ইন্ডাস্ট্রিতে গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে পঁচিশ বছর পার করে ফেললেন বাংলা টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা বাদশা মৈত্র (Badshah Moitra)। রাজনীতির অলিন্দে পরিবর্তন ঘটলেও তিনি এখনও অবধি বামপন্থী নীতিতেই বিশ্বাসী। সেলিব্রিটি হওয়া সত্ত্বেও বাদশাকে নিয়ে কোনও গসিপ শোনা যায় না। তিনি তাঁর সম্পর্কগুলোকে ব্যক্তিগত রাখতে পছন্দ করেন। তা নিয়ে চর্চিত হতে চান না। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে পরিবারকেন্দ্রিক বাদশা বাংলা দূরদর্শনের বিখ্যাত সিরিয়াল ‘জন্মভূমি’-র মাধ্যমে অভিনয়ে ডেবিউ করেছিলেন।
View this post on Instagram
সেই সময় এত চ্যানেল ছিল না। ছিল না ওটিটি। ফলে সময় নিয়ে, অত্যন্ত যত্ন করে ও ভাবনা চিন্তার মাধ্যমে তৈরি হত একটি সফল প্রজেক্ট। বাদশা মনে করেন, বর্তমানে চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ার ফলে ধারাবাহিকের সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কাজ হলেও সৃজনশীলতার অভাব রয়েছে। একের পর এক এন জি হয়ে নিখুঁত অভিনয় তৈরি করার মতো পরিশ্রম এখন কেউ করে না। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই নেমে গিয়েছে ধারাবাহিকের মান। বাদশার মতে, আগে যাঁরা সিরিয়ালে অভিনয় করতে আসতেন, তাঁরা অভিনয় শিখে আসতেন। সেই সময় পরিশ্রমের পাশাপাশি অভিনয়টাও খুব জরুরি ছিল। কিন্তু ইদানিং অভিনয় না জেনেই অনেকে দিব্যি অভিনয় করছেন। যে ধাঁচে কাজ হয়, তাতে নতুন মুখ তুলে আনতে গিয়ে এই ধরনের আপোষ করা শিখে গিয়েছে ইন্ডাস্ট্রি।
তবে এই নতুন মুখের মধ্যেও কয়েকজন ভালো অভিনয় করেন বলে জানিয়েছেন বাদশা। তাঁর মতে, যদি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বা প্রযোজক সোজাসুজি বলতে পারেন, অভিনয় না শিখে এলে নেবেন না, তাহলে হয়তো সমস্যাটা কিছুটা হলেও মিটবে। তাছাড়া বর্তমানে এতগুলি ধারাবাহিকের কাজ করতে গিয়ে শুটিংয়ের যে তাড়া থাকে তাতে অভিনয় ও পরিচালনা শেখার সুযোগ খুব কম। ফলে অভিনয় শিখে এলে এই ধরনের সমস্যা থাকে না। কাজের মানও ভালো হয়। একসময় বাদশাকে ফিল্মে ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেলেও ইদানিং তাঁকে ফিল্মে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ বাদশা নিজেও জানেন না। তিনি আজও তাঁর অভিনয়কে নিখুঁত করতে তুলতে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন। বাদশা মনে করেন, ফিল্মের দর্শককে তিনি অনেক কিছু দিতে পারতেন। নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখনও তার সুযোগ হয়নি। তবে টলিউড রাজনীতি করতে গিয়ে পেশাদার হতে পারেনি। কিন্তু বলিউড যথেষ্ট পেশাদার।
View this post on Instagram
বাদশা মনে করেন, ইনস্টিটিউট থেকে যেমন অভিনয় সম্পর্কে প্রথাগত শিক্ষা লাভ করা যায়, তেমনই থিয়েটার থেকেও অভিনয় শেখা যায়। তিন দিকে দর্শকের সামনে অভিনয় করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মত পোষণ করেন তিনি। এর পাশাপাশি মানুষের সাথে মিশে তাঁদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাহলে চরিত্র অনুযায়ী অভিনয় শেখাটা সহজ হয়ে যায়। বাদশা নিজেও থিয়েটার, যাত্রা থেকে অভিনয় শিখেছেন। এছাড়াও ধারাবাহিক, টেলিফিল্ম, বড় পর্দা, ওটিটি সবদিকেই নিজের বিস্তার ঘটিয়েছেন তিনি। নামী যাত্রাদল ‘নট্টকোম্পানী’ থেকে যাত্রা করার অফার পেয়ে দু’বার ভাবেননি তিনি। কারণ তিনি জানেন, অভিনয়কে পোক্ত করতে থিয়েটার ও যাত্রা সাহায্য করে। কারণ শেষের সারিতে বসা দর্শকদের কাছেও নিখুঁত অভিনয় পৌঁছে দিতে হয়। এছাড়াও বাদশা কাজের ফাঁকে বেড়াতে যান, প্রচুর মানুষের সাথে মেশেন। ফলে তাঁর এই অভিজ্ঞতাও অভিনয়ের সময় কাজে লাগে।
অভিনয়ের বাইরে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি বাদশার বিশেষ পছন্দের। সুন্দরবনে বাঘ গণনা, কুমীর গণনার সাথে তিনি নিয়মিত ভাবে যুক্ত। সেখানে ম্যানগ্রোভের কাদার মধ্যে নেমে ছবি তুলেছেন তিনি। বিভিন্ন ধর্মীয় মেলাতেও ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন বাদশা। কারণ সেখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সমাগম ঘটে। বাউলদের নিয়ে কাজ করেন বাদশা। এর পাশাপাশি তাঁদের একটা দল রয়েছে যাঁরা গ্রামের চাষাবাদ ও উন্নয়নের জন্য কাজ করেন।
এই মুহূর্তে স্টার জলসার সিরিয়াল ‘ধুলোকণা’-য় অভিনয় করছেন বাদশা। কয়েকদিন আগে ওটিটির জন্য একটি ফিল্মের শুটিং করতে পুরুলিয়ায় গিয়েছিলেন। কাজটি বেশ পছন্দ হয়েছে তাঁর। এছাড়াও মার্চে একটা কাজ শুরু কথা রয়েছে।
View this post on Instagram