একসময় সিনেমা মানে সাধারণ মানুষের কাছে ছিল রূপকথার জগৎ। সেই জগতের অধিবাসীদের ধরা-ছোঁয়া যায় না। এই মনোভাব থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল স্টারডমের। সিনেমার শতবর্ষ কবেই পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ এখনও অবধি মেনে নিতে পারছেন না আধুনিকতাকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রযোজক রাণা সরকার (Rana Sarkar)। তিনি সপ্তাহান্তে আবারও বিতর্কিত পোস্ট করলেন ফেসবুকে।
সূত্রপাত হয়েছে ‘বল্লভপুর কি রূপকথা’-কে কেন্দ্র করে। জি ফাইভে স্ট্রিমিং হয়েছে হিন্দি ফিল্ম ‘বল্লভপুর কি রূপকথা’। এটি বাংলা ফিল্ম ‘বল্লভপুরের রূপকথা’-র হিন্দি ভার্সন যাতে অভিনয় করেছেন বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। রাণার মতে, একসময় দক্ষিণের ফিল্মগুলি রিমেক করে রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty), রাজা চন্দ (Raja chanda), রবি কিনাগী (Rabi Kinagi)-দের মতো পরিচালকরা বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখলেও তাঁদের ছোট করা হয়েছে ‘চাকতি’ বা ‘জেরক্স মেশিন’ তকমায়। ‘বল্লভপুরের রূপকথা’-র হিন্দি ভার্সনকে নতুন বোতলে পুরানো মদ বলে গণ্য করেছেন রাণা। তাঁর মতে, নিজেদের কন্টেন্টকে ঘুরিয়ে নাক দেখানো হচ্ছে। রাণার কাছে, ‘বল্লভপুরের রূপকথা’-র মতো ফিল্ম তৈরি করে মহান কিছু করে ফেলেননি এই ফিল্মের নব্য পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya)।
View this post on Instagram
রাণার মতে, সৃজিত মুখার্জী (Srijit Mukherjee) বা কৌশিক গাঙ্গুলী (Koushik Ganguly) হতে গেলে উদারতা লাগে যা বর্তমান প্রজন্মের নেই। বাদল সরকার (Badal Sarkar)-এর চিত্রনাট্য অবলম্বনে তৈরি ‘বল্লভপুরের রূপকথা’-র পরিচালকের উচ্চাকাঙ্খা রাণার পছন্দ নয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, রাজ বা রাজা চন্দ অথবা রবি কিনাগীরা কি সত্যিই নিজেরা খুব খুশি ছিলেন দক্ষিণী ফিল্মের বাংলা রিমেক বানিয়ে! তা হয়তো নয়। যদি তাই হত, তাহলে রাজ বর্তমান কালে ‘প্রলয়’ বা ‘ধর্মযুদ্ধ’-র মতো ফিল্ম বানাতেন না। দক্ষিণী ফিল্মের রিমেক থেকে এখন অনেকটাই দূরে তিনি। রবি কিনাগী আপাতত ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যাকটিভ নন। রাজা চন্দও ঝুঁকেছেন অন্য ঘরানার ফিল্মের দিকে।
অপরদিকে সৃজিত বা কৌশিকও একদিন ইন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা শুরু করেছিলেন অনেক লড়াই করে। তাঁরা স্টারকিড নন। ফলে লড়াইটা ছিল প্রবল। কিন্তু উচ্চাকাঙ্খী ছিলেন তাঁরা। ফলে নিজেদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছেন সৃজিত বা কৌশিকদের মতো পরিচালকরা। অভিনেতার গন্ডি পেরিয়ে মেদিনীপুরের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান অনির্বাণ ধীরে ধীরে এগোচ্ছেন পরিচালনার দিকে। স্টারকিড নন তিনিও। অনির্বাণও যথেষ্ট লড়াকু। 2005 সাল থেকে থিয়েটার ও 2013 সাল থেকে বড় পর্দায় একের পর এক কাজ করেছেন অনির্বাণ। গত তিন- চার বছর ধরে তাঁর কাজ সকলে লক্ষ্য করছেন। কিন্তু তার আগে অনির্বাণকে নিয়েও ইন্ডাস্ট্রিতে ছিল অনেক দ্বিধা। গত কয়েকদিন ধরে রাণা ক্রমাগত অনির্বাণের বিরুদ্ধে পোস্ট করে চলেছেন ফেসবুকে। এই ঘটনায় রীতিমত ক্ষুব্ধ অভিনেতার অনুরাগীদের একাংশ। প্রকৃতপক্ষে, রাণার পরবর্তী প্রযোজনা ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম’-এ তিনি অনির্বাণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু অনির্বাণ ডেট দিতে পারেননি। এই কারণেই শুরু হয়ে গিয়েছে ইগোর দ্বন্দ্ব।
প্রফেশনালিজমের দিক দিয়ে দেখলে একজন অভিনেতার ডেট দিতে না পারার সমস্যাকে নিয়ে ইগোর উদ্ভব হওয়া উচিত নয়। বরং রাণা যে ধরনের পোস্ট করছেন তাতে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নেতিবাচক দিক জনসমক্ষে প্রভাব ফেলছে।