প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী (prasenjit chatterjee), টলিউডের অন্যতম মাইলস্টোন। মহানায়ক উত্তম কুমার (uttam kumar) পরবর্তী সময়ে টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ধস নেমেছিল। সেই সময় নিউকামার প্রসেনজিৎ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সিনে ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব।
টলিউডে একসময় শিশুশিল্পী হিসাবে ডেবিউ করেছিলেন প্রসেনজিৎ। তাঁর অভিনীত ‘ছোট্ট জিজ্ঞাসা’ ফিল্ম নিয়ে আজও চর্চা হয়। কিন্তু অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় (biswajit chatterjee)-র ছেলে বলে একরকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তার বহুদিন আগেই স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে ছেড়ে মুম্বই পাড়ি দিয়েছেন বিশ্বজিৎ। সেখানে দ্বিতীয় সংসার পেতেছিলেন। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, প্রসেনজিৎ-ও তো মুম্বইয়ের মাটিতে কেরিয়ার তৈরি করতে পারতেন! কিন্তু প্রসেনজিৎ নিজের মাকে ছেড়ে যাননি।
সংসারে চরম দারিদ্র্য। প্রসেনজিৎ সবে টলিউডে কাজ শুরু করেছেন। টলিউডে সেই সময় চলছে খরা। টেকনিশিয়ানদের ঘরে অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন তাঁদের পরিবার। প্রসেনজিৎ বুঝেছিলেন, তিনি যদি একের পর এক ফিল্মে অভিনয় করেন, তাহলে টেকনিশিয়ানদের রোজগারের রাস্তা খুলে যাবে। টলিউড ঘুরে দাঁড়াবে। নিজের ইমেজের পরোয়া না করেই প্রসেনজিৎ একের পর এক ফিল্মে সাইন করতে লাগলেন। সেগুলির অধিকাংশের চিত্রনাট্য ছিল অবাস্তব। কিন্তু সেই অবাস্তবই বাস্তবে নিয়ে এল স্বাচ্ছন্দ্য। প্রসেনজিৎ পরিচিত হয়ে গেলেন ‘পোসেনজিৎ’ নামে। কিন্তু মনে কোনো ক্ষোভ ছিল না। আসলে নিজে যে দারিদ্র্যকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। শুধুমাত্র বাংলা ইন্ডাস্ট্রির মুখের দিকে তাকিয়ে সেদিন এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ। অবলীলায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’, ‘সাজন’-এর মতো ফিল্মের অফার।
‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’-র সময় প্রসেনজিৎ-এর ‘অমর সঙ্গী’ সবে রিলিজ করেছে ও সুপারহিট হয়েছে। কিন্তু হিন্দি ফিল্মে অভিনয় করতে গেলে বহুদিন মুম্বইতে থাকতে হতো। কিন্তু তা করলে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি আবারও ক্ষতির সম্মুখীন হতো। প্রসেনজিৎ নিজেও তখন নতুন নায়ক। তাই রিস্ক নিতে চাননি তিনি। পরবর্তীকালে তাঁর ছেড়ে দেওয়া চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সলমান খান (salman khan)। ‘সাজন’ ফিল্মের সময় ফিল্মের দুই নায়ক চরিত্রের মধ্যে তাঁর একটি চরিত্রে অভিনয়ের কথা ছিল, অপর চরিত্রের অফার ছিল ঋষি কাপুর (Rishi kapoor)- এর কাছে। শেষ অবধি ঋষি চরিত্রের অফার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। প্রসেনজিৎ বলেছিলেন, তিনি বাংলা ফিল্মের প্রতি কমিটেড। তবে এই ফিল্মগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আফশোস করেন না প্রসেনজিৎ। কারণ তিনি জানেন, তাঁর একটুখানি আত্মত্যাগ অনেকের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছিল।
পরবর্তীকালে প্রসেনজিৎ-কে অনেকগুলি হিন্দি ফিল্মে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভার্চুয়ালি এবং ফোনের মাধ্যমেই তিনি টলিউডের খবর রাখেন। এখনও যতটা পারেন, কম সময় মুম্বইয়ে থাকেন। টলিউডের বুকে রয়েছে তাঁর প্রোডাকশন হাউস ‘আইডিয়াজ’। প্রসেনজিৎ-এর অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন অনুরাগ কাশ্যপ (anurag kashyap)। প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি প্রকৃতপক্ষেই অপ্রতিরোধ্য এক নায়ক যিনি আজকের টলিউডের গাঁথনির ইঁটে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছেন।
View this post on Instagram