“নমস্কার,কোথায় যাচ্ছেন ?
একটু সাবধান!”…………………… ডায়াবেটিস থাকলেও কিচ্ছু হবে না, একটু চেখে দেখুন ‘কলকাতার রসগোল্লা’ মন হালকা হয়ে যাবে। হ্যাঁ, বিশে দাঁড়িয়ে যদি নব্বইয়ে ফেরা যায় মন্দ হয় কি বলুন? সেইসময় দেবশ্রী কেমন হিল্লোল তুলেছিলেন মাঝ রাস্তায়, পরনে হলুদ ঘাঘরা বা লেহেঙ্গা, লম্বা চুলের বেনুনি, মুখে দুষ্টু হাসি আর সারা জাগানো সেই বিখ্যাত নাচ। সালটা ছিল ১৯৯২। ‘রক্তে লেখা’ ছবিতে দেবশ্রীর লিপে ‘কলকাতার রসগোল্লা’ গানটি তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। ইন্ডাস্ট্রি আজও দেবশ্রীকে ‘কলকাতার রসগোল্লা’ নামেও চেনেন। ৯০ এর দশকে বা তার পরেও অভিনেত্রীরা খোলামেলা ভাবে নিজেদের মেলে ধরতেন না। যতই ক্যামেরার সামনে তাঁরা আসুক কিন্তু রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে সকলের সামনে একটা নাচের প্রদর্শন করা সহজ ব্যপার ছিল না। যেটা দেবশ্রী করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ক্যামেরার সামনে জমিয়ে নাচ করেছিলেন। যেমন ছিল মুখের দুষ্টু এক্সপ্রেশন ঠিক তেমন নিখুঁত নাচ ছিল।
“আর কত রাত একা থাকবো”……………… দুর্গা পুজোর প্যান্ডেলে এখনো দাপিয়ে এই গান চলে। উফ দেবশ্রীর কি শরীরী আবেদন। ওহ, আপনি কি জানেন দেবশ্রী নটরাজ দলের কর্ণধার? একটু ছোটবেলায় ফিরি, সেইসময় মা এবং বড় বোন পূর্ণিমা রায় এর প্রথম নাচের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এই দেবশ্রী প্রথম ভারতীয় লোক নৃত্যকে পাশ্চাত্য মঞ্চে উপস্থাপনা করেন এবং ধ্রুপদী ও লোক নৃত্যের সংমিশ্রণে এক দুর্দান্ত নৃত্য কৌশলীর রচনা করেন। অমন ছিপছিপে শরীর, পটল চেরা চোখ যখন আবেগ নিয়ে, ভেজা শরীরে কোমর দুলিয়ে বলে “আর কত রাত একা থাকবো” তখন যে কত পুরুষের মনে আগুন জলে তা তেনারাই ভালো জানবেন। আমাদের প্রসঙ্গ দেবশ্রীর নাচ ও বোল্ডনেস।
বাংলা ছবিতে এখন তিনি অতীত। কিছুটা অভিমান রয়েছে তাঁর। তবে ১১ মাস বয়স থেকে অভিনয় জীবনের যাত্রা শুরু। মায়ের কোলে করে প্রথম ক্যামেরা ফেসিং। তারপর মায়ের কাছে নাচের হাতেখড়ি। স্টেজে পারফর্ম করতেন চুমকি নাম নিয়ে। ডাক নাম ছিল চুমকি, এই নামেই ছোটবেলায় বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। ভারতীয় লোকনৃত্যের প্রতি তাঁর গভীর আসক্তি ছিল, তাই ১৯৯১ সালে নটরাজ দল প্রতিষ্ঠা করে নিলেন। ভারতের বিভিন্ন স্থানের লোকনৃত্যকে পাশ্চাত্যের মঞ্চে উপস্থাপন করতেন। পাশাপাশি বাংলা চলচিত্রকেও সম মর্যাদা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতেন। দেবশ্রী একদমই টাইম মেপে কাজ করতেন না। নিজের শ্যুটিং শেষ হয়ে গেলেও ফ্লোরে বসে থাকতেন, অন্যানদের অভিনয় দেখতেন। শিখতে চাইতেন। এই শেখার আগ্রহই তাঁকে এনে দিয়েছিল ৪০ টির বেশি পুরস্কার।
পশুপ্রেমি দেবশ্রী যেই বছর ‘লাঠি’ মুভিতে অভিনয় করেন সেই বছর তাঁর জীবনে চরম সময় এসে উপস্থিত হয়। কোন এক অজ্ঞাত কারণে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের থেকে বিচ্ছেদ নেন। হ্যাঁ, ১৯৯৫ সালে তাঁরা আলাদা হয়ে যান। তবে এখনো প্রাক্তম স্ত্রী দেবশ্রীকে ভুলতে পারেননি প্রসেনজিৎ। এদিকে দেবশ্রী ছুঁয়েও দেখেননি ‘বুম্বা, শ্ট রেডি’। এদিকে ১৯৯৪ সালে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে ‘নাগপঞ্চমী’ সিনেমায় প্রথম দেখা যায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। ভাবছেন ইনি কেন এলেন? গুঞ্জনে আছে প্রসেনজিৎের সঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর জুটি হয়তো এই বিচ্ছেদের কারণ। যদিও সবটিই জল্পনা আর কল্পনা। ‘বুম্বা, শ্ট রেডি’ পড়লে হয়তো জানা যাবে আবার নাও জানা যেতে পারে।
২০১১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের একজন মাননীয় বিধায়ক দেবশ্রী রায়। ২০১২ র পর থেকে তাঁকে আর বড় পর্দায় সেইভাবে দেখা যায়নি। এখনো একাকী জীবনেই রয়েছেন ঠিক যেন মহাভারত ধারাবাহিকের ‘সত্যবতী’। হ্যাঁ, ১৯৮৮ সালে বালাজি রাজ চোপড়ার পরিচালনায় ভারতের বিখ্যাত পুরাণকাহিনী মহাভারত অবলম্বনে দূরদর্শন সম্প্রচারিত মহাভারত ধারাবাহিকে সত্যবতীর চরিত্রে অভিনয় করেন। নিজের জীবনও যেন অনেকটা সেই পথেই চলছে তাঁর। ৬০ এর একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছেন তিনি, এখনো নাচ তাঁর প্রাণ, ভালোবাসা, জয়।