15 ই ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee)। কিন্তু তারপর থেকেই তাঁর মৃত্যু নিয়ে চলছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। সন্ধ্যার মৃত্যুসংবাদ টুইট করে জানাতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন (Shantanu Sen) তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ প্রস্তাবকে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পদ্মশ্রী সম্মানের প্রস্তাব দিয়ে সন্ধ্যার কাছে ফোন এসেছিল। কিন্তু সন্ধ্যা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর অনুরাগীদের একাংশ প্রশ্ন তোলেন, একই সঙ্গে সোনু নিগম (Sonu Nigam) ও সন্ধ্যার ‘পদ্মশ্রী’ পাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত অসম্মানজনক। কারণ সন্ধ্যার ব্যাপ্তি অনেক বড়। অপরদিকে লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) পেয়েছেন ‘ভারতরত্ম’। অথচ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান (Ustad Bade Golam Ali Khan)-এর একনিষ্ঠ ছাত্রী সন্ধ্যার জন্য শুধুই একটি পদ্মশ্রী! বাংলার সঙ্গীতজ্ঞরাও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ধারণা নেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে। এবার গর্জে উঠলেন কবীর সুমন (Kabir Suman)।
View this post on Instagram
গত 27 শে জানুয়ারি সকালে সন্ধ্যার শারীরিক অবনতি হয় ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। গ্রীণ করিডোর করে সন্ধ্যাকে নিয়ে আসা হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে উডবার্ন ওয়ার্ডে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেই সময়েই কবীর সুমন বলেছিলেন, তিনি এই ভয়টাই পাচ্ছিলেন। নব্বই বছর বয়সী কিংবদন্তী সন্ধ্যা মানসিক আঘাত সহ্য করতে পারেননি। এমনকি তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রেও এই খবর পাওয়া গিয়েছে। কবীর সুমনও সাম্প্রতিক পোস্টে লিখেছেন হিন্দুত্ববাদীরা সফল হয়েছেন বাংলার সুরসম্রাজ্ঞীকে তাড়িয়ে। তাঁর সঙ্গে একমত নেটিজেনরাও। ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে কবীর সুমনের একটি ইউটিউব ভিডিও।
এই ভিডিওটি তিনি বানিয়েছিলেন 25 শে জানুয়ারি। অর্থাৎ সন্ধ্যা অসুস্থ হওয়ার মাত্র একদিন আগে। ভিডিওতে কবীর সুমন জানান, সন্ধ্যার পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান করার কথা। তিনি বলেন, একটি বাংলা দৈনিক থেকে ফোন করে তাঁকে এই সংবাদ জানানো হয়েছে। এর আগে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (Hemanta Mukherjee)-কেও তাঁর জীবনের অন্তিম লগ্নে পদ্মশ্রী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন ভারত সরকার। কিন্তু হেমন্তও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পদ্মশ্রী। সুমনের প্রশ্ন, শুধুমাত্র অবাঙালী নন, দুই বাংলার মানুষ কতটুকু জানেন সন্ধ্যার গান সম্পর্কে। এই কারণেই অবলীলায় রিমেক হয় সন্ধ্যার গান। কবীর সুমনের মতে, ভারত সরকার শুধুমাত্র সন্ধ্যাকে অপমান করেননি, তাঁরা বাংলা ভাষা, জাতি তথা সমগ্র ভারতবর্ষকে অপমান করেছেন।
অপরদিকে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) রবীন্দ্রসদনে এসে সন্ধ্যার পার্থিব শরীরে মাল্যদান করে বাইরে এসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, রাজ্য সরকার রাজনীতি করে সন্ধ্যাকে পদ্মশ্রী নিতে দেননি। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেছেন, একটি পদ্মশ্রী বা হতশ্রীতে কিছু যায় আসে না।
মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন সন্ধ্যা, এই কথা অত্যন্ত সঠিক। কিন্তু মানসিক আঘাতের কারণে প্রয়াত হননি তিনি। করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সন্ধ্যা। ছিল হার্টের সমস্যাও। বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলেন। ভেঙে গিয়েছিল ফিমার বোন। অস্ত্রোপচার হলেও বয়সজনিত কারণে হার্টের সমস্যা স্থিতিশীল ছিল না। ফলে হয় ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। প্রয়াত হন সন্ধ্যা। একটি মানুষ চলে গিয়েছেন। আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না তিনি। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শুধুমাত্র বিনোদন জগত নয়, ভারতের গর্ব ছিলেন। দিনের শেষে দাঁড়িয়ে একটাই অনুরোধ, বিনোদন জগতকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করবেন না। কারণ সংস্কৃতি একটি দেশের পরিচয়।