দিব্যা ভারতী (Divya Bharti) বলিউডের আকাশে যেন এক ধূমকেতু। মাত্র কয়েক বছরের কেরিয়ারে দিব্যার স্টারডম আকাশ ছুঁয়েছিল। কিন্তু এখনও রহস্যাবৃত তাঁর মৃত্যু। মৃত্যুর কিছুদিন আগে থেকেই বলিউড থেকে দিব্যাকে সরানোর চেষ্টা চলছিল। অথচ দিব্যার বিরুদ্ধে কিন্তু কোনো প্রযোজক ও পরিচালকরা ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে ছিলেন আমির খান (Amir Khan)।
আমির ও জুহি চাওলা (Juhi Chawla)-র জুটি তখন বেশ হিট। আমির চেয়েছিলেন এই রেশ ধরে রাখতে। 1992 সালের লন্ডন ট্যুরে আমির, জুহির সাথে মঞ্চে পারফর্ম করেছিলেন। বাদ দিয়েছিলেন দিব্যাকে। ছিল ভুলের অজুহাত। দিব্যা কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। পরবর্তীকালে দিব্যার মা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যশ চোপড়া (Yash Chopra)-র সঙ্গে দিব্যার সমস্যা হওয়ায় আমির ঢুকে পড়েন তার মাঝে। যশ কিন্তু দিব্যাকে বাদ দেননি। এমনকি দিব্যার পক্ষে ছিলেন সানি দেওল (Sunny Deol)। কিন্তু আমির চেয়েছিলেন জুহিকে। পরবর্তীকালে অবশ্য আমিরকেই সরে যেতে হয় ফিল্ম থেকে। কারণ ‘ডর’-এ তাঁর চরিত্র ছিল নেতিবাচক। আমিরের স্থানে আসেন শাহরুখ খান (Shahrukh Khan)। শাহরুখের শক্তিশালী অভিনয় আইকনিক করে তোলে ‘ডর’-কে। কিন্তু আমির কি দিব্যার মৃত্যুর জন্য আদৌ দায়ী?
View this post on Instagram
কারণ কেরিয়ার নিয়ে এই ধরনের রেষারেষি প্রায় সব ধরনের কর্মক্ষেত্রেই রয়েছে। রয়েছে লিঙ্গ বৈষম্যও। ফলে আমিরের দিকে সন্দেহের তীর বোধ হয় যায় না। ঠিক কি ঘটেছিল 1993 সালের 5 ই এপ্রিল রাতে? তারও আগে এটা জানা জরুরী, দিব্যা অত্যন্ত অ্যালকোহলিক হয়ে পড়ছিলেন। সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা (Sajid Nadiadwala)-র মতো প্রযোজককে বিয়ে করেছিলেন দিব্যা। সাজিদের শত অনুরোধ সত্ত্বেও দিব্যা অ্যালকোহল গ্রহণ ছাড়তে পারছিলেন না। সাজিদ স্ত্রীকে ভালোবাসতেন। ফলে কোনোদিন তিনি বিবাহ বিচ্ছেদ চাননি। অপরদিকে দিব্যা ক্রমশ মানসিক অবসাদে ডুবে যাচ্ছিলেন।
View this post on Instagram
দিব্যার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানিয়েছেন, দিব্যার সেদিন হায়দ্রাবাদে আউটডোর শুটিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত দিব্যা তা ক্যানসেল করেছিলেন। 5 ই এপ্রিল সন্ধ্যার সময় দিব্যা তাঁর ও সাজিদের নতুন অ্যাপার্টমেন্টের জন্য কিছু শপিং করতে গিয়েছিলেন। শপিং করে একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন দিব্যা। তিনি বাড়ি ফেরার পর সাজিদের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া শুরু হয়। সাজিদ ও দিব্যার ফোন পেয়ে তাঁদের বাড়িতে এসে পৌঁছান দিব্যার ভাই কুণাল (Kunal), ফ্যাশন ডিজাইনার বন্ধু নীতা লুলা (Neeta Lulla) এবং তাঁর স্বামী ও দিব্যার সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ শ্যাম লুলা। নীতা জানিয়েছেন, তাঁরা যখন এসে পৌঁছান, তখনও সাজিদের সঙ্গে দিব্যার ঝগড়া চলছিল। সাজিদ রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এছাড়াও সেদিন তাঁর সাথে একজন ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটরের মিটিং ছিল। সাজিদ সেখানেই গিয়েছিলেন। কিন্তু সাজিদ বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় দিব্যা, সাজিদকে হুমকি দেন, সাজিদ দশ-পনের মিনিটের মধ্যে ফিরে না এলে তাঁকে আর দেখতে পাবেন না। সেই সময় নেশাগ্রস্ত ছিলেন দিব্যা। নিয়েছিলেন স্লিপিং পিল। নীতা, দিব্যাকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও শুনতে চাইছিলেন না দিব্যা। তিনি সেই সময় তাঁর ভারসোভার অ্যাপার্টমেন্টের জানলায় বসে ড্রিঙ্ক করছিলেন দিব্যা। জোরে টিভিও চালিয়েছিলেন তিনি। রান্নাঘর থেকে বারবার গ্লাসে রাম ভরে নিয়ে আসছিলেন দিব্যা। কোনো গ্রিল ছিল না। নীতাও তাঁর কাছে বসেছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য নীতা উঠে দিব্যার রান্নাঘরে যান। রান্নাঘর থেকে বেরোনোর সময় নীতা দেখেন, তাঁর চোখের সামনে জানলা দিয়ে পড়ে গেলেন দিব্যা। নীতা ও কুণাল দিব্যাকে ধরতে গেলেও পারেননি।
View this post on Instagram
অ্যাপার্টমেন্টের জানলা থেকে নিচে পড়ে যান দিব্যা। তাঁর প্রতিবেশী পরিচালক ও প্রযোজক ভি.মেনন (V.Menon) খুব জোরে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে ছুটে গিয়ে দেখেন, অ্যাপার্টমেন্টের নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন দিব্যা। তৎক্ষণাৎ তিনি ও ডঃ শ্যাম লুলা দিব্যাকে নিয়ে কুপার হাসপাতালে যান। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মৃত্যু হয়েছিল দিব্যার। কুপার হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। নীতা ও কুণাল দিব্যার বাবাকে দিব্যার মৃত্যুর খবর জানান। দিব্যার বাবা ও কুণাল দুজনেই ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু গভীর রাত অবধি দিব্যার মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ভোর তিনটে পঁয়তাল্লিশ নাগাদ দিব্যার মা কুপার হাসপাতালে আসেন। কিন্তু তার আগে অবধি তিনি কোথায় ছিলেন, কেউ জানতে পারেননি। দিব্যার বাবা ও কুণাল, দিব্যার মাকে মেয়ের মৃত্যুর জন্য দোষারোপ করতে থাকেন। আশ্চর্যজনক ভাবে, দিব্যার মা কিন্তু এতটুকুও কাঁদেননি। তিনি কারোর সাথে কোনো কথা না বলে দিব্যার মৃতদেহ বুকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ থাকার পর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান।
এরপর হাসপাতালে আসেন সাজিদ। দিব্যার মৃতদেহ দেখে সাজিদের মাইল্ড স্ট্রোক হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ তাঁকে আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। কুপার হাসপাতালের পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে বলা হয়, জানলা থেকে পড়ে দিব্যার মৃত্যু হয়েছে। এর অর্থ, আত্মহত্যা করেননি দিব্যা। তিনি এতটাই মদ্যপ ছিলেন, টাল সামলাতে না পেরে জানলা দিয়ে পড়ে যান। এর ফলেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
View this post on Instagram
দিব্যার অন্তিম সৎকারের দিন বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে শুটিং বন্ধ হয়নি। কিন্তু নিজের উদ্যোগে শাহরুখ খান, সলমান খান (Salman Khan), সইফ আলি খান (Saif Ali Khan)-রা শুটিং বন্ধ রেখে দিব্যার অন্তিম যাত্রায় সামিল হয়েছিলেন।
View this post on Instagram