BollywoodHoop Plus

Jaya Bachchan: অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী হয়েও কেন এতদিন অন্তরালে ছিলেন জয়া বচ্চন! আজ জানুন আসল সত্যিটা

জয়া বচ্চন (Jaya Bachchan) বলতেই হয়তো চোখের সামনে ভেসে উঠবে অহঙ্কারী ও খিটখিটে এক বৃদ্ধার মুখ। সেই মুখের বলিরেখা আসলে একের পর এক লড়াইয়ের কথা বলে। বারবার আত্মত্যাগ করার পরেও এক নারী যখন নিজের স্বামীকে পরকীয়ায় আসক্ত হতে দেখেছিলেন তখন আঁকড়ে ধরেছিলেন দুই সন্তানকে। তাদের মুখ চেয়েই সেদিন লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে চলে যেতে পারেননি জয়া। মিডিয়ায় জয়ার খিটখিটে রূপই বিখ্যাত। কিন্তু কোনোদিন কেউ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেননি, একসময়ের হাসিখুশি মেয়েটির এত পরিবর্তন কেন! কেউ ভাবতে চাননি জয়া সত্যিই রক্ষণশীল না আধুনিক! বহু প্রশ্নের উত্তর যা দেওয়া জয়ার কাছে নিষ্প্রয়োজন মনে হয়।

জয়া ভাদুড়ীর জন্ম ভোপালে। তাঁর বাবা তরুণ ভাদুড়ী (Tarun Bhaduri) ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, কবি ও লেখক। মা ইন্দিরা ভাদুড়ী (Indira Bhaduri) ছিলেন গৃহিণী। মাত্র পনের বছর বয়সে সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) নির্মিত ‘মহানগর’-এর মাধ্যমে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ জয়ার। সেখান থেকেই অফার আসে ‘ধন্যি মেয়ে’-র। এই সিনেমায় জয়ার অভিনয় সকলের নজর কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু তারপরেই হঠাৎ বাংলা সিনেমা থেকে সফল অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও রাতারাতি অন্তর্হিত হয়ে গেলেন জয়া। আসলে সত্যজিৎ হয়ে উঠেছিলেন জয়ার অনুপ্রেরণা। তাই ফিল্ম নিয়ে পড়তে তিনি পাড়ি দেন পুণের ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়া’। সিনেমাকে কখন যেন ভালোবেসে ফেলেছিলেন জয়া। তাঁর সেই ভালোবাসাই পুণের ‘এফটিআইআই’-এ এনে দিয়েছিল সেরার স্বর্ণপদক।

বলিউডে জয়ার আত্মপ্রকাশ 1971 সালে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় (Hrishikesh Mukherjee) পরিচালিত ফিল্ম ‘গুড্ডি’-র মাধ্যমে। এরপর একের পর এক হিট ফিল্ম উপহার দিয়েছেন জয়া। প্রায় হঠাৎই অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bachchan)-এর সাথে বিয়ে হয়ে গেল তাঁর। সত্যিই কি সিনেমাকে ছেড়ে অমিতাভকে একশো শতাংশ ভালোবেসেছিলেন জয়া? হ্যাঁ, অমিতাভ বিয়ের আগে জয়াকে বলেন, তিনি ন’টা-পাঁচটার চাকরি করা বৌ চান না। মূলতঃ তাঁর পরামর্শেই অত্যন্ত বাছাই করে কাজ করতে শুরু করেছিলেন জয়া। অমিতাভ জানতেন, জয়া সফল অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও বাছাই করে কাজ করলে পরিচালক-প্রযোজকদের অপছন্দের কারণ হয়ে উঠবেন। হয়েছিলও তাই। জিতে গিয়েছিল অমিতাভের মেল ইগো। জয়া বোধহয় আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন তা। এই কারণেই তাঁর বিয়ের ছবি দেখে উচ্ছ্বসিত মনে হয়নি জয়াকে।

বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় মা হয়েছিলেন তিনি। জন্ম হয়েছিল কন্যাসন্তান শ্বেতা (Sweta Bachchan)। এরপর জন্ম হল অভিষেক (Abhishek Bachchan)। বিয়ের পর মাত্র কয়েকটি ফিল্মে অভিনয় করলেও কখন যেন সংসারের চাপে অন্তরালেই চলে গেলেন জয়া। তিনি আসলে নিজেকে সম্মান করেননি। সম্মান করেননি নিজের প্রতিভাকে। এই কারণেই অমিতাভ সাহস পেয়েছিলেন সামান্য খাবারকে কেন্দ্র করে বাড়িতে নিমন্ত্রিত সাংবাদিকের সামনে জয়াকে অপমান করার। অপমানিত হওয়ার পর সেই দিনটি জয়া কাটিয়েছিলেন বন্ধ দরজার ওপারে। যায়-আসেনি অমিতাভের। তারকার কাছে জয়া তখন সাধারণ গৃহবধূ।

একই ভাবে যায়-আসেনি জয়ার শাশুড়ি তেজী বচ্চন (Teji Bachchan)-এর। জয়ার সাথে অমিতাভের ব্যবহারের কোনো প্রতিবাদ করেননি তিনি। একদিন হঠাৎই জয়ার কানে এল অমিতাভের সাথে রেখা (Rekha)-র সম্পর্কের গুঞ্জন। দুজনকে একসাথে বিভিন্ন পার্টিতেও দেখা যেত। চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালেন জয়া। নিজেই নিজের বাড়িতে লাঞ্চে নিমন্ত্রণ করলেন রেখাকে। এসেছিলেন রেখা। সেদিন তাঁর ‘জয়াদিদি’ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিল তিল করে গড়ে তোলা নিজের সংসার কাউকে ভাঙতে দেবেন না তিনি। সরে যেতে হয়েছিল রেখাকে।

সকলের চোখে জয়া রক্ষণশীল মহিলা। কিন্তু তিনি নিজের কন্যা শ্বেতার বিয়ে অত তাড়াতাড়ি দিতে চাননি। শোনেননি অমিতাভ। নিখিল নন্দা (Nikhil Nanda)-র সাথে শ্বেতার বিয়ের দিন কেঁদে ফেলেছিলেন জয়া। চেয়েছিলেন অভিষেক বিয়ে করুন বঙ্গতনয়া রানি মুখার্জী (Rani Mukherjee)-কে। তাঁর অমতেই ঐশ্বর্য রাই (Aishwarya Rai Bachchan)-কে বিয়ে করেন অভিষেক। সকলের সামনে তারকাসুলভ অভিনয় করা জয়ার কান্নাগুলি জানে ‘প্রতীক্ষা’-র চার দেওয়ালের ইঁট।

ভিতরে গুমরাতে গুমরাতে কখন যেন সদা হাস্যময়ী নারী হয়ে উঠেছেন খিটখিটে। অভিনয়ে ফিরেছেন আবারও। কিন্তু না বলা কথাগুলি শোনার কেউ নেই। ক্যামেরার ফ্ল্যাশে চোখে কষ্ট হলেও জয়াকে ভুল বোঝে মিডিয়া। আসলে কিছু মানুষ জন্মান বিতর্কিত হওয়ার জন্য, সমালোচিত হওয়ার জন্য, সকলের চোখে ভুল হওয়ার জন্য। জয়া তাঁদের একজন।

whatsapp logo