যুগ থেকে যুগান্তরে বাঙালির নস্টালজিয়া মহানায়িকা সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)। বাংলাদেশের পাবনার মেয়ে রমা দাশগুপ্ত বিয়ের পর কলকাতায় আসেন। শ্বশুরমশাই-এর উৎসাহে স্টুডিওপাড়ায় আনাগোনা শুরু হয় তাঁর। বহু রিজেকশনের পর এক কঠিন লড়াইয়ের সরণি বেয়ে রমা হয়ে উঠেছিলেন সুচিত্রা। বাঙালির চিরকালের মহানায়িকা তিনিই। মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)-এর মৃত্যুর পর ভেঙে গিয়েছিল চিরন্তন রোম্যান্টিক উত্তম-সুচিত্রার জুটি। সুচিত্রার অভিনয় জীবনের শেষ দিকের সিনেমাগুলি নায়িকাকেন্দ্রিক হলেও সেকালের বাঙালির কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। ফলে অভিমানে নিজেকে অন্তরালে সরিয়ে নিয়েছিলেন সুচিত্রা। কিন্তু অন্তরালে সরিয়ে নিতেই তাঁর অনুরাগীদের মধ্যে সুচিত্রার একটু ঝলক পাওয়ার স্পৃহা জাগতে শুরু করল। ততদিনে সুচিত্রা- কন্যা মুনমুন সেন (Munmun Sen) এসেছেন অভিনয় জগতে। ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরদৌস আহমেদ (Firdaus Ahmed) ছিলেন তাঁর ভালো বন্ধু। কিন্তু নিজের অজান্তেই সুচিত্রা সেনের সাথে সাক্ষাত ঘটেছিল তাঁর। গত 17 ই জানুয়ারি ফিরদৌস নিজেই জানালেন সেই কথা।
View this post on Instagram
মুনমুনের সাথে বন্ধুত্বের সুবাদে অন্যদের মতো সুচিত্রাকে একবার দেখার ইচ্ছা ছিল ফিরদৌসের। কলকাতায় শুটিং করতে এলে মুনমুনের বাড়িতে গেলেই অন্তত একবার সুচিত্রার সাক্ষাত করার ইচ্ছা থাকলেও তা ঘটত না। সেখানেই আলাপ হয়েছিল মুনমুনের এক আত্মীয়ার সাথে। তিনি ফিরদৌসকে বলেছিলেন, বিগত সতের বছর ধরে মুনমুনের বাড়িতে আসছেন তিনি। কিন্তু একবারের জন্য সুচিত্রাকে দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি। কিন্তু ফিরদৌসের বিধির বিধান ছিল আলাদা।
View this post on Instagram
একদিন মুনমুনের বাড়িতে গিয়ে কলিং বেল বাজান তিনি। কলিং বেল বাজানোর পর একজন মহিলা দরজা খুলে দেন। কিন্তু দরজা খুলে দিয়েই তিনি আর এক মুহূর্ত দাঁড়াননি। দ্রুতপায়ে ঘরের ভিতর গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ওই মহিলা। ততক্ষণে ফিরদৌস চিনে ফেলেছেন সুচিত্রাকে। তিনি ওই বন্ধ দরজার কাছে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন মহানায়িকার কন্ঠস্বর শোনার জন্য। কিন্তু কিছুই শুনতে পাননি। মুনমুনের কাছে বারবার তাঁর মাকে দেখতে চাওয়ার অনুরোধ করলেও রাজি ছিলেন না তিনি। কিন্তু সুচিত্রাকে এক লহমার জন্য দেখার অনুভূতি প্রকাশ করা যায় না বলে মনে করেন ফিরদৌস।
View this post on Instagram
পরবর্তীকালে ফিরদৌসের ব্যাপারে মুনমুনের কাছে জানতে পেরে বাংলাদেশের গান শুনতে চেয়েছিলেন পাবনার রমা। ফিরদৌস বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত ও সাদী মোহাম্মদ সহ বেশ কিছু গানের সিডি পাঠিয়েছিলেন তাঁকে। পরে মুনমুন তাঁকে জানিয়েছিলেন, খুব খুশি হয়েছেন তাঁর মা। এমনকি সুচিত্রার জন্য বাংলাদেশের শাড়িও পাঠিয়েছিলেন ফিরদৌস। আনন্দ পেয়েছিলেন মহানায়িকা। ভারতের নদীয়ায় বসে সুচিত্রার প্রয়াণের খবর জানতে পারেন ফিরদৌস। মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। ফিরদৌস মনে করেন, শূন্যস্থান কোনোদিন পূরণ হবার নয়। সুচিত্রা না থেকেও সকলের মনে থেকে গিয়েছেন।
View this post on Instagram