Hoop Story

কলকাতার খুব কাছেই রয়েছে একটুকরো শান্তিনিকেতন, নামমাত্র খরচে ঘুরে যান মনোরম পরিবেশে

শীতকাল মানেই আমাদের কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছা করে, তবে সব সময় ছুটি পাওয়া যায় না। আর লিস্টে যে সমস্ত বেড়াতে যাওয়ার জায়গাগুলো থাকে, সেগুলো কিন্তু এই শীতকালে ছুটির দিনে ভীষণ ভিড় হয়। যদি ভিড়টা এড়াতে চান, তাহলে হুগলি জেলার কোন্নগরের অবনীন্দ্রনাথের বাগান বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে পারেন। যদিও এখন জায়গাতে বেশ পরিচিতি লাভ করার পরে ছুটির দিনে এখানেও ভিড় হয়।

বেশ কিছুদিন ধরে বাড়িটি কিন্তু একেবারেই জরাজীর্ণ অবস্থাতেই পড়েছিল। পরবর্তীকালে বাড়িটি সংস্করণ করানো হয়, আর তারপর থেকেই মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয় অসাধারণ ঐতিহ্যবাহী এই জায়গাটি। গঙ্গার পাড়ে সুন্দর এই জায়গাটি কিন্তু ঘুরে বেড়াতে বেশ ভালো লাগবে। বর্তমানে পার্কে বা গার্ডেনে বাচ্চাদের নিয়ে গেলে তারা খুব একটা মজা পায় না, কয়েকটা খেলার জিনিস থাকে আর ফুলের বাগান থাকে কিন্তু ও বাড়ির বাচ্চাদের নিয়ে যদি এখানে আসেন। আর তাদেরকে যদি গল্প বলে বোঝাতে পারেন যে জায়গাটির কতটা গুরুত্ব, তাহলে বাচ্চারাও কিন্তু বেশ আনন্দ পাবে।

১৮৭০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাগানবাড়িটি তৈরি করেছিলেন পিতার উত্তরাধিকার সূত্রেই পরবর্তীকালে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাড়িটির মালিক হয়েছেন। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, পিতা গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে যখন তৈরি করেছিলেন তখন প্রচুর টাকা ব্যয় করেছিলেন।

বাগান বাড়ির অসাধারণ রাজকীয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। তার সঙ্গে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গা নদীর কুল কুল শব্দ, আর অসাধারণ গাছপালা নিয়ে তৈরি এই বাগানবাড়ি মনকে ভীষণ ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশবের অনেকগুলো সুন্দর মুহূর্ত এখানে তিনি কাটিয়েছিলেন। তা কিন্তু ইতিহাস থেকেই জানতে পারা যায়, এমনও জানা যায় যে এই বাগানবাড়িতেই নাকি সপ্তাহের শেষে গুণীজনদের নিয়ে জমজমাট আসর বসত।

শুনে মনে হচ্ছে, তো এক ছুটে চলে যাই? অসাধারণ এই জায়গাতে এবারে ঠান্ডা বেশ ঝাঁকিয়ে পড়েছে, তাই পরিবার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ঘুরেই আসতে পারেন অসাধারণ এই জায়গাটি থেকে। সোম থেকে রবি প্রতিদিন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে, এই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগান বাড়ির দরজা।

সকাল ১০ টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে মাথা পিছু দশ টাকা করে টিকিটের দাম। বাগানবাড়িতে ঢোকার পরেই দেখবেন বড় বড় গাছে পুরো বাগানবাড়িটা ছেয়ে গেছে। এখানে গেলে চারিদিকে ফুলগাছ দেখতেও কিন্তু বেশ ভালো লাগবে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু সব মিলিয়ে দারুন মজা করবে, এখানে কচিকাঁচারা বেড়াতে এলে।

২০১৭ সালে বাগানবাড়ি থেকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া হয় আর তারপর থেকেই দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষের আসা যাওয়া শুরু হয়। এই বাগানবাড়িতে ছুটির দিনে পর্যটকদের সংখ্যাটা বেশ অনেকটাই বেশি।

মূল ভবনের ভেতর দিয়ে রয়েছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা বিভিন্ন ছবির রেপ্লিকা। বাঁদিকে রাস্তা ধরলেই দেখা যায়, পুরনো কালের একটি প্রাচীন স্নানাগার। কড়ি, বরগা পুরনো ধাঁচের লাল বারান্দায় কিন্তু অদ্ভুত একটা আভিজাত্যের ছাপ রয়েছে।

হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেনে করে কোন্নগরে এসে স্টেশন থেকে খুব সহজেই টোটো বা রিক্সা করে মীরপাড়া বাস স্টপেজে নামলেই দেখতে পাবেন, অসাধারণ এই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি যাওয়ার গলি, আর গলি দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলেই অসাধারণ এই বাগানবাড়িতে প্রবেশ করে ফেলতে পারবেন।

Related Articles