কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তি পেতে চলেছে বাংলা ফিল্ম ‘টনিক’। এই ফিল্মে অভিনয় করেছেন শকুন্তলা বড়ুয়া (Shakuntala Barua), দেব (Dev), পরাণ (Paran)। এতগুলি বছর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কেটে গেলেও শকুন্তলার সাজ অপরিবর্তিত। বড় টিপ, খোঁপায় ফুল, ঠোঁটে লিপস্টিক। এই বয়সেও কাজ ছাড়া বাড়িতে বসে থাকতে পছন্দ করেন না তিনি। তবে এবার শারীরিক কারণে ‘টনিক’ ফিল্মের শুটিংয়ের সময় একটু অসুবিধা হয়েছিল তাঁর।
View this post on Instagram
‘টনিক’-এর শুটিং হয়েছে দার্জিলিঙ-এ। সেখানে খুব ভালো একটি হোটেলে উঠেছিলেন শুটিং ইউনিট-এর সদস্যরা। কিন্তু পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটাচলা করতে কষ্ট হত শকুন্তলার। তাই শুটিং ইউনিট থেকে তাঁর জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যে হোটেলে শকুন্তলা উঠেছিলেন, সেটি পাহাড়ের অনেকটা উচ্চতায় থাকায় তাঁর উপরে উঠতে কষ্ট হত। দেবকে বলায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কথা বলে শকুন্তলার জন্য অন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। দেবের প্রশংসা করে শকুন্তলা জানালেন, তিনি এর আগেও দেবের সাথে কাজ করেছেন।
অভিজিৎ সেন (Abijit Sen) পরিচালিত ‘টনিক’-এ শকুন্তলার চরিত্রের নাম উমা সেন। উমা যেন পুরোপুরি শকুন্তলা। এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে উচ্ছ্বসিত বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। অনেক বড় বড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন শকুন্তলা। তাঁদের কাজের মতো ডিটেলিং অভিজিৎ-এর কাজেও খুঁজে পেয়েছেন তিনি। শট পছন্দ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়তেন না অভিজিৎ। প্রয়োজনে দু’দিন ধরে একটি শট নিয়েছেন তিনি।
View this post on Instagram
তবে শকুন্তলা মনে করেন, তিনি প্রাচীনপন্থী। কিন্তু তার পাশাপাশি এটাও মানেন, পরিবর্তন জীবনের নিয়ম। কখনও কখনও আধুনিকতার কিছু রকম-সকম মেনে নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু সবকিছু মানিয়ে নিয়ে তার মধ্যেও নিজস্বতা বজায় রাখেন শকুন্তলা। এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থাকলেও স্লিভলেস পরেননি তিনি,;শুধুমাত্র এই মানসিকতা থেকেই। তবে লেস, নেটের পোশাক পছন্দ তাঁর।
টেলিভিশনে শকুন্তলা শেষ কাজ ‘ক্ষীরের পুতুল’ ধারাবাহিক। কিন্তু তারপর থেকে অনেকেই কাজের আশ্বাস দিলেও আদতে কিছুই হয়নি। যা জীবনে করেননি, তাই করতে হয়েছে শকুন্তলাকে। এক নামী প্রযোজককে ফোন করে কাজ চাইতে হয়েছে। অন্ন সংস্থানের জন্য নয়, শুধুমাত্র কাজের খিদে থেকেই কাজ করতে পছন্দ করেন শকুন্তলা। কিন্তু সেই প্রযোজক যোগাযোগ করেননি। তবে অন্য এক প্রযোজনা সংস্থা যোগাযোগ করেছিল। শকুন্তলার বয়সজনিত কারণে একটি আলাদা মেকআপ রুমের প্রয়োজন ছিল। সমবয়সী কারো সঙ্গে রুম শেয়ার করতে অসুবিধা না থাকলেও অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের ভিড়ে বসতে অস্বস্তি হয় তাঁর। লুক টেস্ট হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীকালে সেই প্রযোজনা সংস্থার তরফে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। অন্য এক অভিনেত্রীকে সেই চরিত্রে কাস্ট করা হয়েছিল। পরে সেই সিরিয়ালটির হিন্দি ভার্সনে শকুন্তলার মেয়ে রাজসী বিদ্যার্থী (Rajshi Vidyarthi)-র কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব এলেও তিনি নাকচ করেছিলেন। কারণ তিনি তখন ‘উও লেড়কি হ্যায় কাঁহা’- র কাজ করছেন। থিয়েটার ও ফিল্মে ভালো অভিনয় করলেও রাজসী বেশি পরিচিত তাঁর গানের জন্য।
View this post on Instagram
বংশ পরম্পরায় শকুন্তলার পরিবারে রয়েছে গানের চর্চা। তাঁর মা দীপ্তি ভট্টাচার্য (Dipti Bhattacharjee) বেগম আখতার (Begum Akhtar)-এর ছাত্রী ছিলেন। তিনি ঠুমরি গাইতেন। সারাদিন বাড়িতে চলত গানের রেওয়াজ। আসতেন তৎকালীন নামী গায়ক-গায়িকারাও। কিন্তু শকুন্তলার বাবা পছন্দ করতেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। ফলে তিনি শকুন্তলাকে গীতবিতানে ভর্তি করে দেন। সেখান থেকে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড, গীতভারতী হয়েছিলেন শকুন্তলা। দশ-বারো বছর শিখেছেন বাবার পছন্দের শিল্পী সুচিত্রা মিত্র (Suchitra Mitra)-র কাছে। সেই সময় বেরিয়েছিল তাঁর প্রথম গানের রেকর্ড ‘হৃদয় আমার প্রকাশ হল’। কিন্তু যাত্রা করতে গিয়ে শকুন্তলার গলা নষ্ট হয়ে গেল। ফলে এখন গান না গাইলেন ছাত্র-ছাত্রীদের গান শেখান। নিজেও গান শোনেন। একসময় লরেটো হাউসেও গান শিখিয়েছেন তিনি।
অবসর সময়ে আগে ছবি আঁকতেন শকুন্তলা। এখন কবিতা লেখেন, রান্না করতে ভালোবাসেন। তাঁর জামাই আশীষ বিদ্যার্থী (Ashish Vidyarthi) পছন্দ করেন শকুন্তলার রান্না। ‘টোয়েন্টি ফোর’-এর শুটিংয়ের সময় একদিন তিনি বলেছিলেন শকুন্তলাকে মাছ রেঁধে দিতে। শকুন্তলার হাতের রান্না করা মাছ প্যাক করে শকুন্তলাকেও সঙ্গে নিয়ে সেটে গিয়েছিলেন। অনিল কাপুর (Anil Kapoor) সেই মাছ খেয়ে বলেছিলেন, পৃথিবীতে এত মাছের পদ খেয়েছেন। কিন্তু এত সুস্বাদু রান্না খাননি। ‘দহন’-এর সেটে ইয়াখনি পোলাও রান্না করে খাইয়েছিলেন শকুন্তলা।
কলকাতার বাড়িতে বোনের সাথে থাকেন শকুন্তলা। কিন্তু মেয়ে বারবার বলেন মুম্বইয়ে তাঁর কাছে চলে আসতে। শোনেন না শকুন্তলা। কলকাতার আকর্ষণ তাঁর কাছে অনবদ্য।
View this post on Instagram