Hoop PlusTollywood

Prosenjit-Rituparna: ক্যামেরার পিছনে প্রসেনজিতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক ছিল ঋতুপর্ণার!

বায়োস্কোপের যুগ থেকেই বারবার পরকীয়া ও সম্পর্ক ঘটিত সমস্যা নিয়ে বিনোদন জগতে হয়ে এসেছে পোস্টমর্টেম। সেযুগে নায়িকারা আসতেন লালবাতি এলাকা থেকে। তাঁদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে চাইতেন তৎকালীন শৌখিন প্রযোজকরা। ব্যতিক্রম ছিল না থিয়েটারের মঞ্চ। কিন্তু যুগ বদলে গিয়েছে। সিনেমা ক্রমশ হয়েছে ফিল্ম। উন্নত হয়েছে থিয়েটার। তবু কোথায় যেন সেই বিতর্ক পরিবর্তিত হয়নি। একটি ফিল্ম নিয়ে বর্তমানে চর্চা হচ্ছে খুব। নাম ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’। এই ফিল্মের কাহিনী মূলতঃ চর্চার বিষয় হয়ে উঠতে পারছে না। কারণ এখনও অবধি একদা সুপারহিট জুটিকে নিয়ে আলোচনা করতেই অধিকাংশ দর্শক পছন্দ করছেন।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Filmfare (@filmfare)

বিতর্ক অথবা সম্পর্ক, তা কি আদৌ ছিল? নাকি সবটাই গুজব। কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee) ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta)। নব্বইয়ের দশকে একের পর এক হিট ফিল্ম উপহার দিয়েছেন এই জুটি। তাঁদের অনস্ক্রিন রসায়ন দর্শকদের পছন্দ ছিল। ফলে একসময় গুঞ্জন রটে প্রসেনজিৎ-এর সাথে অফস্ক্রিন ঋতুপর্ণার সম্পর্ক রয়েছে। সেই সময় ঋতুপর্ণা অবিবাহিত থাকলেও প্রসেনজিৎ-এর দ্বিতীয় বিয়ে বিচ্ছেদের সম্মুখীন। তাঁদের অনস্ক্রিন ঘনিষ্ঠতা দেখে একশ্রেণীর দর্শকদের ধারণা হয়েছিল সাতপাকে বাঁধা পড়বেন তাঁরা। তবে এটাই হয়তো দক্ষ অভিনয় যা দর্শকদের বিশ্বাস করতে শেখায় নায়ক-নায়িকার প্রেমে। মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)-এর সাথে মহানায়িকা সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)-কে নিয়েও তাঁদের অনুরাগীদের একাংশ এমন ধারণা পোষণ করতেন। মানতেই হবে, যদি দর্শকদের চোখে কোনো জুটি রিয়েলিস্টিক লাগে, তার অর্থ সেই জুটি ভীষণ ভাবে সফল। একই ঘটনা ঘটেছিল প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার ক্ষেত্রেও।

কিন্তু শ্রীলেখা মিত্র (Sreelekha Mitra) দাবি করেছিলেন, প্রসেনজিৎ-এর সাথে ঋতুপর্ণার সম্পর্কের জেরেই নাকি বাংলা ফিল্ম ‘অন্নদাতা’-র পর তিনি টলিউডে নায়িকা হতে পারেননি। অথচ এই ফিল্মের নির্মাতা অশোক ধানুকা (Ashok Dhanuka) কিন্তু প্রথমে নায়িকার চরিত্রের প্রস্তাব ঋতুপর্ণাকে দিয়েছিলেন। ঋতুপর্ণা সময় দিতে না পারার ফলে প্রস্তাব আসে শ্রীলেখার কাছে। তৎকালীন সময় রূপোলি পর্দা জুড়ে শুধুই ছিলেন ঋতুপর্ণা। কারণ শ্রীলেখা বা অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya)-রা বাংলা ধারাবাহিকের নায়িকা ছিলেন। সেই সময় নির্মাতা ও একশ্রেণীর দর্শক বিভাজন করতেন ছোট পর্দা ও রূপোলি পর্দার। নির্মাতারা মনে করতেন, ছোট পর্দার অভিনেত্রীরা বক্স অফিস জয় করতে পারবেন না। দর্শকদের একাংশ ছোট পর্দার অভিনেত্রীদের বড় পর্দায় মেনে নিতে পারতেন না। কিন্তু বর্তমানে সম্পূর্ণ ধারণা বদলে গিয়েছে। নায়ক-নায়িকারা একই সাথে ছোট পর্দা ও বড় পর্দায় অভিনয় করছেন। এসেছে ওয়েব সিরিজের যুগ। বদলে গিয়েছেন দর্শকরাও। কিন্তু কিছুটা হলেও রক্ষণশীল মনোভাবের কারণেই দক্ষ অভিনয় সত্ত্বেও তৎকালীন সময় শ্রীলেখা বা অপরাজিতাদের কথা ভাবেননি নির্মাতারা।

আটচল্লিশটি ফিল্মে একসাথে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা। কিন্তু একসময় ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের কিছু নীতিবাগীশ প্রসেনজিৎ-এর সাথে ঋতুপর্ণার সম্পর্কের গুঞ্জনে ইন্ধন দিতে থাকেন। শেষ অবধি একে অপরের সাথে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই জুটি। এরপর বিয়ে হয়ে যায় ঋতুপর্ণার। তাঁর বিয়ে নিয়েও রটনা করতে ছাড়েননি কিছু অভিনেত্রী। তাঁদের মতে, ঋতুপর্ণার বিয়ের দিন উপস্থিত ছিলেন প্রসেনজিৎ। তাঁকে দেখে অত্যন্ত মর্মাহত মনে হচ্ছিল। হয়তো ওই অভিনেত্রীরা আশা করেছিলেন, তাঁদের ‘প্রিয়’ বুম্বাদা ঋতুপর্ণার বিয়েতে নাচ করবেন! এছাড়া আর কি বলা যেতে পারে?

কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যায়, প্রসেনজিৎ-এর সাথে ঋতুপর্ণার সম্পর্কের গুঞ্জন ছড়িয়ে এই জুটি ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল। জুটি অচিরেই ভেঘে যাওয়ার ফলে দুজনের কেরিয়ারে প্রভাব পড়েছিল। ঋতুপর্ণা বিয়ের পর বহুদিন বড় পর্দা থেকে দূরে ছিলেন। প্রসেনজিৎ অভিনীত ফিল্মগুলি দর্শকদের মনে দাগ কাটতে পারছিল না। প্রকৃতপক্ষে, প্রসেনজিৎ-এর সাথে তাঁরা অন্য কারও জুটি মানতে পারছিলেন না। এই ঘটনাটি ঘটাতে চেয়েছিলেন ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের ‘রাজনীতিবিদ’-রা। কিন্তু সৃজিত মুখার্জী (Srijit Mukherjee) নির্মিত ‘অটোগ্রাফ’-এর মাধ্যমে আবারও ঘুরে দাঁড়ান প্রসেনজিৎ। বুঝিয়ে দেন তিনিই ‘ইন্ডাস্ট্রি’। অভিনয় জগতে ফিরে আসেন ঋতুপর্ণাও। প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণাকে জুটিকে ‘প্রাক্তন’-এর মাধ্যমে পর্দায় ফিরিয়ে আনেন শিবপ্রসাদ (Shibaprashad)- নন্দিতা (Nandita)।

বারবার ঋতুপর্ণা বলেছেন, একসাথে কাজ করার সুবাদে তাঁরা শুধুই বন্ধু ছিলেন। কিন্তু অনেকেই তা বিশ্বাস করতে রাজি হননি। বন্ধু ছিলেন বলেই খুব হালকা ভাবে প্রসেনজিৎ-এর প্রযোজনায় তৈরি ফিল্মের নাম হতে পারে ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’। প্রেমের সম্পর্ক থাকলে ফিল্মের নাম এটা হতে পারত না। এতদিন পরে প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা দুজনেই বুঝেছেন, তাঁরা রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন। ফলে তাঁদের সম্পর্কের গুঞ্জনকেই মজা করে ব্যবহার করলেন তাঁরা। তৈরি হল ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’। জমিয়ে হল প্রোমোশন। দুই তারকা ক্যামিও করলেন। এরপরেও কি বলে দিতে হবে প্রসেনজিৎ-এর সাথে ঋতুপর্ণার সম্পর্কের রসায়ন প্রকৃতপক্ষে কি? অধিক কৌতূহল হলে বরং ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’ দেখে নিন নিকটবর্তী প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে।

Related Articles