তিনি নাচের দৃশ্যের শুটিং না করলে সরোজের কেরিয়ারের পক্ষে তা অত্যন্ত খারাপ হবে। সরোজ, রেখার কাছে তাঁর এই রকম আচরণের কারণ জানতে চান।
View this post on Instagram
কিন্তু রেখা হঠাৎই কেঁদে ফেলেন। রেখাকে কাঁদতে দেখে সরোজের কষ্ট হলে তিনি ক্ষমা চান এবং বলেন, রেখাকে তিনি কষ্ট দিতে চাননি। তবে শুটিং শুরু না হলে কলাকূশলীদের ক্ষতি হবে। রেখা কাঁদতে কাঁদতে শুটিং করবেন বলার পর সেট থেকে বেরিয়ে যান। এরপর রেখার ম্যানেজার এসে সরোজের কাছে পুরো ঘটনাটি জানতে চান। ততক্ষণে অবশ্য সরোজ জেনে গেছেন রেখার এই ধরনের আচরণের কারণ।
প্রকৃতপক্ষে, সেই সময় অধিকাংশ অভিনেত্রীর নিজস্ব ডান্স কোরিওগ্রাফার থাকত। রেখার ডান্স কোরিওগ্রাফার ছিলেন কমল নাথ (Kamal Nath)। রেখা কমল নাথের কাছে রিহার্সাল করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। এই কারণে সরোজের কাছে রিহার্সাল করার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছিলেন রেখা। তবে পরবর্তীকালে সরোজ বলেন, রেখা যদি ফিল্মের কোরিওগ্রাফার বদলাতে চান, তাহলে তিনি পরিচালক ও প্রযোজকদের সাথে কথা বলবেন। তাঁর এই নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু শেষ অবধি সরোজের কোরিওগ্রাফিতেই রেখা নাচের দৃশ্যে দারুণ পারফরম্যান্স করলেও ‘শেষনাগ’ বক্স অফিসে সফল হয়নি।
View this post on Instagram