রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty) ও শুভশ্রী গাঙ্গুলী (Subhashree Ganguly) বর্তমানে টলিউডের চর্চিত দম্পতি। রাজ বর্তমানে সফল প্রযোজক-পরিচালক ও শুভশ্রী সফল অভিনেত্রী-প্রযোজক। তবে রাজের জীবন জুড়ে বরাবর শুভশ্রী ছিলেন না। রাজের লড়াইয়ের দিনগুলির সাক্ষী অন্য এক নারী। বিনোদন জগতের সাথে যুক্ত তিনিও। তাঁর নাম শতাব্দী মিত্র (Satabdi Mitra)। রাজ চক্রবর্তীর প্রথম স্ত্রী। রাজ তখন সবেমাত্র টলিউডের বুকে নিজের পায়ের তলার জমি শক্ত করার চেষ্টা শুরু করেছেন। বর্তমান সময়ের মতো গ্রুমড ছিলেন না তিনি। 2000 সালে একটি টেলিভিশন শোয়ে রাজের সাথে আলাপ হয়েছিল শতাব্দীর। ধীরে ধীরে এই সম্পর্ক পরিণত হয় প্রেমে।
রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh)-এর সাথে টালিগঞ্জে একটি রুম শেয়ার করে থাকতেন রাজ। বেহালায় থাকতেন শতাব্দী। রাজের উপার্জন তখন যথেষ্ট অনিয়মিত। কাজ পেতে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে। সেই সময় রাজের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন শতাব্দী। তিনি রাজকে ভালোবেসেছিলেন, তাঁর সফলতাকে নয়। মর্নিং ওয়াকে যাওয়ার নাম করে লুকিয়ে বেহালা থেকে টালিগঞ্জ দিয়ে নিজের হাতখরচের টাকা রাজের হাতে তুলে দিয়ে আসতেন শতাব্দী। রাজ অসুস্থ হলে সেবা করতেন তিনি। কিনে দিতেন প্রয়োজনীয় ওষুধ, জলের বোতল। এমনকি নিজের বাড়ির ফ্রিজ থেকে খাবার চুরি করে তা রাজকে দিয়ে আসতেন শতাব্দী। কখনও প্রয়োজনীয় জামাকাপড় কিনে দিতেন।
এরপর পরিবারের সদস্যদের কাছে রাজের কথা জানিয়েছিলেন শতাব্দী। বিয়ে করার অনুমতি চেয়েছিলেন। রাজের অনিশ্চিত উপার্জনের কারণে শতাব্দীর পরিবার প্রথমে বিয়েতে রাজি হননি। কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে হার মানতে হয়েছিল তাঁদের। 2006 সালে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে বিয়ে হয় রাজ ও শতাব্দীর। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যায়, শতাব্দী ছিলেন রাজের লাকি চার্ম। তাঁর সাথে বিয়ের পরেই রাজের কেরিয়ারের মোড় ঘুরে যায়। ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচালক হিসাবে ডেবিউ ঘটে রাজের। এরপরেই রাজ পরিচালিত একের পর এক ফিল্ম হিট হতে থাকে। রাজ ইন্ডাস্ট্রিতে রীতিমত প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু তাঁর ও শতাব্দীর দাম্পত্যে প্রবেশ করেন শুভশ্রী। ততদিনে শতাব্দীর পরিবারও ভালোবেসে ফেলেছেন রাজকে। রাজ অসুস্থ হলে শতাব্দীর মা রাত জেগে তাঁর সেবা করেছেন। ইন্ডাস্ট্রির নিউকামার শুভশ্রীর সাথে রাজের সম্পর্কের সূত্রপাত তাঁদের দাম্পত্যে প্রভাব ফেলে। শুরু হয় রাজ ও শতাব্দীর অশান্তি।
শতাব্দী একসময় শুভশ্রীর বাড়িতে এই ঘটনা ফোন করে জানালে তাঁর পরিবারের সদস্যরা শতাব্দীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, শুভশ্রী ছোট। ফলে তিনি ভুল করে ফেলেছেন। বাড়ির লোকের পরামর্শে রাজের কাছ থেকে সরে যান শুভশ্রী। তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয় দেব (Dev)-এর সাথে। সেই সময় দেবও ইন্ডাস্ট্রিতে রীতিমত সফল। কিন্তু রাজ হয়তো নৈতিকতা থেকে সরে গিয়েছিলেন। ফলে তাঁর সাথে পায়েল সরকার (Payel Sarkar)-এর সম্পর্ক তৈরি হয়। এবার আর মেনে নিতে পারেননি শতাব্দী।
2011 সালে রাজের সাথে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু শতাব্দী কোনোদিন চাননি রাজের ক্ষতি হোক। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, এখনও ভালোবাসেন রাজকে। কখনও মুখোমুখি দেখা হলে সৌজন্য বিনিময় হয় তাঁদের। রাজ ও শুভশ্রীর বিয়েতে শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন শতাব্দী। প্রকৃতপক্ষে, রাজ ও শতাব্দীর সম্পর্কের ভিতে ছিল না বিশ্বাস, সততা। ফলে লহমায় ভেঙে গেল একটি দাম্পত্য।