তারার দেশে পাড়ি দিয়েছেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee)। 15 ই ফেব্রুয়ারি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে “গীতশ্রী নেই”। কিন্তু নেই-এর মাঝেও আছেন তিনি। আজ সকলের মনে পড়ে যাচ্ছে, তাঁকে ঘিরে কত না স্মৃতি। কিংবদন্তী ছিলেন সন্ধ্যা। নব্বইয়ের কোঠায় পৌঁছেও অবলীলায় নিখুঁত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গেয়ে দিতেন উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান (Ustad Bade Golam Ali Khan)-এর ছাত্রী। কিন্তু বাস্তব জীবনে সন্ধ্যা ছিলেন না অহংকারী। বরং তাঁর গানের মতোই মিষ্টি স্বভাবের।
View this post on Instagram
একবার স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত (Swagatalaxmi Dasgupta) গিয়েছেন ওনার বাড়ি। স্বাগতালক্ষ্মী, সন্ধ্যাকে বলতেন সন্ধ্যা মা। তাঁর স্বভাব ছিল, সন্ধ্যার চেয়ারে সামনে গিয়ে তাঁর পায়ের কাছে বসা। সন্ধ্যা যত বলেন, “পাগল মেয়ে, চেয়ারে উঠে বোস”, নাছোড়বান্দা স্বাগতালক্ষ্মী। তাঁর গীতশ্রীর পায়ের কাছে বসতে ভালো লাগে। গল্প করতে করতে একটু পরে নিজেই উঠে গেলেন সন্ধ্যা। স্বাগতালক্ষ্মীর জন্য ভেজে নিয়ে এলেন গরম ঘিয়ে ভাজা লুচি, আলুরদম। সঙ্গে ছিলেন তাঁর নিজের হাতে বানানো নারকেল নাড়ু। ঘিয়ে ভাজা লুচি আস্তে আস্তে খেলে গলা নাকি ভালো থাকে, বিশ্বাস ছিল সন্ধ্যার।
View this post on Instagram
কয়েকদিন আগেও বকেছেন হৈমন্তী শুক্লা (Haimanti Shukla)-কে। হঠাৎই হৈমন্তীর কাছে ফোন। সন্ধ্যা জানতে পেরেছেন, বাড়িতে গান শেখাচ্ছেন হৈমন্তী। হৈমন্তী বললেন, বাড়িতে বসে সময় কাটে না। তাই একটু-আধটু গান শেখান। পাশাপাশি ছাত্রীদের সাথে গল্প করে সময় কেটে যায়। সন্ধ্যা বললেন, ছাত্রীদের স্কেলে গান না গাইতে। হৈমন্তী যেন গান শেখানোর সময় নিজের স্কেলেই গান। তাহলে তাঁর গলার ক্ষতি হবে না। সন্ধ্যার প্রয়াণে টিভি চ্যানেলে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বারবার ভিজে আসছে হৈমন্তীর চোখ। মাতৃহারা হলেন তিনি।
View this post on Instagram
শুধুমাত্র বড়রাই নয়, নব্বইয়ের দশকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান প্রভাবিত করেছিল শিশুদেরকেও। সর্বভারতীয় রিয়েলিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন এক গায়িকা। তিনি জানিয়েছিলেন, নব্বইয়ের দশকে তাঁর বাবা এনে দিয়েছিলেন একটি টেপ রেকর্ডার। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর বাবার প্রিয় শিল্পী। তাই তাঁর ক্যাসেট কিনে এনেছিলেন গায়িকার বাবা। কিন্তু ভদ্রলোক ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি, তাঁর একাদশবর্ষীয়া কন্যা টেপ রেকর্ডারে শুনে তুলে নেবে সন্ধ্যার আইকনিক ‘আমি যে জলসাঘরে’। রীতিমত কঠিন এই গানটি ওই বয়সেই তুলে বাড়ির লোককে শুনিয়েছিলেন ওই গায়িকা। বর্তমানে ইউটিউবার হিসাবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। তবে তাঁর গায়িকার পরিচয় কোনো অজানা কারণে অন্তরালে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু এক অনুরাগী তাঁকে চিনে ফেলার পর এই ঘটনাটির আবারও অবতারণা হয়েছিল। আসলে বাঙালির মননে সন্ধ্যা চারিয়ে গিয়েছেন সুর হয়ে। আধেক চাঁদ দেখে আজও বাঙালি গেয়ে ওঠে ‘ঘুম ঘুম চাঁদ’। পার্থিব শরীর তো পঞ্চভূতে বিলীন হওয়ার জন্য। কিন্তু শিল্প চিরন্তন। তাই শিল্পীর মৃত্যু নেই। সন্ধ্যাসঙ্গীত আবর্তিত হতে থাকবে মানুষের মনে, সুরের টানে।
View this post on Instagram