আজও তারা নারী হওয়ার লক্ষ্যে!
বৃহল্লনা বা রূপান্তরগামী, বাহ্যিক দিকটি পুরুষ হলেও মনের দিক দিয়ে এরা নারী। মানুষ যে গতানুগতিক লিঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন তার সঙ্গে নিজেকে সনাক্ত করতে পারেন না এই মানুষেরা। শারীরিকভাবে পুরুষ অথবা নারী হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেও এদের মানসিক লিঙ্গবোধ তাদের জৈবিক লিঙ্গের বিপরীত বা এদের লৈঙ্গিক অনুভূতি সুস্পষ্টভাবে নারীসুলভ বা পুরুষসুলভ নয়। আমাদের সমাজের তথাকথিত ভদ্র মানুষেরা এদের মানুষ বলেই মনে করেন না। কেউ কেউ তো আবার এদের আর্বজনা বলে মনে করেন। কিন্তু এদের ও ছেলে মেয়েদের মতো হাত আছে, পা আছে, আবার একটি সুন্দর মন ও আছে। কিন্তু তবু কেন এই বিভেদ বলুন তো। আজ ও এরা সমাজের বুকে পায়না কোনো পরিচয়। না পায় সঠিক করে শিক্ষার সুযোগ,না পায় সমাজের মানুষের ভালোবাসা। বর্তমানে সমাজে মহিলাদের সমান অধিকারের কথা ভরে ভরে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানাভাবে মেয়েদের নানা কর্মক্ষেত্রের জন্য কুর্নিশ দেওয়া হচ্ছে।
সব কিছু থেকে নিজেরা থাকে বঞ্চিত। আজ ও রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালে চোখ পড়লে দেখা যায় ভিক্ষে করছে তো কখনো ট্রেনের মধ্যে নাচছে। এই রুপান্তগামীদের রোজগার করতে হচ্ছে। কিন্তু আর কতদিন বলুন তো? অনেকেই এদেরকে দেখলে করুণা করে হাতে দু পয়সা দিয়ে চলে যায়। কিন্তু এরাও অন্যদের মতো পড়াশোনা করে নিজেদের পছন্দমতো জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। কিন্তু সঠিক সুযোগ এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে দেওয়া হয়না। এরা সবসময় বঞ্চিত। কিন্তু অনেক হয়েছে, আজ কিছু জন সাহস করে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এরাও অনেক বাধা পেরিয়ে ভিক্ষা নয় খেটে রোজগার করে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখছেন। কারণ এরাও মানুষ।
সংবিধানে সকলের সাম্যতার কথা বলা থাকলেও এই মানুষরা বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে। অনেকেতো আবার এদেরকে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের হিজরা হিসেবে স্ট্যাম্প করছেন। এই জন্য কিছু ট্রান্সজেন্ডার এক লিঙ্গ থেকে অন্য লিঙ্গে রূপান্তরিত হতে চিকিৎসার সহায়তা নেয়। সমাজে নিজেদের নাম করানোর জন্য এই অস্ত্রোপচার করে কষ্ট সহ্য করে নিজেদের অধিকারের জন্য। সমাজের প্রচলিত ধারণা মানুষকে মাঝে মাঝে পিছিয়ে নিয়ে যায়। শত চেষ্টা করেও অনেকে সমাজের মন্দ ধারণা থেকে বের হতে পারেন না।
সোমবার ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই নারী দিবসটি উপলক্ষে বহু নারীদের যেমন সম্মানিত করা হয় তেমনই এদেরকে সম্মান দেওয়া উচিত।সকলেরই সম্মান প্রাপ্য। উল্লেখ্য ২০২১ সালে যুগের হাওয়া পাল্টেছে। আজ বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভিশন বৈশাখী টিভিতে দেশের ইতিহাসে প্রথম সংবাদ উপস্থাপন ও নাটকে অভিনয় করতে যাচ্ছেন দুজন ট্রান্সজেন্ডার নারী। তবে ইতিমধ্যে কিন্তু এবার সমাজের সেই মন্দ প্রচলিত ধারণা ভেঙে দেশের ইতিহাসে প্রথমবার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখী টিভিতে সংবাদ পাঠ করবেন ট্রান্সজেন্ডার নারী আর একজন ধারাবাহিকে মূল চরিত্রে অভিনয় করবেন। নাম তাঁদের নারী তাসনুভা আনান শিশির ও নুসরাত জাহান মৌ। বাংলাদেশের মতো আমাদের দেশেও আছেন অধ্যাপিকা মানবী বন্দোপাধ্যায়। তিনি আজ কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের অধ্যাপিকা। আজও বহু যারা মননে নারী তারাই বাস্তবে রূপান্তরগামী নারী হওয়ার লক্ষ্যে।