বাঙালি জাতি আজও প্রেমিক-প্রেমিকা দেখলে বলে ওঠেন “একদম উত্তম-সুচিত্রা”। যুগের পর যুগ পেরিয়ে মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar) ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)-এর অনস্ক্রিন রোম্যান্স অনুরাগীদের মনে অম্লান হয়ে রয়েছে। অথচ কেরিয়ারের শুরু থেকেই দুজনে বিবাহিত ছিলেন। উত্তম বিয়ে করেছিলেন গৌরী দেবী (Gauri Debi)-কে। সুচিত্রার সাথে বিয়ে হয়েছিল দিবানাথ সেন (Dibanath Sen)-এর। এখনও অবধি বলা হয়, বিয়ে করলে নাকি নায়ক-নায়িকার কদর কমে যায়। কিন্তু শতক জুড়ে কদর কমেনি উত্তম-সুচিত্রার।
অনেকে মনে করেন, উত্তম ও সুচিত্রা হয়তো হয়তো একসাথে অভিনয় করতে করতে একে অপরের প্রতি দূর্বলতা অনুভব করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সুচিত্রা কোনোদিন এই ধাতের মেয়ে ছিলেন না। তাঁর পারিবারিক জীবন পিকচার পারফেক্ট না হলেও অত্যন্ত ব্যক্তিত্ব সম্পন্না ছিলেন সুচিত্রা। তাবড় নায়িকারা তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারতেন না। এতগুলি ফিল্মে একসাথে অভিনয়ের পরেও সুচিত্রা, উত্তমের সাথে সম্পর্কে জড়াননি বলেই উত্তমের শেষ দিনটিতে গৌরী দেবী সুচিত্রাকে বলেছিলেন, তাঁর দেওয়া অন্তিম শ্রদ্ধার মালা উত্তমের গলায় পরিয়ে দিতে।
View this post on Instagram
তবে শোনা যায়, উত্তম নাকি একবার সুচিত্রাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন! উত্তম, সুচিত্রাকে তাঁর প্রকৃত নাম ‘রমা’ বলেই ডাকতেন। তিনি বলেছিলেন, রমার সাথে যদি তাঁর বিয়ে হত! সুচিত্রার উত্তর ছিল চমকপ্রদ। তিনি বলেছিলেন, সেই বিয়ে কোনোদিন সুখের হত না। কারণ দুজনেই নিজের কেরিয়ারে সাফল্য চাইতেন। ফলে দেখা দিত ব্যক্তিত্বের সংঘাত।
অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ছিলেন সুচিত্রা। গুরুত্ব দিতেন নিজের পরিবারকে। তাঁর প্রখর ব্যক্তিত্বকে মেনে নিতে পারেনি তৎকালীন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। ফলে উত্তমের মৃত্যুর পর সুচিত্রা ‘ফরিয়াদ’, ‘শ্রাবণ সন্ধ্যা’-র মতো ফিল্মে অনবদ্য অভিনয় করলেও তাঁকে তাঁর চেহারা ও বয়স নিয়ে কটাক্ষ করতে থাকতেন অনেকে। এত বছর হিট ফিল্ম উপহার দেওয়ার পর এই ধরনের আচরণ সহ্য করতে না পেরে আত্মসম্মান নিয়ে অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন সুচিত্রা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর মুখ আর কাউকে দেখতে দেননি। মৃত্যুতেও উন্মোচন হয়নি সেই আবরণ।
View this post on Instagram