দিনটি ১৬ ফেব্রুয়ারি। না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন সন্ধ্যা দেবী। শিল্পী জীবনের অবসান হয় কিন্তু শিল্পের অবসান প্রায় অসম্ভব। তাঁর সাথে জড়িত সংগীতমহলের হাজারো স্মৃতি। ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রোধনু’, ‘এ শুধু গানের দিন’ এর মতো তাঁর অমূল্য সব গান বারংবার যেন ফিরে ফিরে আসে। রাইচাঁদ বড়াল, শচীন দেব বর্মন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী থেকে শুরু করে বাংলার একাধিক সংগীত পরিচালকের সৃষ্টিতে অমরত্বের জাদু সৃষ্টি করে গেছে তাঁর যাদু কন্ঠ। নিজের স্বামী, কবি শ্যামল গুপ্তের লেখা গানের সাথেও আলাপ ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। এই সুরেলা গান সুরেলা কন্ঠই হয়ত তাঁকে এনে দিয়েছিল ‛গীতশ্রী’ খেতাব। তাই কি?
গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় নামটি উচ্চারণেই বাঙালি মন কাঁটা দিয়ে ওঠে। অবশ্যই এই খেতাব এসেছিল সংগীতের হাত ধরেই। সময়টা ১৯৪৬ সাল ৬ এপ্রিল। বয়স তাঁর মাত্র ১৪। একটি বাংলা গানের পরীক্ষার্থী হয়েছিলেন একরত্তি সন্ধ্যা। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ মহম্মদ দাবির খাঁ এবং রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো তাবর তাবর বিচারকদের কাছ থেকে প্রথম পুরস্কারও পান। সন্ধ্যার অপূর্ব সুরে মুগ্ধ বিচারকরা চল্লিশ দশকের ওই সংগীত পরীক্ষার নামের সাথে মিলিয়েই তাঁকে ‘গীতশ্রী’ খেতাব উপহার দেন। পরীক্ষাটির নাম ছিল ‘গীতশ্রী’।
শোনা যায় ‘গীতশ্রী’ গাওয়ার এক বছর আগেই ১৯৪৫ সালে তাঁর পরিচয় হয়ে গিয়েছিল সংগীত মহলের সাথে। কলম্বিয়া থেকে গিরীন চক্রবর্তীর কথায় ও সুরে রেকর্ড করেন প্রথম গান- ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ ও ‘তোমার আকাশে ঝিলমিল করে’। এরপরেই ১৯৪৮ সালে রাইচাঁদ বড়ালের সংগীত পরিচালনায় ‘অঞ্জনগড়’ এবং রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘সমাপিকা’ ছবিতে গান। আবারও ওই একই বছরে রেকর্ড করেন তিন-তিনটি আধুনিক যুগের গান। সন্ধ্যা খেয়াল, ঠুংরি, ভজন, গজল, কীর্তন, ভাটিয়ালি, বাউল, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি সাথে একাধিক আধুনিক গানে সমান পারদর্শী ছিলেন।
১৯৫৪ সাল, অগ্নিপরীক্ষা ছবিতে সুচিত্রা সেনের গলায় বেজে উঠল ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রোধনু’। আবেগপ্রবণ হয়ে উঠল বাঙালি। সুচিত্রা সেনের কণ্ঠে সন্ধ্যা দেবীর গান ছাড়া প্রায় অশান্তির মুখে পড়ে যেতে বক্স অফিস। বড়ে গুলাম আলি খাঁ-এর শিষ্যা ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাংলা গানের সম্রাজ্ঞী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এমনকি হিন্দিতেও ১৭টি সিনেমায় দুর্দান্ত প্লেব্যাক করেন সন্ধ্যা দেবী। তাঁকে লতাজির অনেক কাছের করে তুলেছিল। শোনা যায়, কলকাতায় এলে সন্ধ্যা দেবী ছাড়া লতাজির চলতই না। খবর নিতেন তাঁর বারবার। সন্ধ্যা দেবীও খুব পছন্দ করতেন তাঁকে। তাই তো লতাজির মহাপ্রয়াণের খবর সন্ধ্যা দেবীকে জানতে দেওয়া হয়নি।