সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণ করলেন অভিনেতা দেব, খুশি সৌমিত্রের পরিবারও!
কখনো তিনি রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা’ আবার কখনও সত্যজিৎ রায়ের প্রদোষচন্দ্র মিত্র। ‘ময়ূরবাহন’ থেকে ‘ময়ূরাক্ষী’। ‘ক্ষিদ্দা’ থেকে ‘উদয়ন পণ্ডিত’। আবার কখনো সকলের প্রিয় পোস্তের দাদু। নাম তার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি শুধু অভিনেতাই ছিলেননা ছিলেন কবি সৌমিত্র, গায়ক সৌমিত্র,বাচিকশিল্পী সৌমিত্র, নাট্যকার সৌমিত্র, একলা ঘরে নিজের সঙ্গে কথা বলার সৌমিত্র। নিজের কর্মজীবনের ৬০ বছর তিনি বাংলার মানুষদের তিনি উৎসর্গ করে গিয়েছেন। তিনিই বাংলার মানুষের বেলাশেষে হয়েই থাকবেন। তিনি গত রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ সবাইকে একা রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। এখনো মানুষ তাক্র ক্ষিদ্দা বলেই জানে। ক্ষিদ্দার চলে যাওয়া এখনো মানুষ মেনে নিতে পারছেননা।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন আমাদের শৈশবের দিনের স্মৃতি। তিনিই ছিলেন আমাদের ফেলুদা,তিনি ছিলেন আমাদের অপু। আজ হয়তো অনেকে ফেলুদার জায়গা নিয়েছে কিন্তু তাঁর স্মৃতি মানুষ আজ ও ভুলতে পারেননি। আমাদের ছোটবেলার এক যুগের অবসান ঘটে গিয়েছে । দীর্ঘ ৪০ দিন জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি ওই দিন। তারাদের মৃত্যু হয়না। এরা নিজেদের কর্মকান্ড দিয়ে আমাদের মধ্যে সারাজীবন বেঁচে থাকবেন।
ক্ষিদ্দা চলে গিয়েছেন। কিন্তু এই তারার চলে যাওয়া কেউ সহজে মেনে নিতে পারছেননা। বাংলার মানুষ যেমন মেনে নিতে পারছেননা তেমনি মেনে নিতে পারছে না টলিপাড়া। যুদ্ধ জয় করে তাঁর ফিরে আসার দিকে চেয়েছিলেন প্রত্যেকে। কিন্তু সব আশা মিথ্যে করে দীপাবলির আলোর দিনে নিভে গেল শেষ আশা। নিভে গেল কিংবদন্তি অভিনেতার জীবনদীপ। এই মহান ব্যক্তির কর্মকান্ডের কথাই সবাই ঘুরে ফিরে বলছেন। এই বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরেই স্মৃতির পাতা ওল্টালেন সাংসদ-অভিনেতা দেব। ‘সাঁঝবাতি’ ছবিতে কিংবদন্তির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন বর্তমান প্রজন্মের এই অভিনেতা। অভিনয় করার সময় সৌমিত্র হয়ে উঠেছিলেন দেবের আদরের ‘ছানা দাদু’ তাই তাকে আঁকড়ে ধরে নিজের টুইটারে দু’জনের একসঙ্গে ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন ‘ছানাদাদু’ তুমি যেখানেই থেকো ভাল থেকো’।
ক্ষিদ্দা নিজের কাজকে বড় ভালোবাসতেন। কোভিড পজিটিভ হওয়ার আগের দিন ও তিনি শুটিং ফ্লোরে অভিনয় করেছেন। কোনোদিন থেমে থাকেননি। জীবিত থাকা অবস্থায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে তিনি জীবনে অনেক কিছু পেয়েছেন তবে তার একটি শেষ ইচ্ছে আছে। সেটি ছিল যে এই দীর্ঘ ৮৫ বছরের জীবনে তিনি যা যা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ভালো খারাপ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন তা আবৃতি হোক কিংবা নাটক বা অভিনয় জীবন সবটাই একটি মাত্র সিনেমার মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তার পরিচালক তিনি নিজেই হতেন তাই নিজেই হাতে কলম নিয়ে লিখে রেখেছিলেন একটি খসড়া। নিজের হাতের তৈরী নিজের জীবনের স্ক্রিপট ।
কিন্তু নিজের জীবদ্দশায় তৈরী হলনা সেই সিনেমা । গল্প হয়ে থেকে গেল খসড়ার পাতাতে। আর এই খসড়া পাওয়া গেল কিংবদন্তির স্টাডি টেবিল এ। না আর এই স্ক্রিপটা থাকবেনা টেবিলে পড়ে। মানুষ জানবে তার জীবনের সব মুহূর্ত। তিনি চলে গেলেও তার ছানা দাদুর অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণের দায়িত্ব এবার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন দেব । সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুর পর ছানাদাদুর ভালো থাকার কথা জানান ঠিক একই ভাবে জানান তাঁর অপূর্ণ ইচ্ছা অর্থাৎ সেই ছবিটি তিনি নিজের হাতে নির্মাণ করবেন এবং সেখানে তিনি নিজে অভিনয় করবেন । সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই বছর ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হতে চলেছে সেই ছবির শুটিংয়ের কাজ কাজ। আর এই ভাবে তিনি তাঁর প্রিয় দাদুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন।