কথিত আছে ক্রিকেটের সঙ্গে গ্ল্যামারের মিলন হয়েছে খানিকটা তাঁদের হাত ধরেই। বলতে গেলে ‘বলিউড ঠাকুরানি’ ও ‘জেন্টলম্যানস গেম’-এর ‘গোল্ডেন কাপল’ তাঁরাই। তবে শর্মিলা ঠাকুর এবং মনসুর আলি খান পতৌদির দাম্পত্য জীবনেও আছে হাজার টুইস্ট। সম্প্রতি একটি কৌতুহলজনক খবরে বেশ উৎসাহিত হয়েছে অনেকেই। শোনা যাচ্ছে, বঙ্গতনয়ার প্রেমে পড়ার আগে বলিউডের সিনিয়র পতৌদির জীবনে আবির্ভাব হয়েছিল স্বর্ণযুগের আর এক গ্ল্যামার কুইনের। মাত্র ২১ বছর বয়সে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব হাতে পেয়েছিলেন মনসুর পতৌদি। মাঠে নেমে ব্যাট হাতে হাঁকাতেন পর পর ছক্কা। তেমনই মাঠের বাইরেও তাঁকে ঘিরে ছিল উন্মাদনা। তাঁর হাঁটাচলা, কথাবার্তা, হাবেভাবেই ফুটে উঠত নবাবিয়ানার ছাপ। তাই তাঁকে একবার দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতেন তাঁর মহিলা অনুরাগীরা।
তবে শর্মিলা দেবীও কোনও অংশে যেত না। ‘অপুর সংসার’-এর অপর্ণা থেকে তিনি তখন আম জনতার ‘কাশ্মীর কি কলি’। প্রসঙ্গত, বলিউডে প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যে তিনিই প্রথম বিকিনি পরার সাহস দেখিয়েছিলেন। ঐতিহ্যের দিক দিয়ে তাঁর মধ্যে জোড়াসাঁকোর ছোঁয়া থাকলেও রক্ষণশীলতা কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে কোনরকম দ্বিধা ছিল না তাঁর। শর্মিলা ক্রিকেট পাগল হলেও, হিন্দি ছিবি নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল না মনসুরের। এক বন্ধুর মাধ্যমে আলাপ হয়েছিল তাঁদের। প্রথম দেখাতেই মনসুর শর্মিলার প্রেমে পড়লেও শর্মিলার সম্মতি পেতে অনেক মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছিল মনসুরকে। তবে মনসুরের জীবনে
শর্মিলা আসার আগে সিমি গ্রেওয়ালের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। অহরহ দুজনকে একসঙ্গে দেখা যেত। এমনকি মনসুরের খেলা দেখতেও মাঠে যেতেন সিমি। কিন্তু শর্মিলা জীবনে আসার পরই সব পাল্টে যায়। মনসুর বুঝতে পারেন, শর্মিলা ছাড়া তাঁর পক্ষে অন্য কারও সঙ্গে জীবন কাটানো অসম্ভব।
কিন্তু তখন শর্মিলা ও মনসুরের প্রেমে বাঁধ সাধছিল সিমিকে দেওয়া কথা, মনসুর ঠকাতে চাননি সিমিকে। কিন্তু তাই নিজের মনের অবস্থা সিমিকে জানানোর জন্য একদিন সিমির ফ্ল্যাটেও যান মনসুর। জানা যায়, মনসুর আসামাত্রই তাঁর পছন্দের লেমোনেড তৈরি করে আনেন সিমি। প্রাথমিক অস্বস্তি কাটিয়ে সিমির কাছে সব কিছু পরিষ্কার করে জানান তিনি। জানান, তাঁর মন অন্য কাউকে চাইছে। তাই এই সম্পর্ক আর টেনে নিয়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে আর সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই তখন বলিউডের অলিগলিতে শুরু হয়ে গিয়েছিল মনসুর এবং শর্মিলাকে নিয়ে নানান গুঞ্জন। সে কথা অবশ্য সিমির কানেও পৌঁছেছিল। কিন্তু সিমি তখন তাঁর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে বলেন আরও লেমোনেড দেবেন কি না। কিন্তু মনসুর আর অস্বস্তি না বাড়িয়ে চলে যেতে উদ্যত হন। সেই সময় লিফট পর্যন্ত তাঁকে এগিয়ে দিতে এসেছিলেন সিমি। মনসুরের আপত্তি সত্ত্বেও লিফট পর্যন্ত যান সিমি। আর বাইরে বেরিয়েই দেখেন, সেখানে শর্মিলা মনসুরের জন্য অপেক্ষা করছেন।শোনা যায়, লিফট আসা না পর্যন্ত বেশ খানিকক্ষণ একে অপরের দিকে শুধু তাকিয়ে ছিলেন শর্মিলা এবং সিমি। কেউ কারও সঙ্গে একটি কথাও বলেননি।
তারপর শেষমেশ দীর্ঘদিনের প্রেমকে পরিণয়সূত্রে বাঁধেলেন শর্মিলা ও মনসুর। ঠাকুর পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও বিয়ের জন্য ধর্ম পরিবর্তন করতেও দুবার ভাবেননি শর্মিলা। নাম পাল্টে আয়েশা সুলতানা হন। ৩ সন্তান সইফ, সোহা এবং সাবাকে নিয়ে সুখের সংসার গড়ে তোলেন তাঁরা। এর বহু বছর পর নয়ের দশকে ‘রঁদেভু উইথ সিমি গরেওয়াল’-অনুষ্ঠানে শর্মিলা এবং মনসুরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সিমি। সেখানে জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেও, মনসুর এবং সিমি তাঁদের অতীতের কথা একটি বারের জন্যও মুখে আনেননি। পরবর্তী কালে শর্মিলা-মনসুরের ছেলে সইফ এবং তাঁর তৎকালীন স্ত্রী অমৃতা সিংহকেও ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান সিমি। তবে পরবর্তী কালে নিজের ওয়েবসাইটে মনসুরের সঙ্গে সম্পর্কের কিছু কথা লিখেছিলেন সিমি। সেখানে সিমি লেখেন, এক সময় মনসুর ও আমার সম্পর্ক ছিল। তখন ও ভারতীয় দলের অধিনায়ক। খুব সহজ ভাবে মিশতে পারত ও। আমার শুটিংও দেখতে আসত। সতীর্থ হিসেবে শর্মিলাকে চিনতাম। একই জায়গায় ওঠাবসার দরুণ বন্ধুত্বও হয়েছিল।
তবে নিজের অনুষ্ঠানে পতৌদি দম্পতিকে ডাকা নিয়ে সিমির সাফ জবাব, ‘‘অনেক দিন পর পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হল। কত কথা জমে ছিল। তবে মনসুর একটুও পাল্টায়নি। তবে আগের চেয়ে আরও অনেক পরিণত ও। যুক্তি দিয়ে সব কিছু ভাবতে শিখেছে। মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সৎ ও। এখনও শর্মিলার প্রতি সেই ভালবাসাটা ধরে রেখেছে।’’ মনসুরের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর দিল্লির অভিজাত ব্যবসায়ী পরিবারের রবি মোহনের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন সিমি। কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি। কিন্তু জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শর্মিলার সঙ্গেই ছিলেন মনসুর। ক্রিকেটার এবং অভিনেত্রীর সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না, এমন ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দেন তাঁরা। শোনা যায়, তাঁদের বিয়ের মেয়াদ নিয়ে নাকি হাজার হাজার টাকা বাজি রেখেছিলেন বুকিরা। কিন্তু বাধা পেরিয়ে শর্মিলা এবং মনসুর শুধু একে অপরেরই ছিলেন।