বলিউডে শুরুটা কোথা থেকে করবেন, বুঝতে পারছিলেন না সানি (sunny leone)। পৃথিবীর চোখে তাঁর অস্তিত্ব শুধুই একজন পর্ন স্টার। কারেনজিৎ(karenjeet kaur bhohra) কিন্তু জানত, তাকে অনেক টাকা রোজগার করতে হবে। কানাডায় তাঁর পরিবারকে সম্মানজনক স্থান দিতেই হবে।
কানাডা…….বলা যায়, একটা ছোটখাট পঞ্জাব। ভারতের পঞ্জাবিদের কাছে কানাডার অর্থ স্বপ্নের জগৎ। কিন্তু সেখানে পঞ্জাবি পরিবারগুলির প্রতিনিয়ত লড়াই চলে কখনও নিজেদের আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে, কখনও বা দো-আঁশলা হতে গিয়ে। কানাডার বুকে জন্ম নেওয়া পঞ্জাবি ছেলেমেয়েদের পঞ্জাবি সংস্কৃতির থেকে বেশি বিশ্বাস পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে। অন্য সকলের মতোই কারেনজিৎ সকলের সঙ্গে মিশেও সকলের মতো হতে পারে না। তার অধিকাংশ বন্ধুর বয়ফ্রেন্ড রয়েছে। চুম্বন, যৌন সম্পর্ক এখানে অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু কারেনজিৎ কানাডায় জন্ম নিয়েও নিজের ভিতরে প্রতিপালিত হওয়া ঘরোয়া সংস্কৃতি ভুলতে পারে না। কারেনজিৎ এতটাই আনাড়ি, সে নিজেকে টমবয় বলতেই পছন্দ করে এবং হাসির খোরাক হয়। আসলে ফেস প্যাক লাগানোর মতো বিলাসিতার চিন্তা তার পক্ষে আসা অসম্ভব।
বাবার চাকরি চলে যাওয়া তার মাকে অ্যালকোহলিক করে তুলেছে। এর মধ্যেই আত্মীয়ের বাড়িতে তাঁদের গলগ্রহ হয়ে থাকা পোষাচ্ছিল না কারেনজিৎ-এর। ততদিনে তারা কানাডা ছেড়ে চলে এসেছে মিশিগানে। সে পার্ট টাইম কাজ নিল একটি জার্মান বেকারিতে। কিন্তু টিকতে পারল না সেখানে। এরপর কাজের সুযোগ এল একটি ট্যাক্স ফার্ম থেকে। কিন্তু সেখান থেকেও কিছুদিনের মধ্যেই বিতাড়িত। এরপর মাথায় চাপল মডেলিং-এর ভূত। মডেলিং করতে করতেই একসময় ‘পেন্টহাউস’ ম্যাগাজিন আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতায় জিতে ‘পেন্টহাউস পেট অফ দি ইয়ার’ হল কারেনজিৎ। প্রতিযোগিতায় প্রাপ্ত অর্থ খুব জরুরী ছিল সংসার চালানোর জন্য, ভাই-এর পড়ার জন্য। কারেনজিৎ ভেবেছিল, অ্যাডাল্ট ম্যাগাজিন ‘পেন্টহাউস’-এ চুক্তি অনুযায়ী এক বছরের জন্য মডেলিং করে স্বজাতের কোনো ছেলেকে বিয়ে করে নেবে। কিন্তু যেদিন সংসার চালানোর প্রয়োজনে মাকে বংশানুক্রমে প্রাপ্ত গয়না বিক্রি করতে দেখল, সেদিন বুঝে নিল তার দায়িত্ব। কারেনজিৎ জানত, তার প্রকৃত নামে ‘পেন্টহাউস’-এর জন্য কাজ করলে পরিবারের সম্মানে আঁচ আসতে পারে। নিজের ভাইয়ের ডাকনাম ‘সানি’ মনে ধরল। ‘লিওনি’ পদবীটা অবশ্য এক পর্ন ফিল্ম প্রযোজকের দেওয়া। কখন কারেনজিৎ কৌর হারিয়ে গেল সানি লিওনি-র আড়ালে, তা তিনি নিজেই বুঝতে পারেননি।
View this post on Instagram
যখন হুঁশ ফিরল, তখন হাতে অগাধ টাকা থাকলেও সম্মান অবশিষ্ট নেই। যে পরিবারের জন্য একদিন পর্ন ফিল্মে অভিনয় করেছিলেন, সেই পরিবার মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। পাশে রয়েছেন শুধু তাঁর প্রেমিক ড্যানিয়েল ওয়েবার। ‘পেন্টহাউস’-এর কভারেই প্রথম সানিকে দেখেছিলেন ড্যানিয়েল। তিনি জানতেন সানির পর্নোগ্রাফির কথা। এইসময় জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘বিগ ব্রাদার’-এর ভারতীয় সংস্করণ ‘বিগ বস-5′ থেকে ডাক পেলেন সানি। ‘বিগ বস’-এর নির্মাতারা সেদিন একজন পর্নস্টারকে শুধুমাত্র শোয়ের টিআরপি বাড়াতে ডেকেছিলেন। ‘বিগ বস’-এর ঘরে বসে সানি ভেবেছিলেন, বলিউডে যদি একটা সুযোগ পাওয়া যেত! সেই সময় মহেশ ভাট (mahesh bhatt) অতিথি হয়ে এসেছেন ‘বিগ বস’-এর প্রতিযোগীদের সাথে দেখা করতে। মহেশের কাছ থেকে বিগ বসের ঘরেই সানি পেলেন ‘জিসম-2′-এর অফার। ততদিনে কালার্স চ্যানেলের দিকে আঙুল উঠেছে পর্নস্টার নিয়ে এসে পর্নোগ্রাফি প্রোমোট করার মিথ্যা অভিযোগের। বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে বিজেপি। সানিকে বের করে দেওয়া হল বিগ বসের ঘর থেকে। সানি কিন্তু ফিরে গেলেন না পর্নোগ্রাফির জগতে।
বলিউডের মাটিতে লড়াই করে নিজেকে অভিনেত্রী রূপে প্রতিষ্ঠিত করলেন। নিজেই বলেছেন, তিনি খুব ভালো অভিনেত্রী নন। সানির জীবন নিয়ে তৈরি হল ওয়েব সিরিজ ‘কারেনজিৎ কৌর’। স্বত্ব কিনল ‘জি ফাইভ’। একটি মেয়ের তথাকথিত অধঃপাতে যাওয়ার কারণ ভেসে উঠল পর্দায়। সানি বিয়ে করলেন ড্যানিয়েলকে। প্রথমে একটি কন্যাসন্তান দত্তক নিয়েছিলেন তাঁরা। এরপর সারোগেসির মাধ্যমে এল দুই যমজ পুত্রসন্তান। এখনও বিগ বসের ঘরে যান সানি। কিন্তু কেউ বিক্ষোভ দেখানোর সাহস পান না। কারণ সানি এখন একজন সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব। তবুও অনেকেই এখনও সানিকে দেখেছিলেন নাক সিঁটকান, কিন্তু তাঁরাই লুকিয়ে গুগলে সার্চ করেন ‘পেন্টহাউস’ ম্যাগাজিনের কভারে সানির নগ্ন ছবি। প্রকৃতপক্ষে অতি সহজে একটি মেয়ের চরিত্রকে কাঠগড়ায় তোলার ট্র্যাডিশন কি এত সহজে এড়ানো যায়?
View this post on Instagram
