ছুঁতমার্গের বেড়াজাল ভেঙে সাবালক হচ্ছে বাংলা সিরিয়াল, দর্শকরা তৈরি তো?
যুগ বদলানোর সঙ্গে ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে বিনোদনেরও। পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাবালকত্বের দিকে এগোচ্ছে বিনোদন মাধ্যম। ডিজিটাল মাধ্যমের সৃষ্টিই হয়েছিল সাবালক হয়ে। বড়পর্দাও অনেক দিন আগেই ছুঁতমার্গের পর্দা সরিয়ে ফেলেছে। এবার টেলিভিশনও (Television Serial) হাঁটছে সেই পথেই। ইতিমধ্যেই একাধিক বাংলা সিরিয়ালে এই সাবালকত্বের প্রতিফলন ঘটেছে। বর্তমানে জি বাংলা এবং স্টার জলসা দুই প্রথম চ্যানেলের একাধিক সিরিয়ালেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিষয়টি। দর্শকদের মধ্যে অবশ্য এখনো এ নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব রয়েই গিয়েছে।
স্টার জলসা চ্যানেলের নতুন সিরিয়াল ‘তোমাদের রাণী’। মাস খানেক মোটে শুরু হয়েছে ধারাবাহিকটি। এইটুকু সময়ের মধ্যেই যেন টেলি পাড়ায় ছোটখাটো ঝড় তুলে দিয়েছে তোমাদের রাণী। সম্প্রচার শুরুর সময়ের নিরিখে নবীন হলেও চিত্রনাট্যের দিক দিয়ে যথেষ্ট সাবালক এই সিরিয়াল। এমনিতে প্রোমোতেই বড় চমক দিয়ে নজর কেড়েছিল তোমাদের রাণী। নায়িকা রাণীকে দেখা গিয়েছিল অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ডাক্তারি পরীক্ষা দিয়ে বাচ্চা কোলে নিয়ে কলেজে ভর্তি হতে। এবার সিরিয়াল শুরু হতে না হতেই নায়ক নায়িকার মধ্যে বিয়ের আগেই সহবাস দেখিয়ে চর্চায় উঠে এসেছে তোমাদের রাণী। যেখানে নায়ক নায়িকার মধ্যে স্বাভাবিক ঘনিষ্ঠতা দেখাতেই দশবার ঢোঁক গেলেন নির্মাতারা, সেখানে এতদূর ভাবতে পারাটাই যে অনেক বড় ব্যাপার তাতে সন্দেহ নেই।
একই চ্যানেলের আরেক জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’। শুরুটা হয়েছিল বাংলা এবং বাঙালির চিরপরিচিত হারাতে বসা পাইস হোটেলের গল্প নিয়ে। শঙ্কর ঐশানীর রসায়নেও ক্রমে বুঁদ হয়েছেন দর্শক। সম্প্রতি এই সিরিয়ালেও এক বড়সড় কাণ্ড ঘটে গিয়েছে। সমাজের ফিসফিস, গুঞ্জনকে স্তব্ধ করে দিয়ে পিরিয়ডস নিয়ে বিশেষ পর্ব দেখিয়ে দর্শকদের কুর্নিশ কুড়িয়েছে এই ধারাবাহিক। এই শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও যেখানে মেয়েদের পিরিয়ডসকে ‘ট্যাবু’ হিসেবে ভাবা হয়, সেখানে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলে, সর্বোপরি সচেতনতার বার্তা দিয়ে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে হরগৌরী পাইস হোটেল। এই ধরণের বিষয় নিয়ে এতটা খোলাখুলি কথা বলা কোনো সিরিয়ালে প্রথম।
অন্যদিকে জি বাংলার ‘কার কাছে কই মনের কথা’র নাম এতদিনে সকলেই শুনে ফেলেছে। সিরিয়ালের দর্শক না হলেও এই ধারাবাহিকটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে শোনেননি বা কিছু কিছু দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেননি এমনটা হতেই পারে না একাধিক কারণে ধারাবাহিকটি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। মূলত ট্রোলিং হলেও আসলে সমাজের এক অন্ধকার বাস্তব চিত্রটাই তুলে ধরা হচ্ছে সিরিয়ালে। শ্বশুরবাড়িতে স্বামী, দেওর, শাশুড়ির কাছে শিমুলের হেনস্থা, লাঞ্ছনা দেখে মুখ বিকৃত করছেন দর্শকরা। কিন্তু স্বয়ং ধারাবাহিকের নায়ক স্বীকার করেছেন, বাস্তবেও এমন ঘটনা ঘটে। হয়তো সবকিছু প্রকাশ্যে আসে না। এমনকি ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ এর মতো স্পর্শকাতর বিষয়ও তুলে ধরা হচ্ছে এই সিরিয়ালে। বর্তমানে প্রায় ধুঁকতে থাকা ‘গৌরী এলো’তেও কিন্তু নায়ক নায়িকার ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত একাধিক বার ফলাও করে দেখিয়ে রোষের মুখে পড়েছিল নির্মাতারা। এমতাবস্থায় একটি প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই ওঠে, ছোটপর্দা সাবালক হলেও দর্শকরা কি তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত আদৌ?